বাগানে চোট-কার্ড সমস্যা,ISL ডার্বিতে জয় নেই লাল-হলুদের,তবুও জয়ের আশায় দুই প্রধান
কলকাতা ডার্বি মানেই বাঙালি দ্বিধাবিভক্ত হয়ে পড়ে। এক ভাগের হাতে লাল-হলুদ পতাকা, অন্য দলের হাতে সবুজ-মেরুন। ডার্বি ঘিরে দিন বাংলার উন্মাদনা বরাবরই আকাশছোঁয়া থাকে। ইন্ডিয়ান সুপার লিগেরও সবচেয়ে আকর্ষণীয় ম্যাচ সেই ডার্বিই। ইস্টবেঙ্গল এফসি বনাম এটিকে মোহনবাগানের লড়াইকে ঘিরে এ বার ময়দান জুড়ে গনগনে আঁচ।
এ বার লড়াই সমানে সমানে
গত তিন মরশুম ধরে এটিকে মোহনবাগান কিছুটা একচেটিয়া ভাবেই ইস্টবেঙ্গলের উপর আধিপত্য বিস্তার করে এসেছে। তবে এ বার ইস্টবেঙ্গল পাল্টা ঝাপ্টা মারতে প্রস্তুত। বাগানের একচেটিয়া দাপটে তারা এ বার দাড়ি টানতে চায়।
১৯টি করে ম্যাচ হওয়ার পরে দুই দলই একে অপরের শক্তি-দুর্বলতা জেনে গিয়েছে। সবচেয়ে বড় কথা, এক সপ্তাহ আগেই দু’পক্ষই দুরন্ত জয় পেয়েছে। ইস্টবেঙ্গল এফসি দুর্দান্ত জয় পেয়েছে লিগশিল্ড জয়ী মুম্বই সিটি এফসি-র বিরুদ্ধে। যাদের লাল-হলুদ বাদে একমাত্র বেঙ্গালুরু এফসি হারিয়েছে। মুম্বইকে হারানোর আগের সাতটি ম্যাচের মধ্যে পাঁচটিতেই হেরে গিয়েছিল লাল-হলুদ বাহিনী। সেই জায়গা থেকে ঘুরে দাঁড়িয়ে তারা প্রথমে কেরালা ব্লাস্টার্স এবং পরে মুম্বই সিটি এফসি-কে হারিয়ে ছন্দে ফিরেছে। সেই ছন্দ বজায় রাখতে পারলে, এ বারেও ডার্বিতে সমানে সমানে টক্কর দিতে পারবে তারা। হয়তো গত বারের হারের বদলা নিয়ে টানা পাঁচটি আইএসএল ডার্বিতে এটিকে মোহনবাগানের জয়ের দৌড় থামাতেও পারে তারা।
আরও পড়ুন: ম্যাকহিউ, হ্যামিল নেই, বৌমাস অনিশ্চিত, তবু ডার্বি জয় ছাড়া ভাবছে না ATKMB কোচ
অন্য দিকে, এটিকে মোহনবাগান টানা তিন ম্যাচে জয়হীন থাকার পরে গত ম্যাচে কেরালা ব্লাস্টার্সকে ২-১-এ হারিয়ে ঘুরে দাঁড়ায় এবং প্লে অফে জায়গা পাকা করে ফেলে। শনিবার ডার্বিতে জিততে পারলে তারা তিন নম্বরে থেকে লিগ শেষ করতে পারবে এবং প্রথম নক আউট ম্যাচ ঘরের মাঠে খেলতে পারবে। তাই তাদের কাছে ম্যাচটা শুধু মর্যাদার লড়াই নয়, তার চেয়েও বেশি কিছু। কেরালা ব্লাস্টার্সের বিরুদ্ধে জোড়া গোল করে যিনি নায়ক হয়ে গিয়েছেন, সেই দলের নির্ভরযোগ্য বিদেশি তারকা কার্ল ম্যাকহিউ এই ম্যাচে চোটের জন্য অনিশ্চিত। কার্ড সমস্যার জন্য তাদের অস্ট্রেলীয় ডিফেন্ডার ব্রেন্ডন হ্যামিলকে এই ম্যাচে মাঠের বাইরেই থাকতে হবে। তাঁর জায়গায় খেলতে পারেন সার্বিয়ান স্লাভকো দামিয়ানোভিচ, যিনি ক্লেটন সিলভাকে গোল করতে না দেওয়ার শপথ নিয়েই নামবেন বলে জানিয়ে দিয়েছেন। কিন্তু ম্যাকহিউয়ের অভাব কী করে পূরণ করবেন কোচ জুয়ান ফেরান্দো, সেটাই দেখার।
আক্রমণ বনাম আক্রমণ
ইস্টবেঙ্গলের ব্রাজিলীয় স্ট্রাইকার ক্লেটন সিলভা এক ডজন গোল করে সর্বোচ্চ স্কোরারদের তালিকায় সবার ওপরে থাকলেও এটিকে মোহনবাগানের বিরুদ্ধে গোল করতে না পারলে, তাঁর সাফল্য একশো শতাংশ পূর্ণ হবে বলে মনে হয় না। এমনিতেই ক্লেটন এত গোল করেও দলকে ন’নম্বরের ওপরে তুলতে পারেননি। এর পর চিরপ্রতিদ্বন্দীদের বিরুদ্ধে গোল করতে না পারলে, সেটাও একটা আক্ষেপ থেকে যাবে। যে ফর্মে রয়েছেন তিনি, তাতে তাঁর কাছে গোল আশা করতেই পারেন সমর্থকেরা। জেক জার্ভিসের সঙ্গ পেয়ে আরও ধারালো হয়ে উঠেছেন তিনি। ব্রিটিশ স্ট্রাইকার জার্ভিসও গোল করার জন্য মুখিয়ে থাকেন। তাঁদের সাহায্য করার জন্য নাওরেম মহেশ, ভিপি সুহের, অ্যালেক্স লিমা-রা রয়েছেন।
আরও পড়ুন: ডার্বি সবচেয়ে কঠিন ম্য়াচ- তবু ATKMB-কে হারিয়েই বাকি ব্যর্থতা ভোলাতে চান EBFC কোচ
আক্রমণ নিয়ে খুব একটা চিন্তায় নেই লাল-হলুদ বাহিনীর ব্রিটিশ কোচ স্টিফেন কনস্টান্টাইন। তাঁর যত চিন্তা রক্ষণ ও মাঝমাঠ নিয়ে। ১৯টি ম্যাচে ৩৬টি গোল খেয়েছে তারা। গোল খাওয়ার দিক থেকে নর্থইস্ট ইউনাইটেডের পরেই রয়েছে তাদের নাম। তবে একটা ব্যাপারে তিনি কিছুটা হলেও স্বস্তি পেতে পারেন, এটিকে মোহনবাগানের গোলের সুযোগ নষ্ট এবং তাদের গোলখরা।
এখনও পর্যন্ত ১৯ ম্যাচে ২২টি গোল করেছে সবুজ-মেরুন বাহিনী। এই ব্যাপারে ইস্টবেঙ্গল এফসি এবং তারা একই জায়গায় দাঁড়িয়ে। তাদের চেয়ে শুধুমাত্র জামশেদপুর (২১) এবং নর্থইস্ট ইউনাইটেড (১৭) কম গোল করেছে। গোলের সুযোগ তৈরির দিক থেকে তারা আছে তিন নম্বরে। কিন্তু গোল কনভারশন রেটে অনেক পিছিয়ে। ২০৭টি সুযোগ তৈরি করে মাত্র ২২টি গোল করেছেন বৌমাসরা। দলের সর্বোচ্চ গোলদাতা পেত্রাতোস ৫০টি সুযোগ তৈরি করে গোল করেছেন মাত্র আটটি। বৌমাাস ৪৫টি গোলের সুযোগ তৈরি করে পেয়েছেন মাত্র চারটি গোল। ইস্টবেঙ্গলের কনভারশন রেট কিন্তু এটিকে মোহনবাগানের চেয়ে ভালো। তারা ১২১টি গোলের সুযোগ পেয়ে করেছে ২২টি গোল। বৌমাসদের কনভারশন রেট যেখানে ১০.৬ শতাংশ, সেখানে ক্লেটনদের এই হার ১৮.১৮ শতাংশ।
দ্বৈরথের ইতিহাস
ইন্ডিয়ান সুপার লিগে দুই দল মুখোমুখি হয়েছে মোট পাঁচ বার। পাঁচ বারই জিতেছে এটিকে মোহনবাগান। চলতি মরশুমের প্রথম মুখোমুখিতে এটিকে মোহনবাগানই ২-০-তে জেতে। এই পাঁচ ম্যাচে মোট ১৫টি গোল হয়েছে। যার মধ্যে মাত্র দু’টি করেছে লাল-হলুদ শিবির। বাকি ১৩টি গোল করেছে এটিকে মোহনবাগান। অর্থাৎ, পরিসংখ্য়ানে এগিয়ে রয়েছে বাগানই। তবে সেই ইতিহাস এ বার বদলাতে মরিয়া লাল-হলুদ বাহিনী।
For all the latest Sports News Click Here