‘বাংলা ছবি অসহায় নয়’, ‘লক্ষ্মী ছেলে’র মুক্তির আগে আত্মবিশ্বাসী কৌশিক
প্রশ্ন: অবশেষে ‘লক্ষ্মী ছেলে’ মুক্তি পাচ্ছে। বক্স অফিসের হিসেবনিকেশ ভাবাচ্ছে?
কৌশিক: বক্স অফিস নিয়ে নিশ্চিত ভাবে কখনওই কিছু বলা যায় না। তবে আন্দাজ করা যায়, মানুষ কী চাইতে পারেন, তাঁদের কী ভালো লাগতে পারে। আমার মনে হয়, ‘লক্ষ্মী ছেলে’ দর্শকের ভালোবাসা পাবে। কারণ ছবিটির বিষয় খুব জোরালো, তীব্র। এই গল্পে মানুষ নিজেকে খুঁজে পাবেন।
প্রশ্ন: অন্ধবিশ্বাস, কুসংস্কারের বিরুদ্ধে লড়াইয়ের কথা বলছে আপনার ছবি…
কৌশিক: হ্যাঁ। এগুলো যুগ যুগ ধরে থেকে যাওয়া এক প্রকার নেতিবাচক শক্তি। যাকে কিছুতেই বিনাশ করা যাচ্ছে না। এই বিষয় নিয়ে তো কথা বলতেই হবে। সিনেমা তো সময়ের দলিল। সেই দায়িত্ব কী ভাবে এড়িয়ে যাই!
প্রশ্ন: তবে কি শুধু মাত্র সেই দায়বদ্ধতা থেকেই ছবি করা? বাণিজ্যিক সাফল্য গুরুত্বহীন?
কৌশিক: বিষয়টা কিন্তু একেবারেই তা নয়। বাণিজ্যের কথা ভীষণ ভাবে মাথায় রাখা হয়। ‘আরেকটি প্রেমের গল্প’, ‘জ্যেষ্ঠপুত্র’-র মতো ছবিগুলি সমাজের নানা সমস্যার কথা তুলে ধরেছে। আবার বক্স অফিসেও ভালো ব্যবসা করেছে। আমাদের সেই ভারসাম্যটা খুঁজে নিতে হবে।
প্রশ্ন: ছবির প্রচারের জন্য পথনাটক, ছৌ নাচ— টলিউডে সচরাচর এমনটা দেখা যায় না…
কৌশিক: আমাদের মনে হয়েছে, এই ছবির কথা বলতে মানুষের একদম কাছে পৌঁছে যেতে হবে। উপর-উপর প্রচার করে তা সম্ভব নয়। ‘লক্ষ্মী ছেলে’ যে শুধুই কুসংস্কারের বিরুদ্ধে লড়াইয়ের কথা বলে না, সেই বার্তাই পৌঁছে দিতে চেয়েছি আমরা। একটা মর্মান্তিক সত্য দ্বারা অনুপ্রাণিত এই ছবির গল্প। সে কথা জানানোর জন্য একেবারে গ্রাসরুট লেভেল পর্যন্ত যেতে হয়েছে। আর তার জন্য পথনাটকেরই প্রয়োজন ছিল।
প্রশ্ন: করোনার জন্য ছবির মুক্তি পিছিয়ে যাচ্ছিল, পরিচালক হিসেবে নিরাপত্তাহীনতায় ভুগেছেন?
কৌশিক: একেবারেই না। তখন জীবন-মরণ নিয়ে নিরাপত্তাহীনতায় ভুগেছি। একটা সময় মনে হয়েছিল, আর কখনও হয়তো ছবিই বানাতে পারব না। চারদিকে স্বজনবিয়োগ, অসুস্থতা! এ সবের মাঝে অন্য কিছু নিয়ে ভাবতে পারিনি। তবে জানতাম, সব ঠিক হলে এক এক করে ছবিগুলি মুক্তি পাবে। তার পর ‘অপরাজিত’, ‘বেলাশুরু’ যখন সফল হল, অসম্ভব ভালো লেগেছিল।
প্রশ্ন: সেই সাফল্যের পরেও তো ‘বাংলা ছবির পাশে দাঁড়ান’ শ্লোগান উঠছে…
কৌশিক: আমার মনে হয়, বাংলা ছবির বিষয় যদি ভালো হয় তবে তার পাশে কারও দাঁড়ানোর দরকার নেই। দর্শক নিজেই সেই ছবি দেখতে আসবেন। অত অসহায় বাংলা ছবি নয়। ভালো ছবিকে মানুষ ভালোবাসা দিচ্ছে। বাজে কন্টেন্ট বানিয়ে পাশে দাঁড়ানোর অনুরোধ করার তো কোনও মানে হয় না! মানুষ কী দেখবেন বা দেখবেন না, সেটা পুরোপুরি তাঁদের বিষয়। আমরা বাংলা ছবি রিলিজ করে তাঁদের বিনোদন দেওয়ার চেষ্টা করব। কিন্তু সমাজসেবার জন্য কেউ ছবি দেখবেন না। আমরা দর্শকের প্রশংসা আদায় করে নিতে চাই।
প্রশ্ন: অভিনেতা হিসেবে ছেলেকে (উজান গঙ্গোপাধ্যায়) কত নম্বর দেবেন?
কৌশিক: আমি নম্বর দেওয়ায় একেবারেই বিশ্বাসী নই। উজান, রিতিকা (পাল), পূরব (শীল আচার্য)— তিন জনেই খুব মেধাবী এবং পরিশ্রমী। তাই ওরা ছবিতে আমির, শিবনাথ আর গায়ত্রী হয়ে উঠতে পেরেছে।
প্রশ্ন: ছেলের সঙ্গে কাজ করলেন। স্বজনপোষণ নিয়ে কটাক্ষ শুনতে হয়েছে?
কৌশিক: আমি তো এই ছবিতে উজানকে নিইনি। প্রযোজকরা ওকে ওই চরিত্রে দেখতে চেয়েছিলেন। কিন্তু প্রশ্ন হল, অন্য কোনও পেশার ক্ষেত্রে কেন স্বজনপোষণের প্রসঙ্গ আসে না? শৈশব থেকে বাড়িতে কোনও কিছুর চল দেখলে, তার প্রতি ভালোবাসা জন্মানোই তো স্বাভাবিক! যাবজ্জীবন কারাদণ্ড হয় ১৪ বছর। আমার সঙ্গে কাজ করতে উজান ২১ বছর অপেক্ষা করেছে। স্বজনপোষণ করলে অনেক আগেই ও সেই সুযোগ পেত। কৌশিকী দেশিকানের ছেলে গান গাইছে, কৌশিক সেনের ছেলে ঋদ্ধি সেন নাটক করছে। এটা স্বজনপোষণ নয়, চর্চা।
প্রশ্ন: এ তো গেল স্বজনপোষণের কথা, কিন্তু ছবি বয়কট করার ধুম নিয়ে কী বলবেন?
কৌশিক: (একটু হেসে) নেটমাধ্যমে বাংলা-ইংরেজি মিলিয়ে অন্তত ১৮ রকমের বয়কট বানান দেখেছি। সেটা আগে ঠিক করে শেখা উচিত। আর এ নিয়ে কথা বলা মানেই বিষয়টিকে গুরুত্ব দেওয়া। এটুকু বলতে পারি, দর্শক হ্যাশট্যাগ দেখে আমার ছবি দেখতে যান না।
প্রশ্ন: হাতে গোনা যে সব পরিচালকের নামে ছবি চলে, তাঁদের মধ্যে আপনিও একজন…
কৌশিক: এ কথা ঠিক যে কয়েকজন পরিচালক ছবি তৈরি করলে, দর্শক তা দেখতে প্রেক্ষাগৃহে আসেন। কারণ সেই পরিচালকদের প্রতি তাঁদের একটা আস্থা তৈরি হয়েছে। আমি মনে করি, এতে আমাদের সকলেরই অবদান আছে। তবে আমার অবদান কতটা, সে কথা দর্শকই বলবেন।
For all the latest entertainment News Click Here