বাংলাদেশে থেকে চলে আসা, স্মৃতি বুকে নিয়ে পথ চলা শুরু করল ‘ইন্দুবালা ভাতের হোটেল’
‘আমার কলাপোতার বাড়িতে এলে কখনও না খেয়ে কেউ ফেরত যেত না। কখনও কারোর ভাতের অভাব হয়নি।’ বাড়ির উঠানে দাঁড়িয়ে পরিচারিকাকে একথাগুলি বলছিলেন ‘ইন্দুবালা’ শুভশ্রী। ট্রেলারের দৃশ্যে মিলে মিশে গেল বাংলাদেশে কাটানো ইন্দুবালার ছোটবেলা, আর বিয়ের পর তাঁর কলকাতার বাড়ি। আর তারপরই দেখা গেল উত্তর কলকাতার ইন্দুবালার পুরনো বাড়ির সামনে টাঙানো ‘ইন্দুবালা ভাতের হোটেল’-এর হোর্ডিং, ঠিকানায় লেখা ১৪ /২ ছেনু মিত্র লেন কলকাতা ৭০০০০৯। বৃদ্ধ বয়সে রান্নার প্রতি ভালোবাসা থেকেই কলকাতায় ভাতের হোটেল খুলেছেন ইন্দুবালা। ভাঙা রান্নাঘরের ছবি তুলে কী হবে? প্রশ্ন করতেই ঠাকুমাকে ইন্দুবালার নাতনি জানেন, ‘সোশ্যাল মিডিয়ায় ‘ইন্দুবালা ভাতের হোটেল’-গ্রুপের কত মেম্বার তুমি জানো?’ ২০ ফেব্রুয়ারি ভাষাদিবসের ঠিক আগে মুক্তি পাওয়া ‘ইন্দুবালা ভাতের হোটেল’-এর ট্রেলারে এভাবেই উঠে এল ইন্দুবালা ও তাঁর ভাতের হোটের গল্প।
ট্রেলারের পরবর্তী অংশে দেখা গেল ইন্দুূবালার বর্তমান পরিবার, তাঁর ছেলেমেয়ে নাতি নাতনি, তাঁদের সঙ্গে কথা বলতে গিয়ে পুরনো স্মৃতিতে ফিরে গেলেন ইন্দুবালা। দৃশ্যে ফুটে উঠল ইন্দুবালার ছোটবেলা, দেখা গেল তরুণী ইন্দুবালাকে। উঠে এল তাঁর বিয়ের স্বামীর হাত ধরে কলকাতায় আসা, এখানকার মতো করে বাংলা বলতে শেখা। বাংলাদেশ থেকে আসা তাঁর আত্মীয় ইন্দুবালাকে বলেন, কলাপোতার মেয়ে ইন্দুবালা, এখন কলকাতার ভাষা কেমন করে শিখে গেল, এখন কি ইছা মাছকে চিংড়ি বলিস নাকি? দেখা গেল কলকাতায় এসে বংলাদেশের মতো করে বাংলা বললে তাঁকে শাশুড়ির কাছে শুনতে হয় ‘এই রিফিউজি ভাষা বন্ধ করো তো।’ কলকাতায় এলেও বাংলাদেশকেই তাঁর নিজের দেশ বলে বিশ্বাস করে এসেছেন। ‘দেশে ফেরা আর হবে না’ বলে পাসপোর্ট পুড়িয়ে দিতে দেখা গিয়েছে ইন্দুবালাকে। ১৯৭০-এর নকশাল আন্দোলনের সঙ্গে ইন্দুবালার জড়িয়ে যাওয়া। এভাবেই অতীত ও বর্তমানে মিলে মিশে গিয়েছে ইন্দুবালার জীবনের গল্প, তাঁর ভাতের হোটেলের গল্প।
এর আগে ‘ইন্দুবালা ভাতের হোটেল’ নিয়ে কথা বলতে গিয়ে পরিচালক দেবালয় ভট্টাচার্য বলেছিলেন, ‘৭৫ বছর বয়সে এসে ইন্দুবালা ভাতের হোটেল চালান, মা, ঠাকুমা ও শাশুড়ির কাছ থেকে শেখা কিছু ট্রাডিশনাল রান্নাই তিনি করেন। আসলে এই রান্নার মধ্যে দিয়েই ইন্দুবালা তাঁর স্মৃতিকে বাঁচিয়ে রাখেন। এটা তাঁর বিস্মৃতির সঙ্গে লড়াই। ৬-এর দশকে ইন্দুবালা বিয়ে করে এসেশে আসেন, তারপর আর তাঁর বাংলাদেশে ফিরে যাওয়া হয়নি। এরপর অসুখী দাম্পত্য, বাচ্চাদের নিয়ে স্ট্রাগল, ছোটবেলার প্রেম, আগের জীবন সবই তাঁর রান্নায় ধরা পড়ে। আসলে এখানে টেস্ট ইন মেমরি। বর্তমানে ইন্দুবালা একজন সফল মহিলা। তারপরেও তিনি সকলের থেকে নিজেকে দূরে সরিয়ে রাখেন।
কল্লোল লাহিড়ির উপন্যাস ‘ইন্দুবালা ভাতের হোটেল’ অবলম্বনেই এই ওয়েব সিরিজ বানিয়েছেন পরিচালক দেবালয়। এখানে শুভশ্রীকে ইন্দুবালা বানিয়েছেন মেকআপশিল্পী সোমনাথ কুণ্ডু। অল্পবয়সী ইন্দুবালার চরিত্রে অভিনয় করেছেন পারিজাত চৌধুরী, শুভশ্রী, পারিজাত ছাড়াও অভিনয় করেছেন রাহুল অরুণোদয় বন্দ্যোপাধ্যায়, প্রতীক দত্ত, স্নেহা চট্টোপাধ্যায়, মিঠু চক্রবর্তী, সুহোত্র মুখোপাধ্যায়।৮ মার্চ আন্তর্জাতিক নারী দিবসে ‘ইন্দুবালা ভাতের হোটেল’-সকলের জন্য খুলে যাবে।
For all the latest entertainment News Click Here