ফেলে আসা ভালো সময়ের রূপকার, তরুণ মজুমদারকে এভাবেই মনে রাখবে বাঙালি
পড়াশোনা করেছিলেন রসায়ন নিয়ে। কিন্তু মৌল-যৌগের রসায়নে তাঁর মন বসেনি। বসেছিল মানব মনের রসায়নে। তাই গল্প বলাকেই পেশা এবং নেশা হিসাবে নেবেন বলে ঠিক করেছিলেন যৌবনকালেই। বাড়ি থেকে সবটা খোলা মনে মেনে নেওয়া হয়নি। তবুও নিজের সিদ্ধান্ত থেকে সরে যাননি তিনি।
তিনি তরুণ মজুমদার। ১৯৩১ সালের ৮ জানুয়ারি বাংলাদেশের বগুড়ায় জন্ম। পড়াশোনা করেছেন সেন্ট পলস ক্যাথিড্রাল মিশন কলেজ এবং স্কটিশ চার্চ কলেজে। বাবা বীরেন্দ্রনাথ মজুমদার ছিলেন স্বাধীনতা সংগ্রামী। ছোটবেলার অনেকটাই কেটেছে গ্রামে। সেখানে গ্রামের পাঠশালা, স্কুল, গ্রামের বন্ধুবান্ধব, পাড়াপ্রতিবেশীদের সান্নিধ্য থেকেই সহজ সরল মানুষের গল্প বুঝেছিলেন তিনি। পরে সেটাই হয়ে দাঁড়ায় আর গল্প বলার কৌশল।
১৯৫৯ সালে তরুণ মজুমদার আসেন বাংলা সিনেমার জগতে। প্রায় ৬০ বছর ছবি করে গিয়েছেন তিনি। কেমন ধরনের গল্পের প্রতি আগ্রহ ছিল তাঁর? নিজেই বলেছিলেন, তাঁর আগ্রহ আধুনিকতায়। কিন্তু সে আধুনিকতার সংজ্ঞা আলাদা, তার চেহারা আলাদা। তাঁর কাছে আধুনিকতা ছিল এক ইউনিভার্সাল ফর্ম। সেটি ধরেই মানুষের জীবনের একাল-সেকালে ঘুরে বেরিয়েছেন তিনি।
এক সময়ে ‘যাত্রিক’ নামে এক নির্মাতা গোষ্ঠী শুরু করেছিলেন তিনি। সঙ্গে ছিলেন সচিন মুখোপাধ্যায় এবং দিলীপ মুখোপাধ্যায়। উত্তম কুমার আর সুচিত্রা সেনকে নিয়ে ‘চাওয়া পাওয়া’ ছবিটি তৈরি করেন তাঁরা। তারপরে আর বিশেষ থেমে থাকেননি তরুণবাবু।
পর পর তৈরি করে গিয়েছেন ‘পলাতক’, ‘বালিকা বধূ’, ‘নিমন্ত্রণ’ ‘কুহেলি’, ‘শ্রীমান পৃথ্বীরাজ’, ‘ঠগিনী’, ‘ফুলেশ্বরী’, ‘যদি জানতেম’, ‘দাদার কীর্তি’র মতো ছবি। কয়েক বছর আগেও বাংলা ছবির দর্শকদের উপহার দিয়েছেন ‘আলো’, ‘ভালোবাসার অনেক নাম’, ‘চাঁদের বাড়ি’, ‘ভালোবাসার বাড়ি’র মতো সিনেমা। শেষ ছবি ২০১৮ সালে। ছবির নাম ‘অধিকার’।
বাংলা সিনেমায় শুধু একের পর এক মাইলস্টোন ছবিই উপহার দেননি তিনি, তার পাশাপাশি এমন বহু শিল্পীর কাজও শুরু হয়েছে তরুণ মজুমদারের হাত ধরে, যাঁরা পরবর্তীকালে বাংলা ছবিকে বিপুল পরিমাণে সমৃদ্ধ করেছেন। মৌসুমী চট্টোপাধ্যায়, মহুয়া রায়চৌধুরী, তাপস পাল, দেবশ্রী রায়ের মতো শিল্পীদের হাতেখড়ি থেকে বিনোদন জগতে বড় হয়ে ওঠার পিছনে ভূমিকা থেকে গিয়েছে তরুণ মজুমদারের।
তাঁর ছবি মানেই এমন এক সময়ের কথা, যা বাঙালির ভালো সময়, বাঙালির গৌরবের সময়, বাঙালির সহজ-সরল সময়ের কথা বলে যায়। তাঁর ছবি হাত ধরে নিয়ে গিয়ে দাঁড় করায় এমন এক সময়ের সামনে যে সময়ের কথা ভাবলেই মনে হয়, দিনগুলো বড় সহজে রঙিন হত তখন। এমনই ফেলে আসা ভালো সময়ের রূপকার হিসাবে তরুণ মজুমদারকে মনে রাখবে বাঙালি।
For all the latest entertainment News Click Here