ফুটবলাররা মানসিক চাপে থাকছে, তাই গোলের সুযোগ নষ্ট হচ্ছে- অদ্ভুত যুক্তি ফেরান্দোর
হায়দরাবাদ এফসি-র ঘরের মাঠে তাদের জিততে না দিলেও, গোলের সুযোগ নষ্টে একেবারেই সন্তুষ্ট নন এটিকে মোহনবাগানের কোচ জুয়ান ফেরান্দো। দলের চোট-আঘাত সমস্যা নিয়েও তিনি চিন্তিত। সোমবারই ফিরতি সেমিফাইনালে ঘরের মাঠে নামতে হবে তাদের। তার প্রস্তুতির জন্য তাদের হাতে রয়েছে মাত্র দু’দিন। এই দু’দিনে দলকে আরও একটা কঠিন পরীক্ষার জন্য কতটা প্রস্তুত করতে পারবেন তিনি, তা নিয়েও চিন্তায় রয়েছেন স্প্যানিশ কোচ।
বৃহস্পতিবার জিএমসি বালাযোগী স্টেডিয়ামে কোনও গোল করতে না পারলেও ম্যাচের সবচেয়ে সহজ দু’টি গোলের সুযোগ পেয়েছিল এটিকে মোহনবাগান। প্রীতম কোটাল এবং মনবীর সিং এই দু’টি গোল করতে পারলে, এ দিন জিতেই হাসি মুখে মাঠ ছাড়তে পারত ফেরান্দো ব্রিগেড।
গোলশূন্য ড্রয়ের পর বৃহস্পতিবার রাতে ফেরান্দো সাংবাদিকদের বলেন, ‘এই ফলে আমরা হতাশ। কারণ, ম্যাচটা জিততেই এসেছিলাম এখানে। তবে বেশ কঠিন ছিল কাজটা। হায়দরাবাদ ভালো দল। ওদের ভালো ভালো খেলোয়াড় আছে। সেই জন্যই ওরা লিগে দুই নম্বরে ছিল। সেই জন্যই ওরা গত বারের চ্যাম্পিয়ন। এখন আমাদের পরের ম্যাচের প্রস্তুতি নিতে হবে। হাতে দু’দিনের বেশি সময় নেই। হায়দরাবাদ খুবই ভালো দল, এ কথা মাথায় রেখে আমাদের পরের ম্যাচের জন্য তৈরি হতে হবে। ওদের বিরুদ্ধে সুযোগ তৈরি করা, জায়গা তৈরি করা খুবই কঠিন। ওরা আসলে তিন বছর ধরে একই পরিকল্পনা নিয়ে খেলে আসছে। এটাই স্বাভাবিক।’
আরও পড়ুন: হায়দরাবাদে বাগানের ত্রাতা বিশাল,যুবভারতীতে অ্যাডভান্টেজে মেরিনার্স
দুই দলের পারফরম্যান্স নিয়ে ফেরান্দো বলেন, ‘প্রথমার্ধে হায়দরাবাদ দুটো ভালো সুযোগ পেয়েছিল। সেখানে আমরা একটা সুযোগ পেয়েছিলাম। দ্বিতীয়ার্ধে ওরা একটা ভালো সুযোগ পায়, আমরা দু’-তিনটে সুযোগ পেয়েছিলাম। দুই দলই প্রায় একই রকম ভালো খেলেছে। আমরা হতাশ। দু’-তিনটে ভাল সুযোগ পেয়েও তা কাজে লাগাতে পারলাম না।’
ঘরের মাঠে দ্বিতীয় লেগেও একই পরিকল্পনা নিয়ে মাঠে নামবেন বলে স্পষ্ট জানিয়ে দিয়েছেন সবুজ-মেরুন কোচ। বলেন, ‘দ্বিতীয় লেগেও একই পরিকল্পনা থাকবে। আমরা পরিকল্পনা বদলাই না। আমরা সব সময়েই আক্রমণে ওঠার চেষ্টা করি, পায়ে বল রাখার চেষ্টা করি, জায়গা তৈরি করা ও তা কাজে লাগানোর চেষ্টা করি। প্রতিপক্ষ আজ আমাদের চেয়ে বল দখলে এগিয়ে ছিল। রক্ষণে আরও উন্নতি করতে হবে আমাদের। কিছু খুঁটিনাটি ব্যাপারে পরিবর্তন দরকার ঠিকই। তবে মানসিকতা একই থাকবে।’
তবে দলের খেলোয়াড়দের ক্লান্তি তাঁকে যে বেশ চিন্তায় রেখেছে, তা তাঁর কথাতেই স্পষ্ট। তাই সমর্থকদের দিকে অনেকটাই তাকিয়ে আছেন কোচ। বলেছেন, ‘সাত দিনে তিনটে ম্যাচ খেলতে হচ্ছে আমাদের। এখন খেলোয়াড়দের ফের চাঙ্গা করে তোলাই আমার সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ কাজ। ঘরের মাঠে নিজেদের সমর্থকদের সামনে আশা করি, উজ্জীবিত ফুটবল খেলবে ছেলেরা। কঠিন সময়ে সমর্থকেরাই কাজে আসেন। তবে নিজেদের কৌশলে মন দিতেই হবে আমাদের।’
আরও পড়ুন: কেরলে Super Cup-এ ৯, ১০ এপ্রিল নামছে EB-ATKMB, বাগানের তুলনায় কঠিন চ্যালেঞ্জ লাল-হলুদের
এমনিতেই আশিক কুরুনিয়ানের চোট। এ দিন হুগো বৌমাসও পুরো ম্যাচ খেলতে পারেননি। তাঁদের নিয়ে ফেরান্দো বলেন, ‘বৌমাস, আশিকদের তিন দিনের মধ্যে ফের সুস্থ ও তরতাজা করে তোলা মোটেই সোজা কাজ নয়। ওরা খুবই চেষ্টা করবে জানি। মাঝখানে শনি ও রবিবার আছে। দেখা যাক কী হয়। সবাইকে উজ্জীবিত করে তোলার চেষ্টা করব। সেরা দলই মাঠে নামানোর চেষ্টা করব। যাদের চোট লেগেছে, তাদের এই সময়ে না খেলানোই ভালো।’
সোমবার ঘরের মাঠে সেমিফাইনালের লড়াইকেই আপাতত ফাইনাল হিসেবে নিচ্ছেন এটিকে ফেরান্দো। বলেও দেন, ‘পরের ম্যাচটা আমাদের কাছে ফাইনালের মতো। ম্যাচ গোলশূন্য থাকলে তা অতিরিক্ত সময়ে গড়াবে। তাই আমাদের আক্রমণাত্মক ফুটবল খেলতে হবে এবং জিততে হবে। দু’পক্ষই ফাইনালে উঠতে মরিয়া। আমাদের আক্রমণাত্মক ফুটবলই খেলতে হবে।’
তবে অসংখ্য গোলের সুযোগ হাতছাড়া হওয়ার ধারাবাহিক সমস্যা নিয়ে তিনি মনে করেন, ‘এই মরশুমে গোলের সুযোগ হাতছাড়া করার সমস্যা শুরু থেকেই হয়েছে। আত্মবিশ্বাসের অভাব হচ্ছে। ফুটবলে মানসিক ব্যাপারটা খুবই গুরুত্বপূর্ণ। আমাদের আত্মবিশ্বাসের অভাব হচ্ছে বলে, দলের ছেলেরাও মানসিক চাপে থাকছে সব সময়ে। ফলে আরও সুযোগ হাতছাড়া করছে ওরা। তবে ফুটবলে এমন হয়েই থাকে। হয়তো দেখা যাবে পরের মরশুমে এই খেলোয়াড়রাই দু’টি সুযোগ পেলে দুটোতেই গোল করবে। এটাই ফুটবল।’
For all the latest Sports News Click Here