প্রয়াত সুরকার সলিল চৌধুরীর প্রথম পক্ষের স্ত্রী অঙ্কনশিল্পী জ্যোতি চৌধুরী
প্রয়াত অঙ্কনশিল্পী জ্যোতি চৌধুরী। বয়স হয়েছিল ৯১ বছর। সুরকার সলিল চৌধুরীর প্রথম স্ত্রী তিনি। রবিবার মুম্বইয়ে বান্দ্রার বাড়িতে শেষ নিশ্বাস ত্যাগ করেন।
জীবনের নানা ওঠা-পড়ার সাক্ষী ছিলেন জ্যোতি দেবী। সব বাধা পেরিয়ে মাথা উঁচু করে বেঁচেছিলেন। রেখে গেলেন তিন মেয়ে অলকা, তুলিকা, লিপিকা এবং নাতিনাতনিদের। স্বামী সলিল চৌধুরীর সঙ্গে একটা সময় পর ঘর ভাঙলেও সন্তানদের আগলে বেঁচে ছিলেন তিনি। জীবন বেঁচেছেন নিজের শর্তে।
কলকাতা ভবানীপুরে নামী পরিবারের মেয়ে ছিলেন জ্যোতি চৌধুরী। একসময় বাড়ির অমতে বিয়ের করেন উদীয়মান সুরকার সলিল চৌধুরীকে। ভালোবাসার মানুষটির জন্য পরিবারের সঙ্গে সম্পর্ক ছিন্ন করতে সংকোচ বোধ করেননি। এরপর স্বামীর জীবনে দ্বিতীয় নারীর আগমণে তাঁকেও ছেড়ে চলে আসেন। একা হাতে মানুষ করেছেন তিন মেয়েকে। আরও পড়ুন: ১০০০ কোটির উপর সম্পত্তি চিরঞ্জীবীর, ৬ দক্ষিণী অভিনেতার সম্পত্তির হিসেব চমকে দেবে
অসমে আদি বাড়ি ছিল সলিল চৌধুরীর। সেখান থেকে দক্ষিণ ২৪ পরগণা জেলার সোনারপুরে মামাবাড়িতে থেকে পড়াশোনা করতেন তিনি। সেখানেই ছিল জ্যোতি দেবীর পিসির বাড়ি। জ্যোতির পিসতুতো দাদাদের সঙ্গে সখ্যতা ছিল সলিলের। সেই সূত্রেই দুজনের আলাপ থেকে প্রেম এবং পরিণয়। তাঁদের সম্পর্কের পথ চলটা শুরু থেকেই অমসৃণ।
শূন্য থেকে নিজের কেরিয়ার শুরু করেছিলেন সলিল। তাঁকে জামাই হিসেবে মেনে নেয়নি জ্যোতির পরিবার। সেসবের পরোয়া না করে সলিল চৌধুরীকে বিয়ে করেন জ্যোতি। এরপরই দুজনে পাড়ি দেন বম্বে (মুম্বই)। সেখানে সুরকার হিসেবে একটু একটু থেকে নিজেকে প্রতিষ্ঠা করেন সলিল। যুবক বয়সে তাঁর কাজের অনুপ্রেরণা ছিলেন জ্যোতি দেবী। প্রতিটা ক্ষণে ছায়ার মতো স্বামীর পাশে থাকতেন তিনি।
শুরুর দিকে অনটন থাকায় সংসারের হাল ধরেন জ্যোতি। অঙ্কনশিল্পী হিসেবে বহু প্রদর্শনীতে অংশ নিয়েছিলেন। শয্যাশায়ী হয়েও হাতে পেন্সিল ধরে ভাবনাকে অবলীলায় ফুটিয়ে তুলতেন ক্যানভাসে। উপার্জনের অর্থ দিয়ে ভালোবাসার নীড় গড়েছিলেন। নাম রেখেছিলেন ‘সুরছায়া’। স্বামী-সন্তানদের নিয়ে সংসার পেতেছিলেন সেখানে। তবে সেই সংসার দীর্ঘস্থায়ী হয়নি। সবিতার সঙ্গে পরবর্তীকালে সম্পর্কে জড়ান সলিল। এরপরই সন্তানদের নিয়ে স্বামীর সংসার ছেড়ে সরে আসেন অঙ্কনশিল্পী।
তিন মেয়েকে নিয়ে বাংলো ছেড়ে বান্দ্রার ফ্ল্যাটে থাকতেন জ্যোতি। একসময় সলিলের মা-ও তাঁর কাছে এসে থেকেছেন। শাশুড়ির দেখভাল করতেন তিনি। সলিলের সঙ্গে সংসার ভাঙলেন স্বামীকে নিয়ে প্রকাশ্যে কোনও তিক্ত মন্তব্য করেননি এই অঙ্কনশিল্পী। সলিল চৌধুরীর প্রয়াণের ২৭ বছর পর চলে গেলেন তাঁর প্রথম স্ত্রী জ্যোতিও। পরিবারের কাছে রেখে গেলেন অজস্র স্মৃতি।
For all the latest entertainment News Click Here