প্রথম ৫ বছর লড়তে হয়েছে- সঙ্গীত জগতে ২৫ বছর পার, স্মৃতিচারণে কী জানালেন মনোময়
মনোময় ভট্টাচার্য মানেই নজরুলগীতি থেকে রবীন্দ্র সঙ্গীত। বাদ যায় না আধুনিক গান কিংবা ভক্তিগীতি। এমন গায়কের সঙ্গীত জীবন দেখতে দেখতে ২৫ বসন্ত পার করে ফেললেন। ইদানিংকালে তাঁকে রিয়ালিটি শোতেও দেখা যায় বিচারকের আসনে। এবার গানে জগতে ২৫ বছর পূর্তি হিসেবে সামনেই রবীন্দ্র সদনে তাঁর একক অনুষ্ঠান আছে তাঁর। আর সেই অনুষ্ঠানের আগেই নিজের কেরিয়ার থেকে গানের জগতে বর্তমান সময়ে সফল হওয়ার মন্ত্র থেকে সব কিছুই তিনি আলোচনা করলেন আনন্দবাজারকে দেওয়া একটি সাক্ষাৎকারে।
মনোময় ভট্টাচার্য এমন একজন মানুষ যিনি তাঁর কেরিয়ারে ক্যাসেটের যাওয়া থেকে সিডির আগমন এবং আচমকাই তার মৃত্যুর পর ইউটিউব, স্পটিফাইয়ের উঠে আসার সাক্ষী থেকেছেন। সঙ্গীত জীবনের এই ২৫ বছর কেমন কাটল তাঁর?
উত্তরে গায়ক বলেন, ‘আমার এই সফর যে খুব মসৃন ছিল এমনটা নয়, ভালো মন্দ দুই এসেছে। আমার প্রথম অ্যালবাম বেরোনোর পরেই যে আমি সুপারহিট হয়ে গিয়েছিলাম বা অনেক প্রচার পেয়েছি তেমন কিছুই হয়নি। আমার প্রথম অ্যালবাম প্রকাশ পায় ১৯৯৬ সালে। তারপর থেকে টানা ৫ বছর আমায় অনেক লড়াই করতে হয়েছিল। শ্রোতাদের কাছে আমার অ্যালবাম পৌঁছত না, এদিকে প্রতিবছর অ্যালবাম প্রকাশ পেত।
এমনটা কেন হয়েছিল? এই বিষয়ে গায়ক স্পষ্টত জানান, ‘সেই সময় আমায় কোনও গুরুত্ব দেওয়া হয়নি। সেই ক্যাসেট কোম্পানিগুলোর তরফে যে বা যতটা প্রচার চেয়েছিলাম সেটা পাইনি। আমার বদলে অন্য শিল্পীদের গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে। আর এসবের কারণেই আমি শ্রোতাদের কাছে সেই অর্থে পৌঁছাতে পারিনি। আমার সমসাময়িক শিল্পীদের নিয়ে সেই সময় প্রচার চালানো হয়। তাঁদের মিউজিক ভিডিয়ো প্রকাশ করা হয়। আর আমায় বলা হতো বাজেট নেই। আসলে এই সঙ্গীত জগতে আমার কোনও গড ফাদার ছিল না। তাতে অবশ্য একটা লাভের লাভ হয়েছিল। ২০০০ পর্যন্ত লড়াই করলেও এই সময় আমক রাজ্য সঙ্গীত আকাদেমির তিনটি বিষয়ে খেতাব জয় করি। এরপর ডোভার লেন মিউজিক কম্পিটিশনে সেরা লাইভ কণ্ঠশিল্পীর পুরস্কার পাই।’
তাহলে কখন প্রচারের আলোয় আসেন তিনি? এই বিষয়ে মনোময় জানান, ‘২০০২ সালে অন্য রকম গানের অ্যালবাম বেরোল যখন তখন একটি এফ এম চ্যানেলে সেই গান বাজাতে থাকে। সেখান থেকেই আমার কেরিয়ারের দিক ঘুরে গেল।’
৯০ দশকের শেষ দিকে মানে বাজারে তখন নচিকেতা, কবীর সুমন, অঞ্জন দত্তের রমরমা। সেই কারণেই কি এই সমস্যায় পড়েন তিনি? এই উত্তরে গায়ক বলেন, ‘হতে পারে। কিন্তু আদতে তখন তাঁরা সবাই তারকা। আমি নিজে নচিদার বিশাল বড় ভক্ত। লাইনে দাঁড়িয়ে ওঁর ক্যাসেট কিনেছি। কিন্তু খারাপ লাগত যখন দেখতাম আমার গানগুলোকে গুরত্ব দেওয়া হচ্ছে না। কারা সেই সময় প্রচার পেয়েছেন এটা আলাদা করে বলতে চাই না। যখন ১৯৯৬ থেকে ২০০০ দিকে তাকালেই বোঝা যাবে যে ওই সময় কারা প্রচারের আলোয় উঠে এসেছিলেন। কিন্তু মজার বিষয় হল যাঁরা একসময় আমায় প্রত্যাখ্যান করেছিলেন তাঁরা ওই আলব্যাম হিট করার পর আবার ফিরে আসে।’
গানের জগতে অনেক বদলের সাক্ষী থেকেছেন মনোময়। এই ক্যাসেট থেকে ইউটিউবের যুগে নিজেকে কীভাবে মানিয়েছেন তিনি? উত্তরে মনোময় বলেন, ‘মানাতে পারিনি। এই গানের সঙ্গে ভিডিয়ো আসায় গানের ক্ষতি হয়েছে। গানটা শোনার জিনিস দেখার নয়। স্বর্ণ যুগের গান মানুষ রেডিওতে শুনত। আমি তাই ঠিক করেছিলাম কোনও বিজ্ঞাপনের গান গাইব না বা ভালো কম্পোজিশন ছাড়া গাইব না।’
এই ২৫ বছরে গানের জগতে কী কী বদল দেখেছেন মনোময়? উত্তরে বলেন, ‘গান এখন বিনামূল্যে পাওয়া যায়। আগে শিল্পীকে খুঁজে নিতেন দর্শকরা। এখন উল্টোটা হয়। নিম্নরুচির গান বেশি প্রচার পায় এখন।’
নিজে রিয়েলিটি শোয়ের বিচারক আসনে থেকেছেন, এই বিষয়ে তাঁর কী মত? উঠতি গায়ক গায়কদের জন্য এটাই কি একমাত্র মঞ্চ? খুব একটা সহমত পোষণ না করেই তিনি বলেন, ‘ক্ষণিকের খ্যাতি পাওয়ার জায়গা এটা। অনেকেই রিয়েলিটি শোর অর্থ রোজগারের পিছনে ছুটে বেড়ায়। এতে গান নড়বড়ে হয়ে যাচ্ছে। অন্যদিকে এই শোতে ঢিমে তালের গান চলে না। তাই অনুষ্ঠান সফল করতে হলে কনটেন্টের প্রয়োজন। গানও যেন সিরিয়ালের মতো হয়ে যাচ্ছে।’
For all the latest entertainment News Click Here