প্রথম ‘চুমু’, তবুও কি লাভের লাভ কিছু হল! কেমন হল কাজল-যিশুর ‘দ্য ট্রায়াল’?

OTT-র দৌলতে এখন গোটা বিশ্বের বিভিন্ন ভাষার ওয়েব সিরিজ, সিনেমা এখন হাতের মুঠোয়। বহু মানুষই এখন OTT-র দৌলতে বিভিন্ন দেশি-বিদেশি ভাষার নানান ওয়েব সিরিজ, সিনেমা দেখে ফেলেন। আমেরিকান ওয়েব সিরিজ ‘দ্য গুড ওয়াইফ’ও নিশ্চয় অনেকেই দেখেছেন। চর্চিত সেই ওয়েব সিরিজের হিন্দি সংস্করণই হল কাজল-যীশুর ‘দ্য ট্রায়াল’। যার গল্প লিখেছেন, হুসেন দালাল, আব্বাস দালাল এবং সিদ্ধার্থ কুমার। এক্কেবারে ‘দ্য গুড ওয়াইফ’-এর অনুকরণেই এগিয়েছে ‘দ্য ট্রায়াল: প্যায়ার কানুন ধোকা’-এর গল্প। সেকথা মাথায় রেখেই এই ওয়েব সিরিজটি দেখতে বসা।

সিরিজের গল্পে, অতিরিক্ত বিচারক রাজীব সেনগুপ্ত (যিশু সেনগুপ্ত), যিনি কিনা যৌন কেলেঙ্কারি ও দুর্নীতিতে জড়িয়ে পড়েন। আর এই ঘটনায় নাড়়িয়ে দেয় তাঁর স্ত্রী নয়নিকা সেনগুপ্ত (কাজল) ও তাঁর মেয়ের জীবন। অগত্যা সংসারের হাল ফেরাতে ফের বহু বছর পর কাজে ফেরেন নয়নিকা। যিনিও কিনা আইনজীবী। একটি ল’ফার্মে জুনিয়র আইনজীবী হিসাবে কাজ নেন নয়নিকা। যে চাকরি আবার নয়নিকা পান তাঁর প্রাক্তন প্রেমিক, বর্তমান বন্ধুর হাত ধরে। এদিকে স্বামীর বিরুদ্ধে যৌন কেলেঙ্কারির অভিযোগ প্রতিমুহূর্তে কাজের জায়গায় ধাওয়া করে নয়নিকাকে। প্রতি মুহূর্তে নয়নিকাকে অপমানিত হতে হয়। তার উপর দুই সন্তানকে সুস্থ জীবন, তাঁদের পড়াশোনা সহ সাংসারিক দায়িত্ব সামলে মা হিসাবে নয়নিকার আলাদা লড়াই শুরু হয়। পাশাপাশি স্বামীকে ফিরিয়ে আনতেও আরও এক লড়াই শুরু করেন নয়নিকা সেনগুপ্ত (কাজল)। সে লড়াইয়ে নয়নিকা কি জিততে পারবেন?

<p>'দ্য ট্রায়াল: প্যায়ার কানুন ধোকা'</p>

‘দ্য ট্রায়াল: প্যায়ার কানুন ধোকা’

সিরিজে কাজল, যিশু (রাজীব-নয়নিকা) ছাড়াও রয়েছে বহু অভিনেতা। অসংখ্য চরিত্রের ঘনঘটা। ৮টি পর্বের সিরিজ ধৈর্য ধরে দেখা মোটেও সোজা বিষয় নয়। তাই দর্শকদের ধরে নির্মাতাদের ওয়েব সিরিজগুলিতে আকর্ষণীয় বিষয়বস্তু রাখতেই হয়। আর না হলে এত সিরিজ, সিনেমার মাঝে দর্শক নির্দিষ্ট কোনও সিরিজ দেখবেন কেন! তবে কাজল, যীশুর দ্য ট্রায়াল দেখতে বসে প্রতি পদক্ষেপে ধৈর্যের পরীক্ষা দিতে হয়, হতাশ হতে হয়। সিরিজটির চিত্রনাট্য ভীষণই দুর্বল, গল্পের বাঁধন ভীষণই হালকা। সিরিজের নানান ঘটনা, দৃশ্য এক্কেবারেই যুক্তিহীন। আগ্রহ নিয়ে ‘দ্য ট্রায়াল: প্যায়ার কানুন ধোকা’-দেখতে বসে দর্শক হিসাবে শুধুই ধোকা খেতে হয়েছে।

একজন নিউজ অ্যাঙ্কর অতিরিক্ত বিচারক রাজীবের (যিশু) যৌন কেলেঙ্কারির ভিডিয়ো প্রকাশ করেন, তারপর পুলিশ রাজীবকে গ্রেফতারের জন্য তাঁর বাড়িতে পৌঁছায়। তীব্র ঘৃণায় নয়নিকা তাঁর স্বামীকে চড় মারেন। সে তো নাহয় হল, কিন্তু এরপরই আবার নয়নিকাকে স্বামীর হাত ধরে সংবাদমাধ্যমের ক্যামেরার সামনে দিয়ে বাড়ির বাইরে পুলিশের কাছে নিয়ে যায়। যে দৃশ্যটি ভীষণই হাস্যকর, এক্কেবারেই বিশ্বাসযোগ্য নয়। আর তারপরই দেখা যায় পরিবারের আর্থিক সঙ্কট, বড় মেয়ে মাকে চাকরি খুঁজে পাবে কিনা জিজ্ঞাসা করে। এদিকে ছোট মেয়ের স্কুলের ফি বকেয়া। সমস্যা মেটাতে বাড়ি বিক্রি করে নয়নিকা, তারপর তাঁরা ছোট তিন কামড়ার ফ্ল্যাটে ওঠে। এদিকে সেই ফ্যাটটিও কিন্তু যথেষ্ঠ আড়ম্বরপূর্ণ আসবাবপত্র দিয়ে সাজানো। একদিকে আর্থিক সঙ্কট, অপরদিকেই আবার সুসজ্জিত ফ্ল্যাট গল্পের বুননে অর্থহীন একটা ফাঁক তৈরি করেছে।

<p>'দ্য ট্রায়াল: প্যায়ার কানুন ধোকা'</p>

‘দ্য ট্রায়াল: প্যায়ার কানুন ধোকা’

এদিকে আবার কাজল দীর্ঘ ১০ বছর পর আইনজীবী হিসাবে কাজে ফিরে আদালতে দাঁড়িয়ে বুদ্ধিমত্তার সঙ্গে প্রশ্ন করেন, সেটা দেখতে বেশ ভালোই লাগে। তবে এত বছর পর ফিরেও একের পর এক মামলা তিনি জিতে যাচ্ছেন, সেটা মোটেও বিশ্বাসযোগ্য নয়। গল্পে সবকিছুই ভীষণভাবে আরোপিত বলে মনে হয়েছে। এতটা কঠিন সময়ে দাঁড়িয়ে লড়াইয়ে যে আবেগ দেখা যাওয়ার কথা, কাজলের চরিত্রে সেই আবেগ চোখে পড়ল না। এদিকে নয়নিকার স্বামী রাজীব সেনগুপ্ত আদৌ দোষী কি নির্দোষ তা দেখানোর প্রয়োজনই বোধ করেননি লেখক। এখানে শুধু রাজীবকে শুধুই তাঁর কেস নিয়ে বন্ধু ইলিয়াস ও অন্যান্য আইনজীবীদের সঙ্গে আলোচনা করতে দেখা যায়।

গল্পে যে মূল মমলাটি কাজলকে লড়তে দেখা যায়, সেই The Freedom of Press মামাটিরই ভুল ব্যাখ্যা করা হয়েছে। একজন সাংবাদিক কখনওই নিজের কিংবা কারোর ব্যক্তিগত মতামত দিয়ে পার পেয়ে যেতে পারেন না। কারণ আইন এটা অনুমোদন করে না। তাই নিউজ চ্যানেল ঘিরে যে মামলাগুলি কোনওরকম গবেষণা ছাড়াই দেখানো হয়েছে। কাজল ভালো অভিনেত্রী, তাঁর জীবনের এই দ্বিতীয় ওয়েব সিরিজেও তিনি মন্দ অভিনয় করেননি, তবে চিত্রনাট্যের দুর্বলতায় তাঁর চরিত্রটি দর্শকদের মনে বিশেষ দাগ কাটার মতো ময়। কাজলের বেশকিছু দৃশ্য ভীষণভাবেই আরোপিত, জোর করে ঢোকানো বলে মনে হয়েছে। জীবনের প্রথম ওয়েব সিরিজে যিশুর অভিনয় অবশ্য মন্দ নয়। তাঁর চরিত্রটি বরং আরেকটু সুযোগ পেলে তিনি আরও ভালো করতে পারবেন। তবে এই ওয়েব সিরিজে নজর কেড়েছেন শীবা চাড্ডা। আলি খান, বীণা বন্দ্যোপাধ্যায়, কিরণ কুমার, কোনও অভিনেতারই চরিত্রকে সুন্দরভাবে ব্যবহার করতে পারেননি পরিচালক। সংলাপ, আবাহসঙ্গীত, সম্পাদনা, কোনও ক্ষেত্রেই বিশেষ ছাপ ছাড়ে পারল না ‘দ্য ট্রায়াল: প্যায়ার কানুন ধোকা’। সিরিজের গল্প ও চরিত্রগুলির মধ্যে গভীরতার বড়ই অভাব। কাজলের নেতৃত্বে এই সিরিজের শুরুটা ভালো হলেও শেষটা ভালো হল না। তবে এই সিরিজেই দীর্ঘদিনের ‘নো কিসিং’ নীতি ভেঙে চুমু খেয়েছেন কাজল। অনেকে হয়তবা প্রথমবার কাজলকে এভাবে দেখার জন্যই দেখতে চাইবেন। তবে গল্প দর্শককে কতটা ধরে রাখতে পারবে তা নিয়ে ১৬ আনা সন্দেহ রয়েছে।

 

 

For all the latest entertainment News Click Here 

Read original article here

Denial of responsibility! TechAI is an automatic aggregator around the global media. All the content are available free on Internet. We have just arranged it in one platform for educational purpose only. In each content, the hyperlink to the primary source is specified. All trademarks belong to their rightful owners, all materials to their authors. If you are the owner of the content and do not want us to publish your materials on our website, please contact us by email – [email protected]. The content will be deleted within 24 hours.