‘প্রজাপতি’ কার গায়ে বসল— বাবা নাকি ছেলের? কেমন লাগল অভিজিৎ সেনের নতুন ছবি
বড়দিনের ছুটিতে ‘প্রজাপতি’ উড়ে বেড়াচ্ছে বাংলার হলে হলে। হবে নাই বা কেন, ২৩ ডিসেম্বর প্রেক্ষাগৃহে মুক্তি পেল অভিজিৎ সেনের নতুন ছবি ‘প্রজাপতি’। মুখ্য ভূমিকায় আছেন দেব, মিঠুন চক্রবর্তী। ‘টনিক’-এর মন ভালো ম্যাজিক আরও একবার ধরা দিল এই ছবিতে। পরিচালক বুঝিয়ে দিলেন তিনি দর্শকদের ভালো রাখার জন্য যেমন হাসাতেও পারেন, তেমনই আবার ইমোশনাল করে ফেলতে পারেন। হিন্দুস্তান টাইমস বাংলার কেমন লাগল প্রজাপতি?
বাবা ছেলের নিখাদ ভালোবাসা, খুনসুটি, অভিমান আর দুর্দান্ত এবং অবশ্যই বুদ্ধিদীপ্ত স্ক্রিপ্ট আপনার মনে ধরবেই। সুন্দর, ছিমছাম এই ছবি আপনার ভালো না লেগে উপায় নেই। এটুকু আশ্বাস দিতেই পারি। বড়দিনের ছুটিতে এক ফাঁকে দেখে আসতেই পারেন এই ছবি।
কোন গল্প ধরা পড়ল ছবিতে? গৌর চক্রবর্তী ওরফে মিঠুন হচ্ছেন ‘সাড়ে চুয়াত্তর’ বছরের এক যুবক, হ্যাঁ যুবকই। তিনি ভীষণ প্রাণোচ্ছ্বল, মজার মানুষ। আর যেন তেন প্রকারেন তিনি তাঁর পুত্রের বিয়ে দিতে চান। কেন? কারণ তাঁর নিঃসঙ্গতা কাটাতে। ছেলে তাঁর যত্ন করে, সমস্ত দিকে খেয়াল রাখে, মেয়ে, তথা কনীনিকা বন্দোপাধ্যায়ও এসে মাঝে মধ্যে দেখা করে যান, তবুও ফাঁকা লাগে তাঁর। আর এই বিষয়টা কিছুতেই তাঁর ছেলে জয় ওরফে দেব বুঝে উঠতে পারেন না। বাবা বিয়ের কথা বললেও কাটিয়ে দেন। তিনি চান তাঁর ব্যবসা বাড়াতে। গৌর বাবুর ছেলে পেশায় ওয়েডিং প্ল্যানার, এদিকে নিজেই বিয়ে করছেন না, বিষয়টা তিনি কিছুতেই হজম করতে পারছেন না যেন। এমন সময় তাঁর দেখা কলেজবেলার এক পুরনো বান্ধবী, কুসুম তথা মমতা শঙ্করের সঙ্গে। তাঁদের মধ্যে বন্ধুত্ব ধুলো ঝেড়ে আরও গাঢ় হয়ে ওঠে। কুসুমের মেয়ে, ওরফে কৌশানি চক্রবর্তী চান তাঁর মায়ের সঙ্গে আঙ্কেল তথা মিঠুন চক্রবর্তীর বিয়ে দিতে। অন্যদিকে দেব প্রথমে বিয়ে করবে না ঠিক করলেও পরে তাঁরই কর্মচারী মালা ওরফে শ্বেতা ভট্টাচার্যর প্রতি এক অন্যরকম টান তৈরি হয় তাঁর। এদিকে বাবা যে ছেলেকে বিয়ে দিয়ে তবেই ছাড়বেন! ছেলেও নাছোড়। অগত্যা জামাই তথা অম্বরীশ ভট্টাচার্যের পরামর্শে বেনারসে গিয়ে গঙ্গায় ডুব দেন ছেলে-বাবা দুজনেই। কিন্তু এতে কী গৌর বাবুর মনস্কামনা পূর্ণ হল? গল্প এরপর কোন দিকে বাঁক নেয় সেটা নিয়েই এই ছবি।
মধ্যবিত্ত সংসারে বাবা ছেলের নিত্যদিনের খুঁটিনাটি বিষয় দারুন সুন্দর করে তুলে ধরা হয়েছে, সমাজের ট্যাবু ভাঙার গল্পও দেখানো হয়েছে, একই সঙ্গে আছে রাজনৈতিক স্লোগান থেকে রাজনৈতিক টিপ্পনী, মজাও। আছে নানা ছোট ছোট মুহূর্ত যা দর্শকদের মন ভালো করে দিতে বাধ্য। প্রথম ভাগে দর্শকরা যতটা হাসবেন, দ্বিতীয় ভাগ ততটাই গম্ভীর এবং সিরিয়াস।
এই ছবির অন্যতম ইউএসপি হল এর স্ক্রিপ্ট। ছন্দ মিলিয়ে, নানা মজার ডায়লগ উপহার পাবেন দর্শকরা। সহজ অথচ সাবলীল ভাবে এই মজাগুলো উপস্থাপন করা হয়েছে।
দেবের বিগত কয়েকটি ছবি দেখে এটা স্পষ্ট, তিনি নায়ক নন অভিনেতা হয়ে উঠতে চাইছেন। বারংবার নিজেকে ভেঙে বিভিন্ন ধরনের চরিত্রে ধরা দিচ্ছেন। মিঠুন চক্রবর্তীর উপস্থিতি এই ছবিকে আরও বেশি সুন্দর করে তুলেছে। অন্যদিকে এত বছর পর মিঠুন এবং মমতা শঙ্করকে এক সঙ্গে বড়পর্দায় দেখে সকলেই বেশ উচ্ছ্বসিত। বড়পর্দায় এটা শ্বেতার প্রথম ছবি। তাতেই তিনি বেশ নজর কেড়েছেন। সেই তুলনায় কৌশানিকে একটু ম্লান লাগল। কনীনিকা, বিশ্বজিৎ, অম্বরীশ যে যাঁর জায়গায় যথাযথ। তবে ‘বেলাশেষ’-এর পর আরও একবার এই ছবিতে কমিক চরিত্রে নজর কাড়লেন খরাজ মুখোপাধ্যায়। তাঁর চরিত্র আলাদা করে দর্শকদের মনে থাকবে।
প্রতিটা গানের ব্যবহার বেশ ভালো। মূলত তুমি আমার হিরো, বোম বোম ভোলে, ইত্যাদি বেশ লেগেছে। ফলে বড়দিনের ছুটিতে একটা ভালো ছবি দেখতে চাইলে অবশ্যই এই ছবিটি দেখে আসুন।
তবে অন্যান্য দর্শকদের মতো আমারও মনে যে প্রশ্ন থেকে গেল শেষ পাতে পরিচালকের কাছে সেটাই রাখলাম, প্রজাপতি ২ কি আসবে?
রেটিং: ৪.৫/৫
For all the latest entertainment News Click Here