পুতুল খেলা-সাজগোজের ব্যাপারে কোনও দিন আগ্রহ দেখিনি ওর- তিতাসের দিদা ভাসছেন আবেগে
কৃষ্ণনগরেরই এক নার্সিংহোমে ২০০৪ সালে জন্ম তিতাসের। জন্মের পর বেশ কিছু দিন মায়ের সঙ্গে দিদার বাড়িতেই ছিলেন তিনি। তার পর বাবা রণদীপ সাধুর চাকরির সূত্রে চলে যান রাঁচিতে। সেখান থেকে আবার আসেন কলকাতায়।
তিতাসের মা ভ্রমর বলছিলেন, প্লেয়ার হয়ে ওঠার লড়াইটা সহজ ছিল না তাঁর মেয়ের কাছে। তাঁর কথায়, ‘কলকাতায় বাচ্চার খেলার জায়গা ছিল না। মূলত তিতাসের বাবা রণদীপের ইচ্ছাতেই আমরা চুঁচুড়ায় পৈতৃক বাড়িতে চলে যাই। সেখানেই শুরু হয় তিতাসের পড়াশোনা আর বিকালে ঠাকুরদার সঙ্গে বাড়ির পাশের মাঠে গিয়ে খেলাধুলো। খেলোয়াড় তৈরি করার জন্য নয়। পড়ার সঙ্গে খেলারও সমান প্রয়োজন বলে মনে করতাম আমরা।’
আরও পড়ুন: আগে ফাস্টবোলার ছিলাম, এখন মিউজিশিয়ান- সিলেটে নতুন রুপে ধরা দিলেন অ্যামব্রোজ
প্রথম শ্রেণিতে পড়তেই তিতাসকে সাঁতারে ভর্তি করা হয়েছিল। ছোট থেকেই সে সাইকেল চালিয়ে স্কুলে যেত-আসত। তিনি যখন পঞ্চম শ্রেণিতে পড়েন, তাঁকে মাঠে দৌড় শেখার জন্যও ভর্তি করা হয়েছিল। রণদীপও স্কুল জীবনে জাতীয় স্তরে দৌড়েছেন। চুঁচুড়ায় একটি ক্রিকেট প্রশিক্ষণ ক্লাব আছে। পঞ্চম শ্রেণিতে পড়ার সময়ে তিতাস সময় পেলেই সেই ক্লাবে চলে যেত।
আর সেই সুবাদেই এক ঘোর বর্ষার দিনে ক্লাবের মাঠে প্রথম বল করার সুযোগ পেয়েছিলেন সপ্তম শ্রেণিতে পড়া ১৩ বছরের তিতাস। সেই থেকে ছেলেদের সঙ্গেই ক্রিকেট খেলা শুরু হয় তাঁর। এর পর প্রথমে জেলা মহিলা দলে সুযোগ পান। বাংলা অনূর্ধ্ব ১৯ দলে প্রথম বারেই তিনি নির্বাচিত হননি। এর পর ২০২০ সালে সিবিএসই পরীক্ষা থাকায় সে বারও বাদ দিতে হয়েছিল খেলা। তবে এর পরেই তিতাস বাংলা অনূর্ধ্ব ১৯ এবং সিনিয়র দলে খেলার সুযোগ পান। সেখান থেকে গত বছর নভেম্বরে জাতীয় দলে খেলার জন্যে নির্বাচিত হন তিনি। তার পর তো সবটাই ইতিহাস।
আরও পড়ুন: ধোনি বলেছিল,তোমার আগে দলের কথা ভাবা উচিত- শ্রীধরের বইয়ে মাহি-কোহলির বিবাদের গল্প
দক্ষিঁ আফ্রিকার মাঠে অনূর্ধ্ব ১৯ মহিলা ক্রিকেট বিশ্বকাপ ফাইনালের নায়িকা তিতাস। চার ওভারে মোটে ছ’রান দিয়ে দুই উইকেট তুলে নিয়ে ইংল্যান্ডকে দুরমুশ করছে হুগলির চুঁচুড়ার মেয়ে। আর কৃষ্ণনগরে চাষাপাড়ার বাড়িতে দোতলার ঘরে টিভির সামনে বসে আবেগে ভেসেছেন তিতাসের দিদা ৬৮ বছরের মিতা মল্লিক।
মিতা মল্লিক আনন্দবাজারকে বলেছেন, ‘আমার নাতনি শান্ত স্বভাবের এবং বরাবরই অন্য মেয়েদের থেকে একটু আলাদা। পুতুল খেলা বা সাজগোজ করার ব্যাপারে কোনও দিন ওর কোনও রকম আগ্রহ দেখিনি। ছোটবেলায় ও চাইনিজ খেতে খুব ভালোবাসত। পরে খেলার জন্য অনেক পছন্দের খাবারই খেতে চায় না।’
For all the latest Sports News Click Here