পীযুষ সাহার ‘জালবন্দি’ ফিরিয়ে আনল বাংলা কমার্শিয়াল সিনেমার অন্য আঙ্গিক
রণবীর ভট্টাচার্য
পর্দায় দীর্ঘদিন পর ফিরে এলেন সমরেশ মজুমদার। তবে নিজে নয়, ওঁর উপন্যাস নির্ভর সদ্য মুক্তিপ্রাপ্ত পরিচালক পীযূষ সাহার ‘জালবন্দি’ এক অন্যরকম চিত্রনাট্য উপহার দিল দর্শকদের। পরিচালক পীযূষ সাহা কমার্শিয়াল বাংলা সিনেমার ইতিহাসে খুব পুরনো নন, বিশেষ করে ওনার হাত ধরেই একসময় বড় পর্দায় অভিষেক হয়েছে সোহম চক্রবর্তী, অঙ্কুশ, রুবেল দাসদের মত অনেকের। এই সিনেমায় নিঃসন্দেহে সবচেয়ে বড় চমক হল কাস্টিংয়ে। অনেকে হয়তো বলিউডি নেপটিজম বা স্বজনপোষণের কথা বলবেন, কিন্তু পরিচালক পীযুষ সাহার ছেলে প্রিন্স দিব্যি মানিয়েছেন এই সিনেমায়। অনিশের চরিত্রে প্রিন্স একজন উঠতি বয়সি ইন্স্যুরেন্স এজেন্ট। অনিশ্চিত পৃথিবীর টলমল জীবনের মত তার চাকরীও এক অবস্থা।
বিশ্বায়ন পরবর্তী পৃথিবীতে টার্গেট পূরণ বা লক্ষ্যমাত্রার অঙ্ক ভীষণ পরিচিত। পূরণ করতে পারলে এই খেলায় থাকা যায়। নইলে খেলা থেকে বেরিয়ে যেতে হয়। জালবন্দি সিনেমায় সেই জাল যেন ঘিরে রেখেছে অনিশকে। সিনেমার প্রয়োজনে আসল গল্পের কিছুটা রদলবদল করতে হয়েছে পরিচালককে, তবে সিনেমাটি দেখে মনেই হয়নি এত বছর আগের লেখা। বরং সমসাময়িক বাজার অর্থনীতির সামাজিক রূপক রয়েছে সিনেমাটির অনেক ফ্রেমে। ঝকঝকে সিনেমা বানানো, কমার্শিয়াল সিনেমার বুনোটে তৈরি হলেও এই শতকের মানুষের সম্পর্কের রসায়ন ফুটে উঠেছে চরিত্রগুলোর মধ্যে দিয়ে। এই সিনেমার সবচেয়ে বড় প্লাস পয়েন্ট হল সব পার্শ্ব-চরিত্রগুলো। পায়েল সরকার, খরাজ মুখোপাধ্যায়, জুন মালিয়া, দীপঙ্কর দে, পুষ্পিতা মুখোপাধ্যায় এবং রণজয় বিষ্ণু – বড়পর্দা কিম্বা ছোটপর্দা, অনেক পরিচিত মুখ রয়েছেন পর্দা জুড়ে। সিনেমাটোগ্রাফ্রিতে রয়েছে অভিজ্ঞ গোপী ভগৎ। অমিত-ঈশানের সুর যথাযথ।
সিনেমার প্রথম সিন থেকেই দর্শক উত্তেজনার পারদ অনুভব করবেন। মধ্যবিত্ত বাড়ির অনিশ কি পারবে বাবার হঠাৎ মৃত্যুর পর বদলে যাওয়া পৃথিবীর সাথে তাল মেলাতে? কখনো রক্তকরবীর রাজা আবার কখনো মহাভারতের অভিমন্যুর মত মনে হতে পারে এই সিনেমাটি দেখে। তবে বর্তমানে রমরমিয়ে চলা বেশ কিছু সিনেমার থেকে যে এই জালবন্দী আলাদা, তা বলার অপেক্ষা রাখে না। সম্পর্কের পাটিগণিতের খেলাও রয়েছে চিত্রনাট্যে। তবে অকারণ ডায়লগ দিয়ে সিনেমাকে অকারণে মেলোড্রামাটিক করার চেষ্টা করেননি পরিচালক। এটাই বোধহয় সবচেয়ে বড় পাওনা দর্শকদের। তবে কিছু ক্ষেত্রে মনে হয়েছে সিনেমার গতি রুদ্ধ হয়েছে। আরও টানটান চিত্রনাট্য হলে বোধহয় আরো সুবিচার করা হতো পুরো টিমের এই আন্তরিক প্রচেষ্টার।
বর্তমানে বেশ কয়েকটি বাংলা সিনেমা একসাথে রিলিজ করার দরুন ‘জালবন্দী’ পর্যাপ্ত হল পাইনি। তবে আর যাই হোক, অন্তত একবার প্রিন্সের বড়পর্দায় অভিষেক দেখা যেতেই পারে।
For all the latest entertainment News Click Here