পরিসংখ্যানে এগিয়ে ATKMB, ISL ফাইনালে জোর টক্কর দেবে BFC-ও, জানুন দ্বৈরথের ইতিহাস

শনিবার সন্ধ্যে সাড়ে সাতটায় গোয়ার ফতোরদায় চলতি আইএসএলের শিরোপা জয়ের লড়াই ঘিরে উন্মাদনা তুঙ্গে। মোহনবাগান ও বেঙ্গালুরু এফসি রীতিমতো ফুটছে। এর আগে ইন্ডিয়ান সুপার লিগে যে কয়েক বার দুই দলের দ্বৈরথ হয়েছে, প্রতি বারই তুমুল লড়াই হয়েছে তাদের মধ্যে।

তিন মরশুমে দুই দল মুখোমুখি হয়েছে মোট ছ’বার। তার মধ্যে চার বারই জিতেছে এটিকে মোহনবাগান, একবার জিতেছে বেঙ্গালুরু এফসি। এবং একটি ম্যাচে ড্র হয়। এ বার লিগের প্রথম লেগে দিমিত্রি পেত্রাতোসের গোলে জেতে কলকাতার দল। গত মাসে ফিরতি লিগে ২-১-এ জিতে মধুর প্রতিশোধ নেয় বেঙ্গালুরু।

শনিবার দুই দলের ফুটবল যুদ্ধ দেখতে বসার আগে একবার ফ্ল্যাশ ব্যাকে দেখে নেওয়া যাক দুই দলের গত ছ’বারের লড়াই কেমন ছিল।

মরশুম ২০২০-২১, ২১ ডিসেম্বর, ২০২০, ফতোরদার জওহরলাল নেহরু স্টেডিয়াম

আগের ছ’টি ম্যাচে যারা বিপক্ষের কাছে কঠিন প্রতিপক্ষ হয়ে উঠেছিল, সেই বেঙ্গালুরু এফসি-কে রীতিমতো শাসন করে তাদের মরশুমের প্রথম হারের মুখ দেখতে বাধ্য করে এটিকে মোহনবাগান। সবুজ-মেরুন বাহিনী ১-০ জিতলেও, সারা ম্যাচে রীতিমতো আধিপত্য বিস্তার করে তারা। একাধিক সুযোগও হাতছাড়া করে। তবে শেষ হাসি হাসেন সবুজ-মেরুন ব্রিগেডের ফুটবলাররাই। অসাধারণ এবং আগ্রাসী ফুটবল খেলে সুনীল ছেত্রীদের হতবাক করে দেয় স্প্যানিশ কোচ আন্তোনিও লোপেজ হাবাসের দল। ৩৩ মিনিটের মাথায় অনবদ্য গোল করে দলকে এগিয়ে দেন ডেভিড উইলিয়ামস। মাঝমাঠ থেকে কার্ল ম্যাকহিউয়ের লবে বল পেয়ে বাঁ দিকের উইং থেকে কাট করে ঢুকে দুই ডিফেন্ডার হরমনজ্যোৎ খাবরা ও প্রতীক চৌধুরিকে বোকা বানিয়ে বক্সের মাথা থেকে কামানের গোলার গতিতে সোজা গোলে শট নেন। গোলকিপার গুরপ্রীত সিং সান্ধুর আর কিছুই করার ছিল না।

মরশুম ২০২০-২১, ৯ ফেব্রুয়ারি, ২০২১, ফতোরদার জওহরলাল নেহরু স্টেডিয়াম

সুনীল ছেত্রী ও তাঁর দলের ওপর রীতিমতো আধিপত্য বিস্তার করে ২-০ জেতে কলকাতার দল। সারা ম্যাচে রীতিমতো আধিপত্য বিস্তার করে জেতে এটিকে মোহনবাগান। ৩৭ মিনিটের মাথায় পেনাল্টি থেকে সেই মরশুমের হিরো আইএসএলে তাঁর ১২ নম্বর গোলটি করে দলকে এগিয়ে দেন ফিজিয়ান তারকা স্ট্রাইকার রয় কৃষ্ণা। তার সাত মিনিট পরেই বিপক্ষের বক্সের বাঁ দিকের মাথা থেকে নেওয়া ফ্রি কিক থেকে সোজা গোলে শট নেন সদ্য ওডিশা এফসি থেকে সবুজ মেরুন শিবিরে যোগ দেওয়া ব্রাজিলিয়ান ফরোয়ার্ড মার্সেলো পেরেইরা বা মার্সেলিনহো। বক্সের মধ্যে রয়কে স্পষ্ট ফাউল করে এটিকে মোহনবাগানকে কার্যত পেনাল্টি পেতে সাহায্য করেন প্রতীক চৌধুরি। পেনাল্টি থেকে গোল করতে বিন্দুমাত্র ভুল করেননি ফিজিয়ান তারকা। এর সাত মিনিট পরে ফের ডেভিড উইলিয়ামসকে টেনে মাটিতে ফেলে দেওয়ায় বক্সের বাঁদিকের মাথায় ফ্রি কিক পায় এটিকে মোহনবাগান এবং সেই ফ্রি কিক থেকে অসাধারণ গোল করে ব্যবধান বাড়িয়ে নেন মার্সেলিনহো। বাঁ পায়ে নেওয়া ফ্রি কিক সোজা জালে জড়িয়ে দেন তিনি। গুরপ্রীত বাঁ দিকে শরীর ভাসিয়ে দিয়েও বলের নাগাল পাননি।

আরও পড়ুন: এএফসি এশিয়ান কাপে শেষ বার দেশের হয়ে খেলবেন সুনীল- দাবি জাতীয় দলের কোচ স্টিমাচের

মরশুম ২০২১-২২, ১৬ ডিসেম্বর, ২০২১, অ্যথলেটিক স্টেডিয়াম, বাম্বোলিম

বাম্বোলিমের অ্যাথলেটিক্স স্টেডিয়ামে গোলের স্রোত বইলেও জিততে পারেনি কোনও দলই। সুনীল ছেত্রী-হীন বেঙ্গালুরু এফসি-র বিরুদ্ধে ৩-৩-এ ম্যাচ অমীমাংসিত রেখে মাঠ ছাড়েন সবুজ-মেরুন ফুটবলাররা। দু-দু’বার এগিয়ে গিয়েও শেষ পর্যন্ত ম্যাচ জিততে পারেনি আন্তোনিও লোপেজ হাবাসের দল। অন্য দিকে একবার এগিয়ে যাওয়ার পর দু’বার সমতা আনা সত্ত্বেও শেষ পর্যন্ত জয়ের মুখ দেখতে পায়নি বেঙ্গালুরু এফসি। সে দিন গতিময় ফুটবলের প্রথমার্ধে ২৫ মিনিটের মধ্যে চারটি গোল হয় ও দ্বিতীয়ার্ধে ১৪ মিনিটের মধ্যে দু’টি গোল করে দুই দল। হাফ ডজন গোলের মধ্যে পাঁচটিই আসে সেট পিস মুভ থেকে। দু’টি পেনাল্টি ও তিনটি কর্নার থেকে। একটি গোল আসে এটিকে মোহনবাগানের রয় কৃষ্ণা-হুগো বুমৌস জুটির ম্যাজিকে। ম্যাচের সেরা ফুটবলার শুভাশিস বোস সে দিন একটি গোল করেন ও একটি করান। প্রথমে শুভাশিসই গোল করে দলকে এগিয়ে দেন ১৩ মিনিটের মাথায়। কিন্তু তার পাঁচ মিনিট পরেই পেনাল্টি থেকে সমতা আনেন বেঙ্গালুরুর ব্রাজিলীয় ফরোয়ার্ড ক্লেটন সিলভা। ২৬ মিনিটের মাথায় দানিশ ফারুকের হেডে করা গোলে এগিয়ে যায় বেঙ্গালুরু। ৩৮ মিনিটে রয়ের অ্যাসিস্টে দুর্দান্ত গোল করে সমতা আনেন বুমৌস। দ্বিতীয়ার্ধে ১৫ মিনিটের মধ্যে পেনাল্টি থেকে গোল করে দলকে এগিয়ে দেন সেই রয় কৃষ্ণা। কিন্তু ফের সমতা আনে বেঙ্গালুরু, কর্নারে প্রিন্স ইবারার মাথা ছোঁয়ানো গোলে।

মরশুম ২০২১-২২, ২৭ ফেব্রুয়ারি, ২০২২, ফতোরদার জওহরলাল নেহরু স্টেডিয়াম

দুর্দান্ত লড়াইয়ের পর তিন পয়েন্ট অর্জন করে এটিকে মোহনবাগান। ফতোরদার জওহরলাল নেহরু স্টেডিয়ামে তারা সুনীল ছেত্রীর দলকে ২-০ হারিয়ে সেমিফাইনালের দিকে আরও এক ধাপ এগিয়ে যায়। রয় কৃষ্ণা, ডেভিড উইলিয়ামস সে দিন না খেলতে পারলেও লিস্টন কোলাসো ও মনবীর সিং দর্শনীয় গোল করে দলকে তিন পয়েন্ট এনে দেন। ফুটবলের চরম দ্বৈরথে প্রথম ৪৫ মিনিটে এটিকে মোহনবাগানকে কিছুটা ক্লান্ত, ছন্দহীন লাগলেও প্রথমার্ধের শেষ মিনিটে ফ্রিকিক থেকে অসাধারণ নাকল্ শটে লিস্টন কোলাসো গোল পাওয়ার পর দ্বিতীয়ার্ধে সবুজ-মেরুন বাহিনী চাঙ্গা হয়ে ওঠে। সে দিন হুগো বুমৌসকে তাঁর চেনা মেজাজে পাওয়া যায়নি। তাঁর পারফরম্যান্সে ক্লান্তির ছাপ ছিল স্পষ্ট। এ ছাড়া রয়, ডেভিডরা মাঠে না থাকায় লিস্টন, মনবীরের সঙ্গে তাঁর বোঝাপড়াতেও সমস্যা দেখা যায়। প্রথমার্ধের পুরোটাও খেলতে পারেননি ফরাসি মিডফিল্ডার। ৪০ মিনিট খেলার পর তাঁকে তুলে নেন কোচ ফেরান্দো। প্রথমার্ধের শেষে বিপক্ষের বক্সের সামনে ফ্রি কিক পায় এটিকে মোহনবাগান। লিস্টনের ১২৮ কিলোমিটার গতির অসাধারণ, জোরালো ও মাপা নাকল্ শট বেঙ্গালুরুর ফুটবলারদের ওয়াল ও গোলকিপারের মাথার ওপর দিয়ে সোজা গোলে ঢুকে পড়ে। সেই মরশুমে এটি আট নম্বর গোল গোয়ানিজ ফরোয়ার্ডের।

আরও পড়ুন: ISL-এর সেরা কিপার হয়েও স্টিমাচের ২৩ জনের দলে নেই বিশাল, রয়েছেন ATKMB-র ২ ফুটবলার

মরশুম ২০২২-২৩, ৩ ডিসেম্বর, ২০২২, শ্রী কান্তিরাভা স্টেডিয়াম, বেঙ্গালুরু

প্রথমার্ধে একটিও শট গোলে রাখতে না পারা এটিকে মোহনবাগান সে দিন সারা ম্যাচে একটিই গোলমুখী শট নেয় ৬৬ মিনিটের মাথায়। পেট্রাটসের এই দূরপাল্লার শটেই গোল করে ম্যাচ জিতে নেয় তারা। প্রতিপক্ষ শিবিরে তাদের চার প্রাক্তন সতীর্থ থাকলেও তাঁদের একেবারেই রেয়াত করেনি সবুজ-মেরুন বাহিনী। সুনীল ছেত্রীর দল ঘরের মাঠে সমর্থকদের সামনে উজ্জীবিত ও গতিময় ফুটবল খেললেও বিপক্ষের গোলের সামনে গিয়ে বারবারই ব্যর্থ হন। দলের দুই প্রধান স্কোরার সুনীল ও রয় কৃষ্ণার ধারাবাহিক ব্যর্থতাই তাদের ফের হারের মুখ দেখতে বাধ্য করে সে দিন। অস্ট্রেলীয় তারকা পেট্রাটসের গোলেই ম্যাচ জিতে নেয় এটিকে মোহনবাগান। হুগো বুমৌসের পা থেকে বল পেয়ে ৬৬ মিনিটের মাথায় বক্সের বাইরে থেকেই গোলার মতো শট নেন পেট্রাটস, যা গুরপ্রীতের মতো অভিজ্ঞ গোলকিপারও রুখতে পারেননি। বিপক্ষের পা থেকে বল ছিনিয়ে নিয়ে বুমৌসকে তা দিয়েছিলেন আশিক কুরুনিয়ান। গত কয়েকটি ম্যাচের মতো সেই ম্যাচেও চেনা ছন্দে খেলতে না পারা সুনীল ছেত্রীকে ৭৩ মিনিটের মাথায় তুলে নেন বেঙ্গালুরুর কোচ সাইমন গ্রেসন। এর ন’মিনিট পরে প্রবীর দাসকেও তুলে নেন কোচ, নামান ফরোয়ার্ড শিবশক্তি নারায়ণনকে। এই শিবশক্তিই সুপারসাব হওয়ার সুযোগ হাতছাড়া করেন ৮৫ মিনিটের মাথায়। বক্সের ঠিক বাইরে থেকে হার্নান্ডেজের ছোট পাসে বল পেয়ে গোলে শট নেন শিবশক্তি, যা ক্রসবারে লেগে ফিরে আসে।

মরশুম ২০২২-২৩, ৫ ফেব্রুয়ারি, ২০২২, যুবভারতী ক্রীড়াঙ্গন, কলকাতা

এটিকে মোহনবাগানের দুই প্রাক্তন তারকা হাভিয়ে হার্নান্ডেজ ও রয় কৃষ্ণার গোলেই ২-১-এ জিতে সে দিন চলতি লিগের সেরা ছয়ে ঢুকে পড়ে বেঙ্গালুরু এফসি। প্রথমার্ধে টানটান উত্তেজনায় ঠাসা ফুটবলের পর দ্বিতীয়ার্ধে ম্যাচের নিয়ন্ত্রণ নিতে দেখা যায় বেঙ্গালুরু এফসি-কে। প্রথমার্ধে যে দাপট দেখিয়েছিল সবুজ-মেরুন বাহিনী, দ্বিতীয়ার্ধে সেই দাপট দেখাতে শুরু করে ‘ব্লু’জ’-রা। নির্ধারিত সময় শেষ হওয়ার ১২ মিনিট আগে দূরপাল্লার শটে গোল করে দলকে এগিয়ে দেন স্প্যানিশ মিডফিল্ডার হার্নান্ডেজ। ৯০ মিনিটের মাথায় ব্যবধান দ্বিগুন করেন ফিজিয়ান স্ট্রাইকার রয় কৃষ্ণা, যিনি একসময় ছিলেন সবুজ-মেরুন সমর্থকদের নয়নের মণি। বাড়তি সময়ের তৃতীয় মিনিটে সান্ত্বনা গোলটি করে ব্যবধান কমান দিমিত্রিয় পেট্রাটস। এক প্রতি আক্রমণে ৭৮ মিনিটের মাথায় গোল পেয়ে যান হাভিয়ে হার্নান্ডেজ। একাধিক ছোট পাসে তৈরি করা আক্রমণের শেষে বক্সের বাঁ দিক থেকে যে ক্রস দেন রোশন নাওরেম, বক্সের সামনে সেই ক্রসে সোজা গোল লক্ষ্য করে এক জোরালো ভলি মারেন হার্নান্ডেজ, যা বাঁ দিকে ঝাঁপানো বিশাল কয়েথের হাতে লেগে গোলে ঢুকে পড়ে। দ্বিতীয়ার্ধের শেষ মিনিটে প্রায় ফাঁকা গোলে বল ঠেলে দেন এটিকে মোহনবাগানের আর এক প্রাক্তনী। ডান দিক থেকে পাবলো পেরেজের গোলমুখী চিপ ফিস্ট করতে গিয়ে রয়ের পায়ে বল জমা দিয়ে দেন বিশাল। এই সুযোগ কাজে লাগাতে বিন্দুমাত্র ভুল করেননি রয়। বেঙ্গালুরু জয় সুনিশ্চিত করার তিন মিনিটের মধ্যেই স্বান্ত্বনা গোলটি তুলে নেন দিমিত্রিয়স পেট্রাটস। এ বারও দূরপাল্লার শটেই গোলটি হয়। মাঝমাঠে মনবীরের পা থেকে বল পেয়ে কিছুটা বাঁ দিকে ঢুকে এসে বক্সের অনেক বাইরে থেকে নেওয়া এই জোরালো শট বেঙ্গালুরুর ডিফেন্ডার অ্যালান কোস্টার মাথায় লেগে গতিপথ পরিবর্তন করে গোলে ঢুকে যায়, যার নাগাল পাননি গুরপ্রীত।

For all the latest Sports News Click Here 

Read original article here

Denial of responsibility! TechAI is an automatic aggregator around the global media. All the content are available free on Internet. We have just arranged it in one platform for educational purpose only. In each content, the hyperlink to the primary source is specified. All trademarks belong to their rightful owners, all materials to their authors. If you are the owner of the content and do not want us to publish your materials on our website, please contact us by email – [email protected]. The content will be deleted within 24 hours.