‘পঞ্চায়েত’-এ মৃত্যুর দৃশ্যটির সময় ভাবতাম, বাস্তবে এমন কিছু ঘটলে কী করব!: ফয়জল
পর্দায় ‘সচিবজি’র ছায়াসঙ্গী। পরনে সাদামাঠা ফতুয়া, গলায় গামছা। মুখে একরাশ হাসি। তাঁর অপার সারল্যে মুগ্ধ দর্শক। ‘পঞ্চায়েত’-এর প্রহ্লাদ বাস্তবে কেমন? জানল হিন্দুস্তান টাইমস বাংলা।
প্রশ্ন: কোন নামে মানুষ বেশি ডাকছেন, ফয়জল না প্রহ্লাদ?
ফয়জল: (খানিক হেসে) মানুষ বলছেন, তাঁরা মুগ্ধ। ‘পঞ্চায়েত’ দেখে তাঁরা আবেগঘন। প্রচুর মেসেজ পাচ্ছি। ভালোবাসা পাচ্ছি। তাই যে নামেই ডাকা হোক, আমি খুশি।
প্রশ্ন: প্রহ্লাদ হয়ে ওঠার সুযোগ এল কীভাবে?
ফয়জল: আমি একটি প্রযোজনা সংস্থা চালাই। আমার সেই অফিসে সিরিজের প্রযোজক এবং পরিচালক এসেছিলেন। প্রথমে একটু দ্বিধাগ্রস্ত ছিলাম। মনে হচ্ছিল, পারব কি না। অন্যান্য কাজ নিয়ে ব্যস্ত ছিলাম। কিন্তু ওঁরা দু’জন আমার উপর ভরসা রেখেছিলেন। আর চিত্রনাট্য পড়ে আমার এতো ভালো লাগল যে, রাজি হয়ে গেলাম। এ রকম ছিমছাম, সুন্দর একটা গল্প। লোভ সামলাতে পারলাম না।
প্রশ্ন: ওটিটি-তে এখন বেশির ভাগ সিরিজেই খুন-জখম, রাজনীতি…
ফয়জল: দেখুন, সব গল্প তো এক রকম হবে না। প্রত্যেকটা সিরিজের নিজস্ব ইউএসপি থাকে। আমি মনে করি, পর্দায় কোনও গল্প ফুটিয়ে তুলতে গেলে যদি হিংস্রতা দেখানো হয়, তাতে ভুল নেই।
প্রশ্ন: কোনও বিতর্কিত চরিত্রে অভিনয়ের প্রস্তাব এলে তবে রাজি হবেন, বলছেন?
ফয়জল: অকারণে কোনও কিছু নিয়েই বিতর্ক হওয়া উচিত নয়। চরিত্র যদি মনের মতো হয়, রাজি না হওয়ার কারণ নেই। কিন্তু এখনই এত কিছু ভাবছি না। সবে তো শুরু করলাম।
প্রশ্ন: কিন্তু ইন্ডাস্ট্রিতে তো এক দশক পার করে ফেলেছেন…
ফয়জল: আমি তো শুরু থেকেই অভিনয় করিনি। সহকারী পরিচালক, প্রোমো প্রোডিউসর হিসেবে কাজ করেছি। নিজের প্রযোজনা সংস্থাও চালাই। অনুরাগ কাশ্যপের সঙ্গেও কাজ করতাম। ‘গ্যাংস অব ওয়াসিপুর’-এর একটি দৃশ্য শ্যুট করার সময় এক অভিনেতা পালিয়ে যান। তখন অভিনয়ের জন্য আমার ডাক পড়ে। এর পরেই ‘পঞ্চায়েত’।
প্রশ্ন: ‘পঞ্চায়েত’-এর পর জীবন কতটা বদলেছে?
ফয়জল: সত্যি বলতে এখনও বুঝতে পারছি না। বোঝার চেষ্টা করছি। মানুষ ভালোবসছেন, চিনছেন। সেটা ভালো লাগছে। দায়িত্ব বেড়ে গেল।
প্রশ্ন: ঝাঁ চকচকে চেহারা না থাকলে কি সত্যিই বলিউডে কাজ পাওয়া দুষ্কর?
ফয়জল: এক কথায় এই প্রশ্নের উত্তর দেওয়া সম্ভব নয়। আমার মনে হয়, এই বিষয়টা অনেকাংশেই নির্মাতাদের উপর নির্ভরশীল। কোনও চরিত্র লেখার সময় তার একটি ছবি মনে মনে এঁকে নেওয়া হয়। সেই ছবির সঙ্গে অভিনেতার চেহারা মিলে গেলে কাজ পেতে অসুবিধা হয় না। তবে এ কথা ঠিক যে, প্রাথমিক ভাবে শো-বিজ চলে অভিনেতার ব্যক্তিত্ব দেখে। কিন্তু এখনও পর্যন্ত এ সবের জন্য আমার কোনও তিক্ত অভিজ্ঞতা হয়নি।
প্রশ্ন: তার মানে পুরো পথটাই মসৃন? কখনও সমস্যা হয়নি?
ফয়জল: (একটু ভেবে) না, সমস্যা হয়নি বলা ভুল। কোন পেশায় সমস্যা থাকে না বলুন তো? আপনি যে কাজই করবেন, সেখানেই কোনও না কোনও সমস্যা থাকবে। অভিনয়ের ক্ষেত্রেও তাই। সৎ ভাবে বাঁচতে গেলে, সব কিছুই একটু বেশি কঠিন হয়ে যায়।
প্রশ্ন: কিন্তু আপনি তো সবাইকে কাঁদিয়ে ছাড়লেন…
ফয়জল: (খানিক চমকে) মানে?
প্রশ্ন: ‘পঞ্চায়েত’-এ ছেলের মৃত্যুর দৃশ্য…
ফয়জল: ওই দৃশ্যটা পর্দায় ফুটিয়ে তোলা খুবই কঠিন ছিল। আমিও চাপে ছিলাম। ভুলত্রুটি হলে কী হবে! ক্যামেরার সামনে দাঁড়ানোর আগে আমি তিন-চার ঘণ্টা একা বসে থাকতাম। ভাবতাম, বাস্তবে আমার সঙ্গে এমন কিছু ঘটে গেলে কী করব। পুরো সেটও তখন নিশ্চুপ। আদৌ ঠিক করে দৃশ্যটি ফুটিয়ে তুলতে পারলাম কি না, তা নিয়ে একটা কথাও হয়নি। সকলেই যেন বাকরুদ্ধ। আমি নিজেও তাই। মানুষের মন ছুঁতে পেরেছি। এটাই আমাদের সাফল্য।
প্রশ্ন: এই তো গেল কাজের কথা। কলকাতা কবে আসছেন?
ফয়জল: (হেসে উঠে) আমি তো মাঝেমাঝেই কলকাতা যাই নানা কাজে। ওই শহরটা আমার খুব প্রিয়। মানুষ এতো আন্তরিক! আর খাবার তো অসাধারণ!
প্রশ্ন: আপনার প্রিয় পদ কী কী?
ফয়জল: তালিকাটা বেশ লম্বা! তবে সরষে ইলিশ আমার সব চেয়ে প্রিয়। আর মিষ্টি দই, ক্ষীরকদম পেলে তো কথাই নেই!
For all the latest entertainment News Click Here