‘নিয়ম হয়ে গিয়েছে’, প্রচারের অন্ধকারে চিত্রনাট্যকাররা, কী বলছেন লেখকরা
যখনই কোনও ছবি মুক্তি পায় যাঁরা অভিনয় করছেন তাঁদের তো দেখাই যায়। পোস্টার থেকে ট্রেলার, গান থেকে ছবি সবেতেই। পরিচিতি পান পরিচালকও। প্রযোজনা সংস্থার কথাও সকলেই জেনে যান। ধরুন না কোনও সিনেমার পোস্টারের কথা। কী থাকে সেখানে? একটা চমক দেওয়ার মতো কোনও ছবি কিংবা কোনও নামী দামী তারকা হলে তাঁর ছবি। সঙ্গে তাঁর নাম। উপরে বা নিচে পরিচালকের নাম সঙ্গে প্রযোজনা সংস্থার লোগো বা নাম। কিন্তু এত কিছুর ভিড়ে স্থান হয় কী চিত্রনাট্য যিনি লিখেছেন সেই লেখকের। গল্পটা যাঁর মস্তিষ্কপ্রসূত তাঁর স্থান হয় কী? অধিকাংশ সময়ই সেটা হয় না। যাঁরা গল্প লিখছেন তাঁদের নাম তেমন পোস্টারে দেখা যায় না।
এবার এই গোটা বিষয় নিয়ে প্রশ্ন তুলছেন টলিউডের লেখকদের একাংশ। পরিচালককে যেমন ধরেই নেওয়া হয় কোনও ছবি তৈরির মূল কারিগর তেমনই কি চিত্রনাট্য লেখকদের অবহেলা করা যায়? গল্পকার যিনি তাঁর ভূমিকা যেন একেবারে অস্বীকার করে ফেলা হয়। অনেক সময়ই তাঁদের নাম পোস্টারে থাকে না কোথাও। পান না প্রচারের আলো। আর সেই কারণেই বারংবার নিজেদের বঞ্চিত বলে মনে হতে থাকে তাঁদের এবার সেটা বদলানোর কথা তুললেন তাঁরা।
সম্রাজ্ঞী বন্দোপাধ্যায়, নামটা কতজনের পরিচিত? অথচ তাঁর লেখা গল্পের উপর বানানো প্রতিটি ছবি কিন্তু বেশ জনপ্রিয়। এই তো ধরুন না মুখার্জি দার বউ, বৌদি ক্যান্টিন ইত্যাদি। কিন্তু ছবিতে গল্পকারের জায়গায় তাঁর নামের সঙ্গে পরিচালকের নাম যোগ হয়ে গিয়েছে যদিও গোটা গল্পটা তিনিই লিখেছেন। এই বিষয়ে আনন্দবাজারকে দেওয়া একটি সাক্ষাৎকারে তিনি বলেন, ‘ভারতীয় সিনেমা সবসময়ই কনটেন্ট নির্ভর। আমাদের দেশে ছবিতে গল্প একটা বড় অংশ পালন করে। তাহলে সেই অনুযায়ী পোস্টারে গল্পকারের নাম থাকা উচিত তাই না? কিন্তু সেটা কেন দেওয়া হয় না বলুন তো? আমি যখন এই বিষয়ে কথা বলতে যাই তখন আমায় বলা হয় তাহলে এডিটর থেকে সিনেমাটোগ্রাফার সবার নাম দিতে হবে। অন্যদের নাম থাক তাতে আমার অসুবিধা নেই। কিন্তু আমিও তো আমার দিকটা দেখব তাই না?’
তবে বিষয়টা সব জায়গায় এক নয় বলেই তিনি জানান। উইন্ডোজ প্রোডাকশন সবসময় চিত্রনাট্যকার এর নাম দেয় পোস্টারে। অন্য কোথাও সেটা হয় না। কিন্তু নানা ভয়, যেমন কাজ না পাওয়া, সম্পর্ক খারাপ হয়ে যাওয়ার কারণে অনেকেই চুপ থাকেন।
তবে সম্রাজ্ঞীর থেকে কিন্তু আলাদা মত পোষণ করেন টলিউডের আরেক চিত্রনাট্যকার পদ্মনাভ দাশগুপ্ত। তিনি বক্তব্যে বলেন, ‘পোস্টার থেকে আমার নাম এখনও পর্যন্ত কখনও বাদ যায়নি। তবে সেভাবে প্রচার পাওয়া না। সংবাদমাধ্যম গল্পকারদের সেভাবে গুরুত্ব দেয় না। তবে নিজের কাজ দিয়ে নিজের জায়গা তৈরি করে নেওয়াই আসল। আজকাল অনেকেই আমার লেখা ছবি দেখলে বুঝতে পারেন সেটা আমার বড় পাওয়া। কিন্তু গোটা পৃথিবী জুড়ে এভাবেই হয়ে আসছে। টাইটানিক এত বিখ্যাত সিনেমা আপনি কি তার গল্পকারের নাম বলত পারবেন? কিংবা বসন্ত বিলাপ ছবিটির! এই ছবির চিত্রনাট্য লিখেছিলেন কিন্তু অভিনেতা শেখর চট্টোপাধ্যায়। ছবি সফল হলেও কে সেটা লিখেছে অনেক সময়ই সেটা জানা যায় না। এটাই নিয়ম হয়ে গিয়েছে।’
For all the latest entertainment News Click Here