দেবলীনার দীর্ঘ কেরিয়ারে হাতে গোনা কয়েকটি লিড রোল, কেন? কী বললেন অভিনেত্রী
১৪ জুলাই, অর্থাৎ আজকেই মুক্তি পাচ্ছে করোক মুর্মু পরিচালিত ওয়েব সিরিজ ‘ক্ষ্যাপা’ সিজন ৪। সুরিন্দর ফিল্মস প্রযোজিত এই সিরিজটি আড্ডাটাইমসে মুক্তি পাবে। গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকায় রয়েছেন ভরত কল, দেবলীনা দত্ত, পুশন দাশগুপ্ত, আর্য দাশগুপ্ত, অলিভিয়া সরকার প্রমুখ। এই সিরিজ মুক্তি পাওয়ার আগেই HT বাংলার মুখোমুখি হয়েছিলেন মারিয়াম মুর্শিদাবাদী ওরফে দেবলীনা দত্ত।
ক্ষ্যাপা সিরিজে আপনার চরিত্রটা ঠিক কেমন?
দেবলীনা: আমার চরিত্রের নাম মারিয়াম মুর্শিদাবাদী। এখানে এই চরিত্রটিকে দুটো টাইম স্কেলে তুলে ধরা হয়েছে। আর দুটো দিক একে অন্যের থেকে একদম আলাদা। একদিকে যখন মারিয়াম মুর্শিদাবাদ থেকে আসছে তখন সে আদ্যোপান্ত গ্রাম্য, গরীব, আনপলিসড একটি মেয়ে। কলকাতায় এসে গাঁজার ব্যবসা শুরু করে। তারপর সে ধীরে ধীরে কোকেন মাফিয়া হয়ে ওঠে। আমি আমার ২৬ বছরের কেরিয়ারে এই প্রথমবার ডনের চরিত্রে অভিনয় করলাম।
অভিজ্ঞতা কেমন?
দেবলীনা: মারিয়াম মুর্শিদাবাদী থেকে ডন মারিয়াম হয়ে ওঠা, চরিত্রটা খুব মজাদার। ডন হতে গিয়ে বাইরের চাকচিক্য রপ্ত করে মডার্ন হয়ে ওঠে মারিয়াম। কিন্তু ভিতরে থেকে যায় পাড়ার সেই রকবাজ ছেলেদের মতো হাবভাব, কথা।
এ তো বেশ চ্যালেঞ্জিং চরিত্র। নিজেকে তৈরি করলেন কীভাবে?
দেবলীনা: আমি এর আগে গ্রাম্য চরিত্র বা আধুনিক শহুরে চরিত্র দুই করেছি, কিন্তু যেটা করিনি সেটা হল মুর্শিদাবাদী ভাষায় কথা বলা। ওঁদের কথায় একটা অদ্ভুত সুর থাকে, উচ্চারণেও সামান্য কিছু ফারাক আছে। তো আমায় সেটা শিখতে হয়েছে। অন্যদিকে আমি টলিগঞ্জে এখন যেখানে থাকি তার পাশেই একটি বিশাল বস্তি আছে। ওঁরা আমার পড়শি হন। এত বছরের আলাপ আমাদের। তো ওখানকার ছেলেদের থেকে রকবাজদের মতো কথা বলা বা হাবভাব রপ্ত করেছি। যদিও সেটা এত বছর ধরে দেখছি বলে রপ্ত করতে অসুবিধা হয়নি। কিন্তু মুর্শিদাবাদী ভাষাটা শিখতে হয়েছে।
এতগুলো বছর কেটে গেল এই ইন্ডাস্ট্রিতে। আপনাকে কখনও সেই অর্থে লিড মহিলা চরিত্রে দেখা যায়নি দু একটা ছাড়া। কখনও আফসোস হয় না?
দেবলীনা: ‘অনুব্রত ভালো আছো’, বা এমন কিছু ছবিতে প্রধান নারী চরিত্র করেছি বটে, কিন্তু সেটা ভীষণই কম। আমার অনেক চরিত্র নিয়েই অনেক আফসোস আছে, কিন্তু ওয়েব বলুন বা টিভি বা সিনেমায় যে ধরনের চরিত্র পাই আমি সেগুলো এত চ্যালেঞ্জিং, এত শেডের যে সেই আফসোসটা ব্যালেন্স হয়ে যায়। এই তো মারিয়াম মুর্শিদাবাদীর চরিত্রটাই দেখুন না। এছাড়া টেলিভিশনে এখন যে চরিত্র করছি সেখানেও আমায় এক নতুন লুকে দেখা যাচ্ছে যা আগে কখনও কেউ দেখেনি। ফলে এই চরিত্রগুলো আসে আমার কাছে, আমার মতো একজন সুপ্রতিষ্ঠিত নায়িকার কাছে এই প্রস্তাব এলে নিজেকে ভেঙে নতুন ভাবে তুলে ধরি। এগুলো তো সবাই পায় না। তবে হ্যাঁ, আফসোস তো আছেই।
নতুন পুরনো মিলিয়ে বহু মানুষের সঙ্গে কাজ করেছেন, কখনও মনে হয়েছে এঁর সঙ্গে কাজ করতে বেশি ভালো লাগছে, বা ইনি আমার প্রতিযোগী?
দেবলীনা: অনেকে আছে যাঁদের সঙ্গে আমার কাজ করতে ভীষণ ভালো লাগে। কিন্তু কম্পিটিশন বস্তুটা আমার মনে কারও জন্যই নেই। আমি একদমই কম্পিটিটিভ মনোভাব রাখি না। নিজের কাজ করি, কেরিয়ারে ফোকাস করি। ট্রেন্ড গা না ভাসিয়ে নিজের উপর বিশেষ নজর দিই।
অন্যান্য নায়িকাদের মতো আপনাকে সেই অর্থে রিল বা ইত্যাদি পোস্ট করতে দেখা যায় না। বিশেষ কারণ?
দেবলীনা: সোশ্যাল মিডিয়ায় অ্যাক্টিভ আমিও থাকি। কিন্তু আমি আমার প্রোফাইল কীভাবে সাজাব সেটা যেমন আমার ব্যাপার, অন্য কেউ কীভাবে তাঁর প্রোফাইল সাজাবেন সেটা তাঁর ব্যাপার। এখানে আমি বা আপনি বলার কেউ নই, সমালোচনা করার কেউ তো নই-ই।
নিজেকে এত ফিট রাখেন কীভাবে?
দেবলীনা: সঠিক খাওয়া দাওয়া করি, এবং নিয়মিত ব্যায়াম। শরীর চর্চার ক্ষেত্রে আমি ভীষণ ডিসিপ্লিনড।
আপনি যদি আজ, এই সময় দাঁড়িয়ে এই প্রফেশনে জয়েন করতেন তাহলে অভিজ্ঞ আপনি তাঁকে কী পরামর্শ দিতেন? সহজ ভাষায় বললে নতুনদের জন্য আপনার টিপস?
দেবলীনা: আমাদের এই পেশাটা না অনিশ্চয়তায় ভরা। আপনি একটা মাসে প্রচুর কাজ পেতে পারেন। আরেকটা মাসে আবার কিছু পেলেন না এমনটাও হতে পারে। আমি নিজে টেলিভিশন দিয়ে শুরু করেছিলাম। এবং তখন সম্পূর্ণভাবে তাতেই মনোনিবেশ করি। অনেক সময় এমন হয়েছে যে বহু ছবির অফার পেয়েছি, বম্বে থেকে অফার এসেছে যা আমি ফিরিয়ে দিয়েছি। ফলে আমার অনেক রাস্তা তখন বন্ধ হয়ে গিয়েছিল। এখন আগ্রহ দেখাচ্ছি আবার নতুন করে সব রাস্তা তৈরি হচ্ছে। তো অভিনেতা হতে গেলে বলব সব প্ল্যাটফর্মের জন্য নিজেকে প্রস্তুত রাখা জরুরি। চরিত্র বেছে করুন কিন্তু সব প্ল্যাটফর্মে কাজ করুন। আমি তো এখন থিয়েটার করি। তাই বিনোদনের সব মাধ্যমকেই গুরুত্ব দেওয়া জরুরি। এতে অনিশ্চয়তা একটু হলেও কমে।
কখনও যদি তথাগত দার সঙ্গে কাজের সুযোগ আসে করবেন?
দেবলীনা: অভিনেতা হিসেবে নিশ্চয় করব। আমি তো এটা আগেও বলেছি, আমার কাজ করতে কোনও অসুবিধা নেই।
আগামীতে আর কী কী আসছে?
দেবলীনা: ক্ষ্যাপা তো মুক্তি পাচ্ছেই। এছাড়া ‘যমালয়ে জীবন্ত মানুষ’, ‘ত্রিভূজ’ ছবি দুটো আসছে। বাংলার বাইরেও একাধিক কাজের কথা হয়ে আছে কিন্তু এখনও ফাইনাল কিছু হয়নি।
For all the latest entertainment News Click Here