দুর্বল গল্প, সলমনের ‘কিসি কা ভাই কিসি কি জান’ দেখে সিটি দেবেন ভাবলে হতাশ হবেন
প্রত্যেকেবারই ইদে ধামাকাদার কিছু নিয়ে হাজির হন ‘ভাইজান’। এবারও তার অন্যথা হল না। ইদে হাজির সলমন খান, সঙ্গে হাজির তাঁর ‘কিসি কা ভাই কিসি কি জান’। বহুদিন ধরেই সলমনের ছবির জন্য অপেক্ষা করে ছিলেন তাঁর অনুরাগীরা, এবারও ছিলেন। অবশেষে বক্স অফিসে নিজস্ব মেজাজে হাজির ‘সল্লু মিঞা’। তা কেমন হল ‘কিসি কা ভাই কিসি কি জান’? কতটা আশা পূরণ করতে পারলেন সলমন?
কী আছে ছবির গল্পে?
কমবেশি সকলেই জানেন সলমনের এই ছবির গল্প তামিল সুপারস্টার অজিত কুমারের ২০১৪ মুক্তি পাওয়া ছবি ‘ভীরাম’-এর রিমেক। ‘ভীরাম’ চিত্রনাট্য সল্লুর এতটাই পছন্দ ছিল যে তিনি ‘কভি ইদ কভি দিওয়ালি’ বানানোর কথা ঘোষণা করে দেন। পরে সেটাই নাম বদলে হয় ‘কিসি কা ভাই কিসি কি জান’।
গল্পে ভাইজান (সলমন খান) বিয়ে না করার সিদ্ধান্ত নেন কারণ তিনি চান না কোনো মেয়ে তাঁকে তাঁর প্রিয় ভাইদের থেকে আলাদা করুক। তাঁর ভাইরা হলেন মোহ (জ্যাসি গিল), লাভ (সিদ্ধার্থ নিগম) এবং ইশক (রাঘব জুয়াল)। তারই মাঝে ভাগ্যলক্ষ্মী গুন্ডামানেনি (পূজা হেগড়ে)র এন্ট্রি হয়, যিনি আদপে হায়দরাবাদের বাসিন্দা। ভাইজানের বাড়িতে ভাড়াটে হয়ে হাজির হন তিনি। ভাগ্যলক্ষ্মীই বিয়ের প্রতি ভাইজানের দৃষ্টিভঙ্গি পরিবর্তন করেন। এদিকে গুন্ডারা ভাগ্যলক্ষ্মীর পিছু নেয় তাঁদের আক্রমণ করে। কিন্তু কে এই ভাগ্যলক্ষ্মী কে? গুন্ডারা কেনই বা ভাগ্যলক্ষ্মীকে মারার চেষ্টা করছে? অন্নয় (ভেঙ্কটেশ দগ্গুবাতি) আসলে কে? শেষপর্যন্ত ‘ভাইজান’ ও ভাগ্যলক্ষ্মীর গল্প কোন দিকে মোড় নেবে? সে সব উত্তর আছে ‘কিসি কা ভাই, কিসি কি জান’ ছবিতে।
আরও পড়ুন-অ্যাকশনে ভরপুর!গ্যাংস্টার ‘চেঙ্গিজ’-এর গল্প বলতে কতটা সফল জিৎ?
বিশ্লেষণ
সলমান খানের এই ছবিকে একটি অ্যাকশন-প্যাকড ইমোশনাল ড্রামা বলা যায়। ছবির বেশকিছু দৃশ্য মন্দ নয়, বেশ ভালো, বিশেষত দ্বিতীয়ার্ধে। ভেঙ্কির সঙ্গে সলমনের বেশকিছু সংলাপ এবং আবেগঘন দৃশ্যে সল্লুর অভিনয় সত্য়িই ভালো। এই ছবিতে তেলুগু তারকা অভিনেতা ভেঙ্কটেশ দগ্গুবাতির চরিত্রটি নজর কাড়ে। ভেঙ্কটেশের নিজ চরিত্রে তাঁর পর্দায় উপস্থিতি বেশ ভালো। ছবিতে সলমন খানের সঙ্গে তাঁর দৃশ্যগুলি চোখের জলে ভিজিয়ে দেয়, ইমোশনাল করে তোলে। পূজা হেগড়েকেও দেখতে মন্দ লাগল না। ছবির বাকি অভিনেতাদের অভিনয়ও মন্দ নয়। মেট্রোর মধ্যে লড়াই এবং ভেঙ্কির বাড়িতে হামলাকারী আক্রমণের দৃশ্যগুলি ভালভাবে তুলে ধরা হয়েছে, যেমনটা বাণিজ্যিক ছবিতে হয়ে থাকে আর কি। তবে সবথেকে বেশি মন ছুঁয়েছে ইমোশনাল দৃশ্যগুলি। ছবির দৃশ্যায়নের সঙ্গে মন্দ লাগল না ব্যাকগ্রাউন্ড স্কোর।
পরিচালক ফারহাদ সামাজির এই ছবির প্রেক্ষাপট, চিত্রনাট্য ভীষণই দুর্বল। গল্পে নতুনত্বেরই বড়ই অভাব। আড়াই ঘণ্টারও কম সময়ে তিনি এই ছবিতে এত বেশি মশলা ঢেলেছেন, যে সবকিছু সুন্দরভাবে তুলে ধরতে পারেননি। একটি দৃশ্যের সঙ্গে অন্য দৃশ্যের সংযোগ বড়ই কম। ‘ভীরাম’ সঙ্গে সলমনের ছবির তুলনা উঠলে বলতেই হয় ‘ভীরাম’-এর চিত্রনাট্য এতটা দুর্বল ছিল না। মনে হয়েছে এই ছবিতে অকারণেই অনেক তারকাদের একসঙ্গে নিয়ে ফেলেছেন সলমন, তাঁদের বিশেষ কাজে লাগাতে পারেননি। যেমন এই ছবিতে ভাগ্যশ্রী বা ভূমিকা চাওলার প্রায় কিছুই করার ছিল না। প্রতিশোধ নিতে চাওয়া জগপতি বাবুকে একজন শক্তিশালী ভিলেন হিসেবে দেখানোই যেত। তবে তাঁর কাজকর্ম কথাবার্তা যেন সেই ৮০-এর দশকের ভিলেনদের কথা। সলমনের চরিত্রটিও আরও অনেক বেশি যত্ন নিয়ে বানানো উচিত ছিল। সবমিলিয়ে ছবিটিকে বড়বেশি একঘেয়ে বলেই মনে হয়েছে। যদি কেউ ভাবেন সিটি দেওয়ার জন্য ‘কিসি কা ভাই কিসি কি জান’ দেখতে হলে যাবেন, তাহলে তাঁকে নিরাশ হতেই হচ্ছে।
ভালো লাগার বলতে ‘কিসি কা ভাই কিসি কি জান’-এর গানগুলি শুনতে মন্দ লাগল না। ছবিতে ভি মণিকন্দনের সিনেমাটোগ্রাফিও মন্দ লাগল না। ছবির সম্পাদনাও আরও ভালো হতে পারত। সলমনকে দেখতে যাওয়া ছাড়া এই ছবিতে থেকে আলাদা করে আর কিছুই পাওয়ার নেই।
For all the latest entertainment News Click Here