থানাতেই জিতু-নবনীতাকে হেনস্থা,ঘটনায় গ্রেফতার ৪,পুলিশ কর্মীর বিরুদ্ধেও তদন্ত
নিমতা থানার ভিতরে পুলিশের সামনেই খুন ও ধর্ষণের হুমকির মুখে পড়তে হয়েছে, বৃহস্পতিবার ফেসবুক লাইভে এসে এমনটাই অভিযোগ করেন অভিনেতা জিতু কমলের স্ত্রী তথা অভিনেত্রী নবনীতা দাস। সেই ঘটনায় চাঞ্চল্য সোশ্য়াল মিডিয়ায়। বিরাটি থেকে সোদপুর যাওয়ার পথে দুর্ঘটনার কবলে পড়েন তারকা দম্পতি। এরপরের দুর্বিষহ অভিজ্ঞতার কথা সোশ্যাল মিডিয়ার মাধ্যমে প্রকাশ্যে আনেন জিতু-নবনীতা।
দুর্ঘটনাগ্রস্ত হওয়ার পর ঘাতক গাড়ির চালক চড়াও হয় তাঁদের গাড়ির ড্রাইভারের উপর, দাবি নবনীতার। এরপর থানায় সুবিচার পাওয়ার আশায় এলে সেখানে পুলিশ অসহযোগিতা করে বলে অভিযোগ নবনীতার। শুধু তাই নয়, থানার ভিতরেই অভিযুক্ত গাড়িচালক এবং তাঁর তিন সঙ্গী চড়াও হয়ে খুন ও ধর্ষণের হুমকি দেয় নবনীতাকে। এই ঘটনা নিয়ে ছিছিকার নেটমাধ্যমে। ঘটনায় বৃহস্পতিবার রাতেই গ্রেফতার করা হয়েছিল জিতু-নবনীতার গাড়ির সঙ্গে ধাক্কা লাগা গাড়িচালক শিবাশিস দাসকে। শুক্রবার এই মামলায় গ্রেফতার হয় শিবাশিসের তিন সঙ্গী। যাদের একজনের নাম আদিত্য প্রামাণিক। শুধু তাই নয়, নবনীতা থানার ভিতরে যে কর্তব্যরত পুলিশ অফিসারের বিরুদ্ধে হেনস্থার অভিযোগ এনেছিলেন, সেই এএসআই-এর বিরুদ্ধেও বিভাগীয় তদন্ত শুরু করা হচ্ছে বলে জানালেন ব্যারাকপুর পুলিশ কমিশনারেটের সহকারী পুলিশ কমিশনার সুবীর রায়। সব মিলিয়ে এই ঘটনায় গ্রেফতারের সংখ্যা চার জন। শুক্রবার তাদের ব্যারাকপুর আদালতে তোলা হবে।
চার জনের বিরুদ্ধে মহিলাকে অকথ্য ভাষায় গালাগালি, বেপরোয়া গতিতে গাড়ি চালানো ও ষড়যন্ত্রের অভিযোগ রয়েছে। এদিন ব্যারাকপুর পুলিশ কমিশনারেটের সহকারী পুলিশ কমিশনার সুবীর রায় জানান, ‘নবনীতা দেবীর অভিযোগপত্র জমা দেওয়ার পরই তদন্ত শুরু করে দেওয়া হয়েছে। নিমতা থানার ওসি যথেষ্ট তৎপরতার সঙ্গে বিষয়টি সামলেছেন।’ এরপর সুবীর বাবু যোগ করেন, ‘নিমতা থানার কর্তব্যরত যে এএসআই পরশুরাম বরদলুইয়ের বিরুদ্ধে দুর্ব্যবহারের অভিযোগ আনেন নবনীতা, খুব শীঘ্রই তাঁর বিরুদ্ধে বিচারবিভাগীয় তদন্ত শুরু করা হবে।’
পুলিশের এই ততপরতা নিয়ে জিতু এক সংবাদমাধ্য়মকে জানিয়েছেন, গোটা ঘটনার পর থেকেই অসুস্থ নবনীতা। তবে পুলিশের এই পদক্ষেপে খুশি তাঁরা। শুক্রবারও সোশ্যাল মিডিয়ায় গতকালের ঘটনার বেশকিছু ভিডিয়ো ফুটেজ প্রকাশ্যে আনেন নবনীতা। সেখানে অভিযুক্ত চালকের সঙ্গীকে বলতে শোনা গিয়েছে, ‘ডেথ করে দেব’।
বৃহস্পতিবার ঠিক কী ঘটেছিল?
নবনীতার বক্তব্য অনুযায়ী, বৃহস্পতিবার দুপুরে জিতু এবং তিনি তাঁদের গাড়ি করে নিমতা এলাকা দিয়ে যাচ্ছিলেন। তাঁর আগে নাকি নবনীতা রক্ত দিয়েছিলেন। সেখানে তাঁদের গাড়িকে ধাক্কা মারে একটি পণ্যবাহী গাড়ি। সেখান থেকেই ঝামেলার সূত্রপাত হয়। নবনীতা-জিতুর গাড়ির চালক প্রতিবাদ করলে, প্রথমে নাকি ওই মালবাহী গাড়ির চালক তাঁকে চাপা দিতে আসে। তার পরে গণ্ডগোলের জেরে দুই পক্ষ নিমতা থানায় যায়। থানাতে প্রথমে নবনীতার গাড়ির চালককে হেনস্থা করতে থাকে পণ্যবাহী গাড়ির লোকজন। নবনীতা সেখানে প্রতিবাদ করতে গেলে, হেনস্থা হয় তাঁরও।
ফেসবুক লাইভ ভিডিয়োয় নবনীতার অভিযোগ ছিল, পুলিশের সামনেই তাঁদের খুনের হুমকি দেওয়া হয়। তাঁকে দেওয়া হয় ধর্ষণের হুমকিও। ভিডিয়োয় নবনীতা কাঁদতে কাঁদতে জানান, তিনি থানা থেকে বেরোতেই ভয় পাচ্ছেন। কারণ তাঁকে হুমকি দিয়ে বলা হয়েছে, থানা থেকে বেরোলে, নাকি তাঁর উপর অভিযুক্তরা চড়াও হবে।
সূত্রের খবর, এই ঘটনায় জিতু কামালের গাড়ির চালক ও গাড়ির আরোহীদের বিরুদ্ধে অভব্য আচরণ এবং গাড়ি ভাঙচুরের জন্য পাল্টা অভিযোগ দায়ের করা হয়েছে। পুলিশ সূত্রে খবর, দুটি অভিযোগের প্রেক্ষিতেই তদন্ত করা হবে। তবে এই ঘটনার পর সোশ্যাল মিডিয়ায় ক্ষুব্ধ জনতা। প্রশ্ন উঠছে, তারকাদের সঙ্গেই যদি পুলিশ এমন আচরণ করে, তাহলে সাধারণ মানুষের অবস্থান কোথায়?
For all the latest entertainment News Click Here