ডক্টর বক্সী রিভিউ : ভার্চুয়াল রিয়ালিটির মুখোমুখি, অপরাধীদের ‘মগজধোলাই’ পরমব্রতর
‘একজন অপরাধীর ঠিক কখন সাজা হয় জানেন? যখন সে নিজে উপলব্ধি করে সে অপরাধ করেছে।’ এমনটাই মনে করেন ‘ডক্টর বক্সী'(পরমব্রত চট্টোপাধ্যায়)। তিনিও নিজের সেই উপলব্ধি থেকেই সেই পথে পথ হাঁটা শুরু করে দিলেন। অপরাধীদের ধরে ধরে পুরলেন তাঁর নিজের সেট আপ ‘বক্সীতে’, যার আসল অর্থ Brain Altering Key by Simulating Hyper-real Image। পাতি বাংলায় যাকে বলে কিনা ‘মগজ ধোলাই’। এই শব্দটা নিশ্চয় সকলেরই শোনা। ১৯৮০ সালে মুক্তি পাওয়া ‘হীরক রাজার দেশে’ ছবিতে সত্যজিৎ রায় দেখিয়েছিলেন। হীরক রাজাও অপরাধীকে অন্যকোনও শাস্তি দিতেন না। কেউ তাঁর বিরোধিতা করলে মেশিনে ভরে চলত মগজ ধোলাই। যদিও সেক্ষেত্রে হীরক রাজার উদ্দেশ্য ছিল আলাদা। ‘ডক্টর বক্সী’ ছবিতেও ঘুরপথে আরও একবার মগজ ধোলাই-এর কথাই বললেন পরমব্রত।
কিন্তু কে অপরাধী? কী-ইবা তাঁর অপরাধ? এর ইঙ্গিত তো ছবির ট্রেলারেই মিলেছিল। মূলত মেডিক্যাল দুর্নীতির কথাই উঠে এসেছে এই ছবিতে। গোটা ছবি জুড়ে সেই দুর্নীতির জটে আবর্তিত হয়েছেন মৃণালিনী (শুভশ্রী গঙ্গোপাধ্যায়) আদিত্য (বনি সেনগুপ্ত) আর ডক্টর বক্সী (পরমব্রত চট্টোপাধ্যায়)। চরিত্রগুলি নিজেদের জালে নিজেরাই ফেঁসেছেন। সেবার সঙ্গে যখন ব্যবসা জুড়ে যায়, আর তাতে সেবাটা গৌণ হয়ে গিয়ে ব্যবসা ও লাভই প্রধান হয়ে ওঠে, সেখানে দুর্নীতি ঢুকতে বাধ্য। ছবিতে সেই মেডিক্যাল, চিকিৎসা ব্যবস্থার পাশাপাশি, আরও এক অন্ধকার জগতের কথা সমান্তরালভাবে উঠে এসেছে।
ছবিতে ‘ডক্টর বক্সী'(পরমব্রত চট্টোপাধ্যায়)কে বলতে শোনা গিয়েছে, ‘We can destroy what’s written, but we can unwrite it। পরমব্রত-র এই ডায়ালগটি আসলে অ্যান্থনি বার্জেসের লেখা উপন্যাস ‘অ্যা ক্লকওয়ার্ক অরেঞ্জ’-এর ডায়ালগ। যেটা নিয়ে ১৯৭১ সালে সিনেমাও মুক্তি পেয়েছিল। সেখানেও উঠে এসেছিল বিকৃত মানসিকতার অধিকারী যুবক অ্যালেক্স ডিলার্জ-এর চরিত্রটি। তাঁকেও প্রথমে কারাগারে পরে লুডোভিকো মেডিকেল সেন্টারে পাঠানো হয়। যেখানে আসামীদেরকে লুডোভিকো কৌশলের মাধ্যমে খারাপ থেকে ভাল মানুষে পরিণত করা হয়। পরমব্রতও এই ছবিতে খানিকটা সেই পথেই হেঁটেছেন। অপরাধীদের ‘ভার্চুয়াল রিয়ালিটি’র সম্মুখীন করেছেন তিনি। তবে কীভাবে ছবির গল্প এগিয়েছে, তা বলে দিলে তো ‘স্পয়লার’ হয়ে যায়। তবে এটুকু বলা যায়, এই ছবিতে যেমন মেডিক্যাল দুর্নীতির কথা রয়েছে, তেমনই রয়েছে অপরাধ জগত ও অপরাধীকে শাস্তি দেওয়ার কথা, রয়েছে ভর্চুয়াল রিয়ালিটির জগত, আশ্রয় নেওয়া হয়েছে কল্প বিজ্ঞানের। সবমিলিয়ে ছবিটি কিছুটা জটিল হলেও মন্দ নয়।
তবে বিষয়বস্তু যেহেতু জটিল, তাই সিনেমা দেখতে ও বুঝতে গিয়ে অনেক ক্ষেত্রেই দর্শক হোঁচট খেতে পারেন। কিছু জায়গায় পরিচালক আরও একটু ডিটেলিং-এ গেলে হয়ত দর্শকদের বুঝতে কিছুটা সুবিধা হত। গোটা সিনেমার উদ্দেশ্য স্পষ্ট হলেও মেডিক্যাল দুর্নীতিকে বিষয়বস্তু করে তৈরি এই ছবিতে অনেকক্ষেত্রেই রহস্যকেই বেশি প্রাধান্য দেওয়া হয়েছে। তবে একটা কথা বলতেই হয় কম বাজেটের মধ্যে এই ছবিটিকে যে ‘লুক অ্যান্ড ফিল’ দেওয়া হয়েছে, যেভাবে ভিএফএক্স ব্যবহার করা হয়েছে তা প্রশংসার দাবি রাখে বৈকি। বাজেট কম হওয়া সত্ত্বেও কীভাবে ভিএফএক্স সাহায্য নিয়ে বলিউডি স্টাইলে সিনেমাকে তুলে ধরা যায়, তা এই ছবি থেকে অবশ্যই শেখার।
ছবিতে পরমব্রত চট্টোপাধ্যায়, শুভশ্রী গঙ্গোপাধ্যায়ের অভিনয় নিয়ে নতুন করে কিছু বলার নেই। ওঁরা নিজস্ব দক্ষতায় চরিত্রগুলিকে সুন্দরভাবে তুলে ধরেছেন। বনি সেনগুপ্তর শুভশ্রী ও পরমব্রতক যোগ্য সঙ্গত দিয়েছেন, তিনিও নিজের চরিত্রে পারফেক্ট। প্রশংসার দাবি রাখে প্রসেনজিৎ চৌধুরীর ক্যামেরা, নবারুণ বোসের আবহসঙ্গীত এবং পবিত্র জানার সম্পাদনা সপ্তাশ্ব বসু-র ‘ডক্টর বক্সী’ছবিটিকে অনেক অংশেই এগিয়ে দিয়েছে। তবে পরিচালনার দিক থেকেও সপ্তাশ্ব বসু-র ‘নেটওয়ার্ক’, ‘প্রতিদ্বন্দ্বী’ ছবিগুলির থেকে এই ছবিটি যে অনেক পরিণত তা বলতেই হয়।
For all the latest entertainment News Click Here