ঠাকুমার কথা ভীষণ মনে পড়ে, সবকিছু একসঙ্গে মেখে খাইয়ে দিতেন, সেটাও অমৃত: শুভশ্রী

সবুজ ট্রাডিশনাল শাড়ি, আর কানে ভারী দুল, রবিবার ইন্দুবালা ভাতের হোটেলের প্রচারে এভাবেই হাজির হয়েছিলেন শুভশ্রী গঙ্গোপাধ্যায়। এদিন একটু যেন বেশিই গর্জাস দেখাচ্ছিল ‘ইন্দুবালা’ শুভশ্রীকে। কথাটা বলতেই মুখে ধরা পড়ল সেই প্রাণখোলা হাসি, পাল্টা ধন্যবাদ জানাতেও ভুললেন না। শাড়ির প্রসঙ্গ ধরেই শুরু হল কথাবার্তা…

ইন্দুবালার প্রমোশনের জন্য শুধুমাত্র শাড়িকে কেন বেছে নিয়েছেন?

শুভশ্রী: প্রমোশনে শাড়ি-ই পরছি, কারণ ‘ইন্দুবালা’র ওই বাঙালিয়ানাটা আমার মধ্যে বাঁচিয়ে রাখতে। হয়ত ওই সময়টাকে তুলে ধরতে পারব না, তবে ইন্দুবালার ওই বাঙালিয়ানাটা থেকে যেন এখনই বের হয়ে না যাই। সেটা ধরে রাখতেই শাড়ি পরা।

শুভশ্রী থেকে ‘ইন্দুবালা’ হয়ে ওঠার জার্নিটা কেমন?

শুভশ্রী: আমার নিজের একটা প্রস্তুতি ছিলই, সব চরিত্রের ক্ষেত্রেই সেটা থাকে। চিত্রনাট্যটা বারবার পড়ি। পরিচালক দেবালয় (ভট্টাচার্য) কল্লোলদা (লেখক কল্লোল লাহিড়ী)র সঙ্গে বারবার বসেছি। তারপর যখন সেটে যাই, সেখানে মেকআপ করার পর, পুরো পরিবেশের মধ্যে দিয়ে কখন যে ‘ইন্দুবালা’ হয়ে গিয়েছিলাম, নিজেও জানি না।

ইন্দুবালা বাংলাদেশ থেকে কলকাতায় এসেছিলেন, শুভশ্রীকেও তো একদিন বর্ধমান থেকে কলকাতায় আসতে হয়েছিল, কোনও মিল পান?

শুভশ্রী: আমার মনে হয় না সেটা। কারণ, দেশ ছেড়ে অল্প বয়সে বিয়ে করে কলকাতায় চলে আসা, ফিরে যেতে না পারার অনুভূতিটা অনেকটা কঠিন। আর আমি তো বর্ধমান থেকে কলকাতায় এসেছিলাম কেরিয়ার গড়তে। আর স্ট্রাগলের কথা যদি বলেন, সেটা তো সবসময়, সবক্ষেত্রেই থাকে। পরিস্থিতি, সময়ের নিরিখে স্ট্রাগলের ধরনটা শুধু বদলে যায়।

বাঙাল না ঘটি?

শুভশ্রী: আমি ঘটি (হাসি)

বাঙাল ভাষাটা কীভাবে রপ্ত করেছিলেন?

শুভশ্রী: আমি আসলে একজন শিল্পী, তাই শিল্পের প্রয়োজনে আমি কোথাও বাঙাল, কোথাও ঘটি, কোথাও রাজস্থানী, গুজরাতি, মুসলিম, সবকিছুই হতে পারি। যে পাত্রে রাখবে সে পাত্রেই থাকব। সর্বপ্রথম আমার পরিচয় আমি নারী, আমি একজন অভিনেত্রী। আমি সৌভাগ্যবান যে এক এক সময় এক এক চরিত্র হয়ে বাঁচতে পারি। আর ভাষা, উচ্চরণের কথা যদি বলো সেটা আমায় দেবালয় অনেকটা সাহায্য করেছেন। ঠিক কীভাবে উনি চাইছেন, সেভাবেই কথা বলেছি। ধর্মযুদ্ধের সময় আমাকে একটু অন্যরকম বাংলা ভাষায় কথা বলতে হয়েছিল, তখন একটা ক্লাস করেছিলাম, সেই অভিজ্ঞতা এখানে কাজে লাগিয়েছি।

‘ইন্দুবালা ভাতের হোটেল’ ওয়েব সিরিজটি কতটা মূল উপন্যাসের সঙ্গে সামঞ্জস্য রেখে তৈরি?

শুভশ্রী: অডিও ভিজুয়্যাল মাধ্যমে একটা উপন্যাসের গল্প তুলে ধরতে যেটুকু বদল করতে হয়, সেটুকুই করা হয়েছে। বাকিটা উপন্যাসটিকে সামনে রেখেই পুরো সিরিজটি বানানো।

গল্পে রান্না আর স্মৃতি মিলে মিশে একাকার হয়? রান্নার কথা এলে আপনার কার কথা মনে পড়ে?

শুভশ্রী: রান্না বলতেই আমার ঠাকুমার রান্নার কথা মনে পড়ে, মায়ের হাতের রান্নার কথা মনে পড়ে। আমার ঠাম্মার কথা যদি বলি, ওঁর হাতের স্পর্শটাই গুরুত্বপূর্ণ ছিল। সব কিছু একসঙ্গে মেখে খাইয়ে দিলেও সেটা আমার কাছে অমৃত। ওই স্মৃতি আমার কাছে স্বযত্নে সারাজীবন রাখা থাকবে।

শুভশ্রী কি রান্না করতে পছন্দ করেন?

শুভশ্রী: আমি আসলে রান্নাটা একেবারেই করি না। এটা খুব একটা ভালো লাগে না (হাসি)।

নকশাল পরিয়ড, দেশভাগের সময়টা ট্রেলারে দেখা গিয়েছে, ওই সময়কার কথা পরিবারের বড়দের মুখে কখনও শুনেছেন?

শুভশ্রী: নকশাল পরিয়ডের কথা তো শুনেছি। আর দেশভাগের সময়ের কথাও শুনেছি। তবে আমাদের পরিবার যেহেতু প্রথম থেকেই এদেশেই রয়েছে, তাই সেই সময়ের আলাদা করে কোনও স্মৃতি, অভিজ্ঞতা কারোর ছিল না। যা কিছু শুনেছি সব ঠাকুমা, ঠাকুরদার কাছ থেকে। তবে তখন যতটা না অনুভব করতে পেরেছি, এই উপন্যাসটা পড়ার পর সেই অনুভূতিটা আরও গাঢ় হয়েছে।

ঠাকুমার সঙ্গে কাটানো কোন স্মৃতি বাঁচিয়ে রাখতে চান?

শুভশ্রী: ঠাকুমা, ঠাকুরদার সঙ্গে কাটানো সব স্মৃতিই আমার কাছে গুরুত্বপূর্ণ, সবটাই নিজের মধ্যে বাঁচিয়ে রাখতে চাই। যদি কিছু ভুলতে চাই তা হল ওঁদের চলে যাওয়ার মুহূর্তটা।

‘ইন্দুবালা’কে শুভশ্রী কীভাবে বাঁচিয়ে রাখতে চাইবেন?

শুভশ্রী: আসলে আমি যেহেতু মেথড অ্যাক্টর, তাই সবকিছুর মধ্যে দিয়ে কখন যে ইন্দুবালা হয়ে গিয়েছিলাম তা বুঝি নি। এই ‘ইন্দুবালা’ আমার মধ্যে সারাজীবন বেঁচে থাকবেন।

কেরিয়ারে ১৬ বছর কাটিয়ে ফেলেছেন, এখন ইচ্ছা করেই কি অন্যরকম চরিত্র বেছে নিচ্ছেন?

শুভশ্রী: এখন সিনেমা হোক কিংবা ওটিটি গল্প বলার ধরনটা বদলে গিয়েছে। মানুষের ভাবনা বদলে গিয়েছে। পৃথিবীর সমস্ত ভাষার ছবি ঘরে বসে চাইলেই আমরা দেখতে পারি। যে সময় আমি ‘চ্যালেঞ্জ’, ‘পরাজয়’ করেছি, তখন ওটিটি ছিল না। তাই সময়ের সঙ্গে তাল মিলিয়ে চলতে গেলে তো অন্যধরনের চরিত্রই বাছতে হবে।

বাণিজ্যিক ছবি বলতে সাধারণত যা বুঝি, সেধরনের ছবিতে কি শুভশ্রী আবারও ফিরতে চাইবেন?

শুভশ্রী: হ্যাঁ, কেন নয়! চিত্রনাট্য, চরিত্র ভালো লাগলে অবশ্যই করব। যে ছবি আমায় শুভশ্রী বানিয়েছে, সেধরনের ছবি কেন করব না!

একসময় SVF-এর ছবির হাত ধরেই কেরিয়ার শুরু, এখন আবার একই প্রযোজনা সংস্থার হাত ধরে OTT-তে পা রাখছেন, কতটা বদল চোখে পড়ছে?

শুভশ্রী: অনেক বদলে গিয়েছে। সেসময় ওয়াটার লু স্ট্রিটে ছোট্ট একটা অফিস ছিল। সেখানেই সব কাজ হত। আর এখন দু’তলা জুড়ে অফিস। এত লোক কাজ করেন। অনেক বেশি পেশাদারিত্ব, কর্পোরেট হয়েছে বিষয়টা। প্রায় ১১ বছর আগে SVF-র সঙ্গে কাজ করেছি, এতদিন পর পরিবর্তন তো হবেই।

কেরিয়ারে পরিচালক স্বামী রাজ চক্রবর্তীর কতটা সাপোর্ট পান?

শুভশ্রী: রাজ আর পরিবারের সাপোর্ট আমার কেরিয়ারে অনেকটা ভূমিকা রাখে। এটা না থাকলে এত মনপ্রাণ দিয়ে কাজ হয়ত করতে পারতাম না। রাজ নিজে পরিচালক, ট্যালেন্টেড, তাই ও সব ট্যালেন্টকে সম্মান দিতে জানে। মাঝে মধ্যে আমার মাতৃত্ববোধ থেকে একটা অপরাধবোধ কাজ করে, মনে হয় বাচ্চাকে রেখে এতক্ষণ বাইরে থাকছি! তখন রাজ-ই আমাকে মোটিভেট করে, তখন আবারও ফ্রেস মন নিয়ে কাজ শুরু করি।

প্রস্থেটিক মেকআপ করে শ্যুটিং করাটা কতটা কঠিন ছিল?

শুভশ্রী: ‘ইন্দুবালা’র জার্নিটা এতটা কঠিন, তাই কী পরিস্থিতিতে শ্যুট করছি, মুখে প্রস্থেটিক মেকআপের ভার, গরম লাগছে, এসব কিছুই মনে হত না। চরিত্রের মধ্যে ডুবে থাকতাম। প্যাক আপের পর যখন শুভশ্রী হয়ে বাড়ি ফিরতাম তখন কষ্ট হত। মনটা ভারী হয়ে থাকত। এছাড়া আর কোনও সমস্যার কথা মনে হয়নি।

শুভশ্রী কি শেষপর্যন্ত ‘ইন্দুবালা’র থেকে বেরিয়ে আসতে পেরেছেন?

শুভশ্রী: হ্যাঁ, এখন সেটা পেরেছি। (হাসি)

আপনি কেরিয়ারে স্বামী রাজ চক্রবর্তীর সাপোর্ট পাচ্ছেন, অনেক মহিলাই সেটা পান না, কী বার্তা দেবেন?

শুভশ্রী: এটাই বলব যে, জেন্ডার ইকুয়ালিটি মানে কিন্তু শুধু পুরুষ নন, নারীকেও সমান সম্মান দেওয়া উচিত। সব কাজ যেমন শুধু পুরুষরা নন, মহিলারাও সমান দায়িত্ব নিয়ে করেন, তাই একইভাবে সম্মানটাও নারী-পুরুষ উভয়ের সমান প্রাপ্য। বাড়ির মহিলাদের সম্মান দেওয়াটাই আসলে স্মার্টনেস।

 

For all the latest entertainment News Click Here 

Read original article here

Denial of responsibility! TechAI is an automatic aggregator around the global media. All the content are available free on Internet. We have just arranged it in one platform for educational purpose only. In each content, the hyperlink to the primary source is specified. All trademarks belong to their rightful owners, all materials to their authors. If you are the owner of the content and do not want us to publish your materials on our website, please contact us by email – [email protected]. The content will be deleted within 24 hours.