ট্রেলার লঞ্চ আর ককটেল পার্টিতে গেলেই যৌন হেনস্থার ঘটনা মিটে যাবে?: স্বস্তিকা

৩০ জুন মুক্তি পাচ্ছে স্বস্তিকা মুখোপাধ্যায়-পরমব্রত চট্টোপাধ্যায়ের ছবি ‘শিবপুর’। সম্প্রতি মুক্তি পেয়েছে ছবির ট্রেলার। ‘শিবপুর’ অবশ্য বহুদিন ধরেই চর্চায় রয়েছে। ছবির প্রযোজকের বিরুদ্ধে যৌন হেনস্থার অভিযোগ এনেছিলেন স্বস্তিকা। আর সেই ঘটনার জেরেই ট্রেলার লঞ্চের অনুষ্ঠানেও যান নি অভিনেত্রী। তবে প্রযোজকের বিরুদ্ধে অভিযোগ থাকলেও শিবপুর ছবির প্রচার কিংবা ছবির স্বার্থে সাক্ষাৎকারে ‘না’ নেই স্বস্তিকার। মুম্বই থেকে ফোনে স্বতঃস্ফূর্ত ভাবেই হিন্দুস্তান টাইমস বাংলার সঙ্গে কথা বললেন অভিনেত্রী।

কথার শুরুতেই স্বস্তিকা জানালেন ‘এই মুহূর্তে আমার দুটো হিন্দি ছবির কাজ চলছে। তাই মুম্বইতেই রয়েছি। তবে এর বেশি এই ছবি নিয়ে কিচ্ছু বলতে পারব না, এই ছবিগুলি নিয়ে কথা বলা এক্কেবারেই নিষেধ’।

‘শিবপুর’-এ সাধারণ গৃহবধূ থেকে ‘মাফিয়া কুইন’ হয়ে ওঠা, চরিত্র নিয়ে কী বলবেন?

স্বস্তিকা : মন্দিরা একটা ছাপোষা মধ্যবিত্ত বাড়ির গৃহবধূ, যে সকালে উঠে শ্বশুরমশাইকে চা দেয় , জলখাবার বানায়, মেয়ের স্কুলের টিফিন, বরের জন্য ভাত, ডাল, আলু পোস্ত, ঝিঙের চচ্চরি রাঁধে। আবার বিকেলে ও রাত কে কী খাবে, সেটাও দেখাশোনা করে। সংসার সামলানোই ওঁর মূল কাজ। তবে স্বামী খুন হওয়ার পর সেই বিরোধের সঙ্গে পাল্লা দিয়ে মধ্যবিত্ত ছাপোষা মন্দিরা হয়ে ওঠে ‘গ্যাংলর্ড’।

ট্রেলারে একটা পুলিশকর্মীকে বলতে শুনবেন, ‘ডায়েরিতে যদি নাম লেখান, তাহলে বাড়িতে হামলা হবে’। এটা আমরা সবাই জানি, সমাজে যাঁরা ক্ষমতাশালী, তাঁদের সঙ্গে লড়াই করতে গেলে কীভাবে প্রতিটা স্তরে লড়াই করতে হয়। এটা একটা তেমনই লড়াইয়ের গল্প। আর এখানে আমার চরিত্রের জার্নিটা ভীষণ ইনক্রেডিবল। চরিত্রের অনেক স্তর আছে। মন্দিরার চরিত্রের পুরো গ্রাফটাই কাটারির মতো ধারালো। সংসারের বাইরে কিছুই না জানা এক মহিলা কীভাবে লড়াইয়ে নামে, আবার সে যুদ্ধে জয়ীও হয়।

‘শিবপুর’ আপনার কাছে কতটা স্পেশাল?

স্বস্তিকা : ভীষণই স্পেশাল। অভিনেত্রী হিসাবে যে চরিত্রই করেছি, খেয়াল রেখেছি, সেটা যেন নতুন চরিত্র হয়। যেভাবে মানুষ আমাকে আগে দেখেননি, সেটা মাথায় রেখেই চরিত্র বাছি। নিজেকে এক্কেবারেই রিপিট(পুণরাবৃত্তি) করতে চাইনা। এখানে মন্দিরার মধ্যে একটা ‘rawness’ আছে। যে আবেগপ্রবণ, আবার অকুতোভয়। নিজেকে যোদ্ধার জায়গায় নিয়ে যাওয়ার জন্য অনুশীলন করে। বন্দুক চালানো থেকে সবই শেখে। যে হাতে খুন্তি ধরত, সে হাতেই বন্দুক চালায়।

ছবির জন্য তাহলে বন্দুক চালাতে হয়েছে?

স্বস্তিকা : হ্যাঁ, মন্দিরার হাত ধরে আমারও এই অভিজ্ঞতা হয়েছে। আগে কখনও আমিও এটা করিনি। তাই ছবির জন্য বন্দুক চালাতে গিয়ে একটু তো অনুশীলন করতেই হয়েছে। শ্যুটিংয়ের সময় বারুদের ধোঁয়া গলায় ঢুকে খুব সমস্যা হয়েছিল। আমার ভয়েস চোকড হয়ে যায়। যেকারণে ২-৩দিন ভীষণ সমস্যা হয়েছে। ছবিতে বহু অ্যাকশন দৃশ্য রয়েছে। সমাজের এমন পরিস্থিতির কথা সিনেমায়, টিভিতে দেখেছি, সৌভাগ্যক্রমে মুখোমুখি তো কখনও হয়নি। শিবপুরের জন্য সেটার কিছুটা অভিজ্ঞতা হয়েছে।

ছবিতে তো বাস্তব ঘটনাই উঠে এসেছে…

স্বস্তিকা : সেটা তো অবশ্যই। ৮০-র দশকে শিবপুরে গ্যাং-ওয়ার খুবই চূড়ান্ত পর্যায়ে পৌঁছেছিল। শ্য়ুটিং করতে গিয়ে স্থানীয়দের সঙ্গে কথা বলে অনেক কথাই জেনেছি। সাধারণ মানুষকে সত্যিই হেনস্থা হতে হয়েছিল। বিষয়টা খুবই বাস্তব। সেট ভেবেও রোমাঞ্চকর লেগেছিল।

<p>‘মন্দিরা’ স্বস্তিকা</p>

‘মন্দিরা’ স্বস্তিকা

স্বস্তিকার সঙ্গে মন্দিরার কি কোনও মিল আছে?

স্বস্তিকা : (একটু ভেবে) নাহ স্বস্তিকা মন্দিরার মতো নয়। তবে যেটা মিল সেটা হল মন্দিরার মতো আমিও বিশ্বাস করি, আবেগপ্রবণ, অকুতোভয় কিংবা শক্তিশালী হওয়া, সবই একই ব্যক্তিত্বে সম্ভব। সাধারণ কেউ আবেগপ্রবণ হলেই আমার ‘ভীরু’র তকমা দিই সেটা কিন্তু নয়। মন্দিরা মা, সেই ইমোশন যেমন আছে, তেমন প্রতিশোধ নেওয়ার জন্য সে লড়াইও করে। আমার খুশি যে মন্দিরা যেকোনওভাবেই হোক প্রতিশোধ নিতে পেরেছেন। মন্দিরার এই জয়টা যেন আমারই ছিল। যাঁরা আমার ক্ষতি করেছেন, তাঁদের কিছু ক্ষতি অন্তত আমিও করতে পারলাম।

মন্দিরার মতো বাস্তবেও বহু মহিলাকে এমন কঠিন পরিস্থিতির মধ্যে দিয়ে যেতে হয়…

স্বস্তিকা : মহিলাদের তো সবসময়ই লড়াই করতে হয়। ২০২৩-এ দাঁড়িয়েও আমাদের দেশে ধর্ষণের হার বেশি। ট্রেনে, বাসে, ট্রামে শ্লীলতাহানির মুখে পড়তে হয়। মহিলাদের হেনস্থা করা আসলে সহজ। আইনতভাবে দৃষ্টান্তমূলত শাস্তি যেহেতু কেউ পাননি, তাই মানুষ মনে করে এটা কোনও বিষয় নয়। সম্প্রতি কুস্তুিগিরদের প্রতিবাদের ঘটনা ঘিরেই তো কত কিছু হল, সেটা তো অনেক বড় উদাহরণ। কেউ পাশে দাঁড়ায়, কেউ দাঁড়ায় না। যাঁরা দেশের জন্য পদক আনছেন, তাঁরাই দেশে হেনস্থার শিকার। সত্যিই কিছুই বলার নেই! মহিলাদের হয়ত এই যুদ্ধটা করে যেতে হবে। আগেও হয়েছে, এখনও হচ্ছে, পরের প্রজন্মকেও হয়ত যুদ্ধ করতে হবে।

‘শিবপুর’-এ কাজ করতে গিয়েও আপনিও তো হেনস্থার শিকার। যদিও নির্মাতারা বলছিলেন ‘মিটে গেছে’।

স্বস্তিকা : কীভাবে মিটে যাবে! ইমেলে নগ্ন ছবি পাঠিয়ে বলেছেন সোশ্যাল মিডিয়ায় ছড়িয়ে দেবেন। আমার ম্য়ানেজারকে স্কুটারে অ্যাক্সিডেন্ট করিয়ে মেরে ফেলবেন। এই তথ্যগুলো রয়েছে কিন্তু। মানুষের সামনে তুলেও ধরা হয়েছিল। তাহলে সব মিটে কীভাবে যাবে! আমার সম্মান নষ্টের পর কীভাবে সবকিছু ঠিক হবে! ট্রেলার লঞ্চে গিয়ে ককটেল ডিনার আর পার্টি করলে সব মিটে যাবে? যদিও এরপরেও আমি কিন্তু কাজের প্রতিশ্রুতি থেকে আমি সরি নি। ট্রেলার থেকে শুরু করে সবই সোশ্যাল মিডিয়ায় শেয়ার করেছি। ছবির স্বার্থে যা করার করব। তবে তার অর্থ এই নয়, যৌন হেনস্থার ঘটনা আমি ভুলে গেলাম। আমাকে যদি গালাগাল দিত, তাহলে নাহয় ভাবতে পারতাম যা হওয়ার হয়েছে, ভুলে গেলাম। তবে আমার ছবি বিকৃত করে পর্ন সাইটে তুলে দেওয়ার কথা বলা হয়েছিল, ভুলে কীভাবে যাব!

বলা হয়েছিল যদি মার্কেটিং প্ল্যানে আমি অংশ না নিই, তাহলে আমার সঙ্গে এগুলো ঘটবে। অথচ সেই মার্কেটিং প্ল্যান আমি আজও পেলাম না। এটা সবথেকে হাস্যকর। ক্রিমিন্যাল অফেন্স আর ভুল বোঝাবুঝি এক নয়। এই যে টিজার, ট্রেলার প্রযোজনা সংস্থার তরফে শিল্পীদের কাছে পাঠানো হয়, সেগুলিও আমি পাইনি। আমার সোশ্যাল মিডিয়া টিম এগুলো ইউটিউব থেকে ডাউনলোড করে শেয়ার করেছে।

পরিচালককে সমর্থন করেছিলেন বলেই নাকি এত সমস্যা?

স্বস্তিকা : একটা ছবি তো পরিচালকের। যাই ঘটুক ছবিটা পরিচালকেরই থাকবে। আর প্রযোজকের সঙ্গে পরিচালকের কী সমস্যা তার জন্য আমায় কেন হেনস্থা করা হবে? যেটা ঠিক কথা সেট আমি বলবই। আর এটা খুবই অদ্ভুত যে একটা ছবির ট্রেলার লঞ্চ হচ্ছে, সেখানে পরিচালককেই ডাকা হল না।

<p>স্বস্তিকা মুখোপাধ্যায়</p>

স্বস্তিকা মুখোপাধ্যায়

যৌন হেনস্থার ঘটনায় বাংলা ইন্ডাস্ট্রির কাউকেই নাকি পাশে পাননি?

স্বস্তিকা : কোনও অন্যায় ঘটলে সেটা নিয়ে কথা বলার জন্য আমি কারোর উপর নির্ভর করিনা। কাউকে পাশে চাই, এই ভাবনাটা অনেক আগেই সরিয়ে ফেলেছি। যতক্ষণ না নিজেদের সঙ্গে ঘটনা ঘটে, কেউই কারোর পাশে দাঁড়ান না। এখানে আমি কোনওদিনই কাউকে পাশে পাইনি, কারণ কোনওদিনই কোনও লবিতে ছিলাম না। আমার মাথায় কেউ কোনওদিন ছাতা ধরেনি। লোকজনের সঙ্গে আমি চা-কফিও খেতে যাইনা। এরপরেও যদি ২৩ বছর ধরে টিকে থাকতে পারি, তাহলে বাকিটাও পারব।

আপনি বলছেন, তবে অনেকেই এধরনের ঘটনায় মুখ খোলেন না, চেপে যান..

স্বস্তিকা : না বলার অনেক কারণ আছে, কেউ কিছু বললেই সেটাকে বিতর্কের তকমা দেওয়া হয়। এতদূর পৌঁছানোর পর আমি এখন কিছু বললে মানুষ শোনেন, যাঁরা নতুন কাজ করতে আসেন, তাঁদের সে সাহস থাকে না। সেই ভেবেই ওঁরা হয়ত কথা বলেন না।

কলকাতা আর মুম্বই ইন্ডাস্ট্রির পার্থক্য কোথায়?

স্বস্তিকা : পেশাদারিত্ব। কলকাতায় শুধু আমাদের ইন্ডাস্ট্রিতে নয়, সবক্ষেত্রেই একটা বিষয় কাজ করে যে ‘ম্যানেজ হয়ে যাবে।’ ম্যানেজ হয়ে যাবে, এই ভাবনা নিয়ে মুম্বইতে কেউ কাজ করেন না। এখানে সকলেই যে যার কাজ নিয়ে সচেতন।

সাক্ষাৎকারের পরবর্তী অংশ দ্বিতীয় পার্টে আসছে…

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

For all the latest entertainment News Click Here 

Read original article here

Denial of responsibility! TechAI is an automatic aggregator around the global media. All the content are available free on Internet. We have just arranged it in one platform for educational purpose only. In each content, the hyperlink to the primary source is specified. All trademarks belong to their rightful owners, all materials to their authors. If you are the owner of the content and do not want us to publish your materials on our website, please contact us by email – [email protected]. The content will be deleted within 24 hours.