টাইব্রেকারে মনে রাখতে হয় সেটপিসের ব্যাকরণ- ATKMB-র সাফল্যের রহস্য ফাঁস ফেরান্দোর
সোমবার ঘরের মাঠে আইএসএল সেমিফাইনালের দ্বিতীয় লেগে টাই ব্রেকারে হায়দরাবাদ এফসি-কে হারালেও ৭৫ মিনিটের পর থেকেই তাঁর দলের ছেলেরা বেশ ক্লান্ত হয়ে পড়েন বলে জানান এটিকে মোহনবাগান কোচ জুয়ান ফেরান্দো। তবু যে অতিরিক্ত সময়ে প্রতিপক্ষকে আটকে রেখে টাইব্রেকারে ম্যাচ নিয়ে গিয়ে জিততে পেরেছে তাঁর দল, এতে বেশ খুশি স্প্যানিশ কোচ।
সোমবার ডিফেন্ডিং চ্যাম্পিয়ন হায়দরাবাদ এফসি-কে টাইব্রেকারে ৪-৩-এ হারিয়ে গত বারের সেমিফাইনালে হারের বদলা নেয় এটিকে মোহনবাগান। দ্বিতীয় বার আইএসএল ফাইনালে ওঠে তারা। আগামী শনিবার গোয়ার জওহরলাল নেহরু স্টেডিয়ামে তারা বেঙ্গালুরু এফসি-র মুখোমুখি হবে। যারা রবিবার লিগশিল্ড জয়ী মুম্বই সিটি এফসি-কে আর এক রুদ্ধশ্বাস পেনাল্টি শুটে হারিয়ে ফাইনালে জায়গা করে নিয়েছে।
এই জয়ের পরে সোমবার রাতে সাংবাদিকদের ফেরান্দো বলেন, ‘সব কিছু ঠিক হয়েছে বলে আমি খুশি। ৭৫ মিনিট খেলা হয়ে যাওয়ার পর খেলোয়াড়দের ক্লান্ত হয়ে পড়াই স্বাভাবিক। ৯০ মিনিটের জায়গায় যদি ম্যাচ ১২০ মিনিটে যায়, সে জন্য খেলোয়াড়দের চোট বাঁচিয়ে চলতেই হয়। তাদের সে ভাবে তৈরি থাকতে হয়। একটা চোটেই ফাইনালে যাওয়ার রাস্তা বন্ধ হয়ে যেতে পারে। এই পরিস্থিতি সামলানো ও সঠিক সিদ্ধান্ত নেওয়া বেশ কঠিন। কিন্তু আমাদের মানসিকতা একই রকম ছিল। জিততেই হবে। ম্যাচ অতিরিক্ত সময়ে গেলে আমাদের আলাদা পরিকল্পনা ছিল। কিন্তু কাজটা মোটেই সহজ ছিল না। বেশ কঠিনই ছিল।’
আরও পড়ুন: ISL ফাইনালে ATKMB-BFC ম্যাচের উত্তেজনার সঙ্গে থাকবে ডিজে,ব্যান্ডের পারফরম্যান্সও
টাই ব্রেকারের আগে দলের ফুটবলারদের সঙ্গে অনেকক্ষণ আলোচনা করতে দেখা যায় কোচকে। তাঁদের কী বলছিলেন ওই সময়ে? জানতে চাইলে স্প্যানিশ কোচ বলেন, ‘টাইব্রেকারের আগে খেলোয়াড়দের কিছু খুঁটিনাটি ব্যাপার মনে করিয়ে দিই। সেটপিসের ব্যাকরণ মাথায় রেখে টাই ব্রেকারে যেতে হয়। সেগুলোই মনে করিয়ে দিই সবাইকে। এ রকম পরিস্থিতিতে অনেকে আবেগে ভেসে যায়। কিন্তু এই সময়ে আবেগকে প্রশ্রয় দিলে চলে না। তা নিয়ন্ত্রণ করা দরকার। ছেলেদের কিছু খুঁটিনাটি ব্যাপারে পরিবর্তন আনতে বলি। নিজেদের ওপর আস্থা রাখতে বলি সকলকে। আবেগ নিয়ন্ত্রণে রাখাটা ওই সময়ে খুবই জরুরি ছিল। দুই দলের খেলোয়াড়রাই তখন বেশ ক্লান্ত। এই সময়ে একটা ভুলই প্রতিপক্ষের হাতে অস্ত্র তুলে দিতে পারে। পেনাল্টিতে ফয়সালা হওয়াটা অনেকটা টসের মতো। ভাল হতে পারে, আবার খারাপও হতে পারে। তাই এই ব্যাপারটা আমার পছন্দ নয়। কিন্তু এটা তো ফুটবলেরই অঙ্গ।’
এ দিন যুবভারতী ক্রীড়াঙ্গনের গ্যালারিতে ৫২ হাজারের বেশি সমর্থকেরা ছিলেন। ম্যাচ চলাকালীন ও দলের জয়ের পর যাদের চিৎকারে রীতিমতো কাঁপছিল স্টেডিয়াম। সমর্থকদের এই রূপ দেখে বেশ খুশি সবুজ-মেরুন কোচ। তিনি চান ফাইনালেও তাদের প্রচুর সমর্থক থাকুন গোয়ার স্টেডিয়ামের গ্যালারিতে। ফেরানদো বলেন, ‘ঘরের মাঠে খেললে তো সমর্থকেরা ঝাঁকে ঝাঁকে আসবেনই। আমি জানি, সমর্থকেরা খেলোয়াড়দের খুবই ভালোবাসেন। তারই প্রমাণ পেলাম আজ। যখন মানসিক ভাবে বা শারীরিক ভাবে ফুটবলাররা ক্লান্ত হয়ে পড়ে, তখন সমর্থকদের চিৎকারই ওদের উজ্জীবিত করে। তাই ওদের জন্য আমি খুবই খুশি। সবার মুখে হাসি ফোটাতে পেরে আমরাও খুশি। ফাইনালেও আশা করি অনেক সমর্থককে পাব। আশা করি, অনেকেই যাবেন। তবে ওখানে গ্যালারিতে বোধহয় ২৭ হাজারের বেশি দর্শক বসতে পারে না। তবু আশা করব, অনেক সমর্থকই ওখানে যাবেন আমাদের সমর্থন করতে।’
আরও পড়ুন: ATKMB vs HFC: টাইব্রেকারে ডিফেন্ডিং চ্যাম্পিয়নদের হারিয়ে বদলা পূরণ,ফাইনালে বাগান
এ দিন টাই ব্রেকারে যিনি জাভিয়ের সিভেরিওর শট আটকে দলকে জয়ের দিকে নিয়ে যান, সেই এটিকে মোহনবাগানের সফল গোলকিপার বিশাল কাইথ তাঁর সাফল্যের জন্য কৃতিত্ব দেন দলের গোলকিপার কোচকেও। বলেন, ‘টাইব্রেকারের আগে দলের গোলকিপার কোচের সঙ্গে কথা বলি। উনি আমাকে অনেক সাহায্য করেছেন। উনি জানেন কোন খেলোয়াড়ের কোন দিকে শট মারার প্রবণতা বেশি। ওঁর এই তথ্য আমাকে খুব সাহায্য করেছে। ওঁর জন্য আমার কাজটা আরও সহজ হয়ে যায়। তাই তাঁকে ধন্যবাদ।’
এ দিকে আগামী শনিবার গোয়ার ফতোরদায় খেতাবী লড়াইয়ে বেঙ্গালুরু এফসি-র মুখোমুখি হবে এটিকে মোহনবাগান। ফাইনালের প্রতিপক্ষদের যথেষ্ট সমীহ করছেন কলকাতার দলের স্প্যানিশ কোচ। বলেন, ‘বেঙ্গালুরুকে একবার আমরা হারিয়েছি, ওরাও আমাদের হারিয়েছে। তাই ফাইনালে আকর্ষণীয় ম্যাচ হবে। ওদের দল খুব ভালো। ভালো ভালো খেলোয়াড় আছে। আশা করি, দল হিসেবে আমরা আরও ভাল খেলব আর তা যদি করতে পারি আমাদের সম্ভবানা আছে। আমাদের প্রস্তুতি নেওয়ার সময় আছে হাতে। দু-তিন রকমের পরিকল্পনা করতে হবে। আমার দলের ওপর যথেষ্ট আস্থা আছে আমার।’
ফাইনালের ভেন্যু হিসেবেও গোয়ার ফতোরদা বেশ পছন্দের বলে জানান কোচ। দু’বছর এফসি গোয়ার কোচ হিসেবে কাজ করায় ফতোরদা তাঁর একসময়ের ঘরের মাঠও। সেই পুরনো ঘরের মাঠে খেতাবী লড়াইয়ে নামতে হবে জেনে বেশ রোমাঞ্চিত ফেরান্দো। বলেন, ‘ফতোরদা ফাইনালের পক্ষে বেশ ভাল মাঠ। আমার পছন্দের মাঠ। ওখানকার মানুষ ফুটবল খুবই ভালবাসে। ওখানে গেলে আমার জৈব সুরক্ষা বলয়ের কথা মনে পড়ে। দু’বছর ওখানকার সুরক্ষা বলয়ের মধ্যে কাটিয়েছি। ফাইনালে আমাদের সামনে একটা বড় সুযোগ। বেঙ্গালুরুর বিরুদ্ধে ম্যাচটা মোটেই সহজ হবে না।’
For all the latest Sports News Click Here