‘জীবন্ত মানুষ থেকে ডেথ সার্টিফিকেট হয়ে গেল’, বাবাকে নিয়ে স্মৃতিচারণায় চঞ্চল
‘একটা সময় প্রার্থনা করেছি, বাবার জ্ঞান ফিরে আসুক, সুস্থ হয়ে যাক, বিনিময়ে আমরা সবকিছু করতে প্রস্তুত। ঠিক সেই আমরাই শেষের দিকে এসে বাবার কষ্ট সহ্য করতে না পেরে প্রার্থনা করেছি, বিশ্বাস করেছি, একমাত্র মৃত্যুই বাবাকে এই অসহ্য যন্ত্রণা থেকে মুক্তি দিতে পারে। ভাবনা আর বিশ্বাসের এই বৈপরীত্য আমি এখনো মানতে পারিনি।’
গত ২৭ ডিসেম্বর পিতৃবিয়োগ হয়েছে অভিনেতা চঞ্চল চৌধুরীর। বাবার হাসপাতালের দিনগুলির কথা এভাবেই ফেসবুকের দীর্ঘ পোস্টে বর্ণনা করেছেন তিনি। বাবার মৃত্যুর পর তাঁকে নিয়ে ফেসবুকে স্মৃতিচারণা করেন চঞ্চল। বাবার প্রয়াণে মন ভারাক্রান্ত অভিনেতার, লেখাতেই তা ফুটে উঠেছে।
বাবার মৃত্যুর পর স্বাভাবিকভাবেই ভেঙে পড়েছেন চঞ্চল। বাবার শূন্যতা যেন কোনওভাবেই মানতে পারছেন না। বাবাকে নিয়ে ফেসবুকে দীর্ঘ নতুন পোস্ট চঞ্চল ৯০২ নম্বর কেবিন এবং হাসপাতালের দিনগুলির কথা উল্লেখ করেন তিনি।
আরও পড়ুন: বিয়ের গুঞ্জনের মাঝেই দুবাইতে সিদ্ধার্থ-কিয়ারা, ফাটিয়ে বর্ষবরণ পার্টিতে মেতে জুটি
দুই বাংলার এই জনপ্রিয় অভিনেতা লেখেন, ‘কেবিন নম্বর ৯০২, বাবাকে নিয়ে আমরা হাসপাতালের এই কেবিনেই ভর্তি করেছিলাম। যদিও বাবার আর কেবিনে থাকা হয়নি। কারণ, শুরু থেকেই বাবাকে নিবিড় পরিচর্যা কেন্দ্রে রাখা হয়েছিল। ভর্তির দিনই ডাক্তার বলে দিয়েছিলেন, এখান থেকে বাবার ফিরে আসার আর কোনো সম্ভাবনা নেই, যদি না সৃষ্টিকর্তা অবাক কিছু ঘটান। তার পর থেকে আমরা শুধু অপেক্ষা আর চেষ্টা করেছি বাবাকে ফিরিয়ে আনতে।’
আরও লেখেন, ‘বাবা প্রায় ১৫ দিন মৃত্যুর সঙ্গে যুদ্ধ করে হেরে গেলেন। ডাক্তারদের হিসাব মতো যে কোনো সময় চলে যাওয়ার কথা বললেও, বাবা ১৫ দিন লাইফ সাপোর্টে বেঁচে ছিলেন। সন্তান বা আত্মীয় পরিজন হিসেবে চোখের সামনে এই কষ্ট দেখা যায়না।’
চঞ্চল চৌধুরী লেখেন, ‘আমরাসহ বাবার ভালোবাসার মানুষগুলো প্রতিদিন সকাল থেকে গভীর রাত পর্যন্ত ৯০২ নম্বর কেবিনে বসে থাকতাম বাবার জন্য। এত ভিড়…, বসার জায়গা হতো না…, তারপরেও কেউ সেখান থেকে আসতে চাইত না। বাবার কারণেই কেবিনটা মিলনমেলায় পরিণত হয়েছিল। আমরা আট ভাই-বোনসহ পরিবারের সবাই কখনো এত দিন একসাথে থাকিনি। কত আত্মীয়-পরিজনের সঙ্গে যে দেখা হয়েছে কত দিন পরে, শুধু মাত্র বাবার কারণেই।’
বাবার আয়ু ফুরিয়ে আসার কথা যেন আগে থেকেই বুঝতে পেরেছিলেন চঞ্চল। এ নিয়ে তিনি লেখেন, ‘২৭ ডিসেম্বর সকাল থেকেই আমরা বুঝতে পারছিলাম, বাবাকে আর ধরে রাখতে পারব না। ঠিক রাত ৮টার দিকে ডিউটি ডক্টর কেবিনে ফোন করে জানালেন, বাবার হার্ট বিট একদম নেমে যাচ্ছে, সঙ্গে সঙ্গে আমরা দৌড়ে গেলাম আইসিইউতে। সত্যিই…বাবার শরীরটা স্তব্ধ হয়ে গেছে। না-ফেরার দেশে চলে গেল আমাদের বাবা।’
অভিনেতা আরও লিখেছেন, ‘১২ ডিসেম্বর অচেতন অবস্থায় ভর্তি হয়ে ২৭ ডিসেম্বর ওই অবস্থাতেই বাবা চিরবিদায় নিলেন। এই কয়দিন অন্তত আইসিইউতে বাবার বেডের সামনে দাঁড়িয়ে বাবার শ্বাসপ্রশ্বাস চলছে কি না, দেখতাম, প্রাণটা আছে, এই সান্ত্বনা নিয়ে ভেজা চোখে ফিরে আসতাম। মনিটরে তাকিয়ে যখন দেখলাম, বাবার জীবনটা থেমে গেছে, কিছু সময়ের জন্য আমি কিছুই শুনতে পাচ্ছিলাম না, দেখতে পাচ্ছিলাম না। তারপর সকল আয়োজন সম্পন্ন করার পালা…, অ্যাকাউন্টস, বিল, ডেড বডি, ফ্রিজার ভ্যান, ডেথ সার্টিফিকেট, আমার বাবা জীবন্ত মানুষ থেকে ডেথ সার্টিফিকেট হয়ে গেল। আমার দম বন্ধ হয়ে আসছিল বারবার…, বারবার মন খুলে কাঁদতে চেষ্টা করছিলাম…, পারছিলাম না, যদি কেউ দেখে ফেলে, ছবি তোলে।’
দীর্ঘ পোস্টের শেষে চঞ্চল লেখেন, ‘বাবার ডেড বডিটা যখন হাসপাতালের লিফট দিয়ে নামানো হচ্ছিল…ফ্রিজার ভ্যানে তোলা হচ্ছিল সাদা কাপড়ে মোড়ানো বাবার নিথর শরীর, তখন খুব করে মনে করার চেষ্টা করছিলাম, বাবার সাথে আমার শেষ কী কথা হয়েছিল!! ভাবতেই তো পারিনি বাবা চলে যাবে, তাই বাবার সাথে আমার কোনো শেষ কথা হয়নি।’ (অপরিবর্তিত)
প্রসঙ্গত, চঞ্চল চৌধুরীর বাবা অবসরপ্রাপ্ত শিক্ষক রাধা গোবিন্দ চৌধুরী। এলাকায় তাঁর বাবা দুলাল মাস্টার বলে পরিচিত। এমনিতেই বার্ধক্যজনিত সমস্যায় ভুগছিলেন চঞ্চলের বাবা। তারপর সেরিব্রাল হলে অবস্থার আরও অবনতি হয়। বাবার শারীরিক অবস্থা ভালো না থাকায় এ পার বাংলায় ‘হাওয়া’ মুক্তি সম্পর্কিত সাংবাদিক সম্মেলনে অনুপস্থিত ছিলেন চঞ্চল। ঢাকার এক বেসরকারি হাসপাতালে দুই সপ্তাহ ধরে আইসিইউতে ভর্তি ছিলেন অভিনেতার বাবা। আচমকা মস্তিষ্কে রক্তক্ষরণ হলে আর বাঁচানো যায়নি তাঁকে।
For all the latest entertainment News Click Here