ছোট ছোট পায়ে এগোতে চেয়েছি- টেস্ট ক্যাপ পেয়ে আবেগে ভাসলেন ভরত, জড়িয়ে ধরলেন মাকে
বর্ডার-গাভাসকর ট্রফির প্রথম ম্যাচে অস্ট্রেলিয়ার বিরুদ্ধে উইকেটকিপার হিসেবে কে খেলবেন- ইশান কিষাণ নাকি কেএস ভরত? এই নিয়ে বহু জল্পনা চলেছে। অবশেষে কেএস ভরতকেই রাখা হয় একাদশে। বৃহস্পতিবার সূর্যকুমার যাদবের সঙ্গে অভিষেক হল কেএল ভরতেরও। ৯ ফেব্রুয়ারি নাগপুরের বিদর্ভ ক্রিকেট অ্যাসোসিয়েশন স্টেডিয়ামে টসের আগে ভারতের তারকা সিনিয়র ব্যাটসম্যান চেতেশ্বর পূজারা টেস্ট ক্যাপ তুলে দেন ২৯ বছরের ভরতের হাতে।
ভরতের কাছে এটি একটি আবেগঘন মুহূর্ত ছিল। বহু অপেক্ষার পর অবশেষে তাঁর ভাগ্যের শিকে ছিড়েছে। কেএস ভরতের মা নাগপুরে উপস্থিত ছিলেন। এবং অন্ধ্র প্রদেশের উইকেটরক্ষক-ব্যাটসম্যান তাঁর টেস্ট ক্যাপ পাওয়ার পর একটি হৃদয় ছুঁয়ে যাওয়া মুহূর্ত শেয়ার করেছেন। ভরত তাঁর মাকে জড়িয়ে ধরেন। তাঁর মা-ও ছেলের শৈশবের স্বপ্ন পূরণ হতে দেখে আবেগপ্রবণ হয়ে পড়েছিলেন।
স্টেডিয়ামে উপস্থিত ফটোগ্রাফাররা মা ছেলের এমন সুন্দর মুহূর্তটি মিস করেননি। ভরতকে জড়িয়ে ধরে তাঁঁর মা ভালোবাসায় ভরিয়ে দেন। নাগপুরে টেস্ট শুরুর আগে মা-ছেলের এমন ভালোবাসা অন্য মাত্রা যোগ করে।
প্রসঙ্গত, সূর্যকুমার যাদবের পরিবারও নাগপুরে উপস্থিত ছিল। প্রাক্তন প্রধান কোচ রবি শাস্ত্রীর কাছ থেকে সূর্য তাঁর টেস্ট ক্যাপ গ্রহণ করে। স্বাভাবিক ভাবে সূর্য এবং তাঁর পরিবারকেও আবেগে ভাসতে দেখা যায়।
ঋষভ পন্ত ভারতের হয়ে টেস্টে উইকেটরক্ষক-ব্যাটারের জায়গা পাকাপোক্ত ভাবে তৈরি করে ফেলার কারণে, কেএস ভরত সুযোগ পাচ্ছিলেন না। তাঁরে দীর্ঘ অপেক্ষায় থাকতে হয়েছিল। কিন্তু পন্তের গাড়ি দুর্ঘটনা এবং তিনি সেই দুর্ঘটনায় খারাপ ভাবে আহত হয়ে দীর্ঘ দিন ২২ গজের বাইরে ছিটকে গিয়েছেন। তা না হলে টেস্টে দিল্লি ক্যাপিটালসের অধিনায়ক দুরন্ত ফর্মে ছিলেন। ক্রিকেটে দীর্ঘতম ফর্ম্যাটে ভারতের হয়ে সবচেয়ে বড় ম্যাচ উইনার হিসেবে নিজেকে মেলে ধরেছিলেন পন্ত। তবে পন্ত অনুপস্থিতিতে নিজেকে প্রমাণ করার বড় সুযোগ পেয়ে গিয়েছেন ভরত।
২৯ বছরের তারকা তাঁর গর্বের দিনে নিজের পরিবার, বন্ধুবান্ধব এবং কোচদের প্রতি শ্রদ্ধা জানিয়েছেন। বিসিসিসিআই-এর শেয়ার করা একটি ভিডিয়োতে তাঁকে বলতে শোনা গিয়েছে, ‘দীর্ঘ সময়ের অপেক্ষার পর এই জার্সি পেয়েছি। এটি একটি খুব গর্বের মুহূর্ত, অনেক আবেগ জড়িয়ে রয়েছে। আমাকে ভারতের হয়ে খেলতে দেখার এবং দেশের হয়ে ভালো কিছু করার স্বপ্নটা শুধু আমার একার নয়, অনেকেরই স্বপ্ন।’
আরও পড়ুন: বল ট্র্যাকার কি খারাপ হয়ে গিয়েছে? DRS নিয়ে বিতর্ক খুঁচিয়ে তুললেন অজি সমর্থকরা
তিনি আরও বলেছেন, ‘আমার সতীর্থ, আমার পরিবার, আমার স্ত্রী, আমার বাবা-মা, আমার বন্ধু, কোচদের কাছ থেকে বছরের পর বছর ধরে প্রচুর সমর্থন পেয়েছি এই কঠোর পরিশ্রম করার জন্য। তাদের সমর্থন না থাকলে, আমার পক্ষে এটি করা সম্ভব হত না। আমি মনে করি, আমার পাশে থাকার জন্য, আমার উৎসাহিত করার জন্য এবং এই জায়গা পৌঁছতে সাহায্য করার জন্য সকলের কৃতিত্ব রয়েছে।’
অন্ধ্র প্রদেশের ছেলেটি তাঁর কোচ জয়কৃষ্ণ রাওকেও শ্রদ্ধা জানিয়েছেন, যিনি প্রথম কেএস ভরতের মধ্যে দেশের হয়ে প্রতিনিধিত্ব করার সম্ভাবনা দেখেছিলেন। ভরত বলছিলেন, ‘যখন আমি প্রথম শ্রেণীর ম্যাচ খেলতে শুরু করি, তখনও আমি ভাবিনি এই দিনটি আসতে পারে আমার জীবনে। এটা আমার কোচ জয়কৃষ্ণ রাও-এর কৃতিত্ব, তিনি বিশ্বাস করেছিলেন যে, আমার মধ্যে সম্ভাবনা রয়েছে। অনূর্ধ্ব-১৯ খেলার সময়ে তিনি আমাকে বলেছিলেন যে, ভারতের হয়ে উইকেট কিপিং করার সম্ভাবনা আমার আছে। সেই সময়ে আমার মনে হয়েছিল, এটা অনেক দূরের বিষয়। পরের দিন কী হতে চলেছে, কে জানে?’
আরও পড়ুন: ৩টি টেস্ট জিতলেই ভারতকে WTC ফাইনালে যাওয়া থেকে কেউ আটকাতে পারবে না, দেখে নিন সমীকরণ
ভরত আরও বলেছেন, ‘এটা ঠিক যে, খেলার প্রতি আমার একটা আবেগ ছিল। কিন্তু আমি সেই স্তরে পৌঁছতে পারব কিনা, তা নিয়ে নিশ্চিত ছিলাম না। যখন আমরা আমার কিপিং, ব্যাটিং নিয়ে কাজ শুরু করি, যখন অনেক অজানা চ্যালেঞ্জের মুখোমুখি হই। কিন্তু সেই সময়েও ক্রিকেট খুব বেশি উপভোগ করতে শুরু করি। চার-পাঁচ বছট টানা পারফরম্যান্স করার পর, বিশ্বাস হয়েছিল, ভারতের হয়ে খেলতে পারি। প্রথম তিন বছর আমার দুর্দান্ত মরশুম ছিল, তার পরে আমার কিছুটা খারাপ সময় গিয়েছে। কিন্তু তার পরে বাউন্স হ্যাক করি। তখন আমার মনে হয়েছিল, শুধু প্রথমশ্রেণীর ক্রিকেট নয়, বড় কিছু করার সম্ভাবনা আনার রয়েছে।’
তিনি যোগ করেছেন, ‘আমার যাত্রা কখনও আকাশচুম্বী ছিল না। সব সময়ে ছোট ছোট পদক্ষেপে এগিয়ে যেতে চেয়েছি।’ অন্ধ্রের হয়ে প্রথমশ্রেণীর ক্রিকেটে ভরত দুর্দান্ত পারফরম্যান্স করেন। ৮৬ ম্যাচে ভরত ৪৭০৭ রান করেছেন, যার মধ্যে ৯টি সেঞ্চুরি রয়েছে। ভরতের একটি প্রথমশ্রেণীর ট্রিপল সেঞ্চুরিও রয়েছে এবং তিনি তাঁর নিরাপদ উইকেটকিপিং দক্ষতার জন্য পরিচিত।
For all the latest Sports News Click Here