চ্যাম্পিয়ান্স লিগে মিলানকে উড়িয়ে ইতিহাস, চলতি মরশুমে ত্রিমুকুট জয় ম্যান সিটির
প্রিমিয়ার লিগ, এফএ কাপ জেতার পর থেকেই ম্যাঞ্চেস্টার সিটিকে নিয়ে স্বপ্ন দেখা শুরু হয়ে গিয়েছিল। অনেকেই দাবি করেছিলেন, পেপ গুয়ার্দিওলার দল যে রকম ছন্দে রয়েছে, তাতে তারা সহজেই চ্যাম্পিয়ন্স লিগের শিরোপা জিতে চলতি মরশুমে ত্রিমুকুট জয় করবে। সিটির ভক্তদের নিরাশ করেননি গুয়ার্দিওলার ছেলেরা। শনিবার ভারতীয় সময়ে মধ্য রাতে ইন্টার মিলানকে ১-০ হারিয়ে ইতিহাস লিখে ফেলল ম্য়াঞ্চেস্টার সিটি। ম্যান সিটির হয়ে একমাত্র গোলটি করেছেন রদ্রি।
চ্যাম্পিয়ন্স লিগের ইতিহাসে এই প্রথম বার শিরোপা জিতল ম্যান সিটি। তারা এই মরশুমে প্রিমিয়ার লিগ চ্যাম্পিয়ন হয়েছে। এফএ কাপ জিতেছে। এবং সব শেষে চ্যাম্পিয়ন্স লিগের শিরোপাও তারা দখল করে গড়ে ফেলল নজির। ১৯৯৮-‘৯৯ সালে সিটির চিরপ্রতিদ্বন্দ্বী ম্যাঞ্চেস্টার ইউনাইটেড এক মরশুমে ত্রিমুকুট জিতেছিল। এর পর ইংল্যান্ডের দ্বিতীয় ক্লাব হিসেবে ত্রিমুকুট জয় করল ম্যাঞ্চেস্টার সিটি।
আরও পড়ুন: গুন্দোগানের জোড়া গোল, ম্যান ইউনাইটেডকে হারিয়ে এফএ কাপ জয় ম্য়াঞ্চেস্টার সিটির
ইস্তানবুলে ম্যান সিটি যে এক রকম একপেশে খেলে ইন্টার মিলানকে উড়িয়ে দেবে, এমন চর্চা আগে থেকেই ছিল। তবে প্রথমার্ধে কোনও দলই রং ছড়াতে পারেনি। কার্যত ম্যাড়ম্যাড়ে ছিল পুরো প্রথমার্ধ। তার মাঝে অবশ্য ইন্টার মিলানই কিছুটা নজর কেড়েছিল। সিটিকে দেখে বোঝাই যাচ্ছিল না, তাদের ম্যাচ জেতার কোনও তাগিদ আছে বলে। আর্লিং হালান্ডকে নিয়ে চর্চা থাকলেও, তিনিও নিরাশ করেন। ২৭ মিনিটের মাথায় অবশ্য হালান্ড একটা দারুণ সুযোগ পেয়েছিলেন কেভিন ডি’ ব্রুইনের পাস থেকে। যদিও সেটি তিনি কাজে লাগাতে পারেননি। তাঁর শট গিয়ে ইন্টার মিলান গোলরক্ষক আন্দ্রে ওনানার গায়ে। এইটুকু বাদ দিলে হালান্ডকে আর খুঁজে পাওয়া যায়নি।
প্রথমার্ধে দু’-একটা সুযোগ পাওয়া ছাড়া সিটি বলার মতো কিছুই করতে পারেনি। বরং প্রথমার্ধে ইন্টার মিলন অনেক বেশি পরিকল্পিত ফুটবল খেলেছে। এর মাঝে আবার ডি’ ব্রুইনের চোট সিটির জন্য বড় ধাক্কা হয়। যে কারণে ৩৬ মিনিটেই মাঠ ছাড়তে হয় তাঁকে। বদলি হিসেবে নামেন ফিল ফোডেন।
আরও পড়ুন: এ লিগের ফাইনালে ধামাকা মোহনবাগানে যোগ দিতে চলা জেসন কামিংসের, তাঁর হ্যাটট্রিকে শিরোপা জয় ক্লাবের
বিষয়টি অনেকটাই কাকতালীয় হলেও, এর আগে ২০২১ সালে চেলসির বিরুদ্ধে চ্যাম্পিয়ন্স লিগের ফাইনালে যখন ম্যাঞ্চেস্টার সিটি খেলতে নেমেছিল, তখনও চোট পেয়ে ম্যাচের মাঝপথে উঠে যেতে হয়েছিল ডি’ ব্রুইনকে। সেই ফাইনালে ১-০ হেরে গিয়েছিল পেপের টিম। আরও একবার ফাইনালে গুয়ার্দিওলার পরীক্ষা-নিরীক্ষা, আবারও ডি’ ব্রুইনের চোট- সিটির ভক্তরা যেন অশুভ সঙ্কেত পেতে শুরু করেছিলেন।
কিন্তু ২০২১ সালের পুনারাবৃত্তি এ বার ঘটেনি। বহু প্রতীক্ষিত গোল পেতে সিটিকে অপেক্ষা করতে হয় ৬৮ মিনিট। ম্যানুয়েল আকাঞ্জি পাস বাড়ান ডানদিকে ফাঁকায় দাঁড়িয়ে থাকা বের্নার্দো সিলভাকে। সিলভার ক্রস ইন্টার মিলানের এক প্লেয়ারের গায়ে লেগে যায় ম্যান সিটির মিডফিল্ডার রদ্রির কাছে এসে পৌঁছয়। রদ্রি দুর্দান্ত শটে ১-০ সিটিকে এগিয়ে দেন। প্রসঙ্গত, এই রদ্রিকেই চেলসির বিপক্ষে ২০২১-এর ফাইনালে বেঞ্চে বসিয়ে রেখেছিলেন পেপ গুয়ার্দিওলা।
তবে এই গোলটি হওয়ার আগেই ম্যাচের ৫৯ মিনিটে প্রায় গোল খেয়ে যেতে বসেছিল ম্য়াঞ্চেস্টার সিটি। একটা ব্যাক পাস নিজে না ধরে গোলরক্ষক এদেরসনের জন্য ছেড়ে দেন সিটির ডিফেন্ডার ম্যানুয়াল আকাঞ্জি। কিন্তু মাঝ পথেই সেই বল পেয়ে যান ইন্টার মিলানের আর্জেন্টাইন স্ট্রাইকার লাউতারো মার্টিনেজ। তাঁর সামনে তখন এদেরসন একা। মার্টিনেজের সেই শট ঠেকিয়ে সিটিকে সেই যাত্রায় বাঁচিয়ে দেন ব্রাজিলিয়ান গোলরক্ষক এদেরসন। পেপ সেই মুহূর্তে টেনশনে হাঁটু গেড়ে বসেই পড়েছিলেন মাঠে। এদেরসনের সেভের পর দীর্ঘনিঃশ্বাস ছেড়ে উঠে দাঁড়ান তিনি।
সিটির গোলের পর ইন্টার মিলায়ন যে শোধ করার সুযোগ পায়নি, তা নয়। তবে তারা সুযোগগুলো কাজেই লাগাতে পারেননি। যার খেসারত ম্যাচ হেরে দিতে হয়েছে মিলানকে। রদ্রির গোল ছাড়া সিটিও আর গোলের মুখ খুলতে পারেনি। ১-০ গোলের এই জয় সিটিকে শুধু প্রথম বারের মতো চ্যাম্পিয়নস লিগের ট্রফিই এনে দিল না, ইউরোপের ইতিহাসে দশম দল হিসেবে ত্রিমুুকুট জিতল তারা।
For all the latest Sports News Click Here