‘চোট পাওয়া হাতে মলম লাগিয়ে দিয়েছিলেন’, ‘তরুণ স্যর’-এর স্মৃতিচারণ ‘আলো’র মেয়ের
অঙ্গনা রায়
তখন আমি খুব ছোট। বছর পাঁচেক বয়স হবে। লাইট-ক্যামেরা-অ্যাকশনের মানে বুঝতাম না। শ্যুটিং কী, তা-ও জানতাম না। খেলার সঙ্গী বলতে প্রিয় পুতুল। আর ব্যস্ততা বলতে পড়াশোনা, হোম ওয়ার্ক। এ ভাবেই নির্ঝঞ্ঝাট দিন কেটে যাচ্ছিল। হঠাৎ একদিন শুনলাম আমাকে অডিশনের ডাক এসেছে।
কিন্তু অডিশন? সেটা আবার কী? এ জিনিস খায় না মাথায় মাখে, কিছুই বুঝতে পারিনি। জানলাম, এই অডিশন আসলে পরীক্ষার মতো। পাশ করতে পারলেই আমাকে সিনেমায় নেওয়া হবে। তখনও যদিও আমার কাঁচা মন এই পুরো ঘটনার মাহাত্ম্য অনুধাবন করতে পারেনি। তবু মায়ের হাত ধরে চলে গিয়েছিলাম পরীক্ষা দিতে। মানে অডিশন দিতে!
আমার মতো আরও অনেককে দেখলাম সেখানে। কিন্তু তাতে আমার কী! আমি তখন মনের আনন্দে চেয়ারে বসে পা দোলাচ্ছি। হঠাৎ আমার ডাক এল। গিয়ে দাঁড়ালাম তরুণ স্যরের সামনে। ‘আলো’ ছবিতে ঋতুপর্ণা সেনগুপ্তের মেয়ের চরিত্র। আমাকে যদিও বিশেষ কিছুই করতে হল না! স্যর শুধু আমাকে হাসতে বলেছিলেন। ঠিক করে হাসলেই নাকি পাওয়া যাবে চকোলেট! আর তখনই স্যরের টেবিলে থাকা চকোলেটের কৌটোর দিকে চোখ পড়ল! হেসে উঠলাম খিলখিলিয়ে। চকোলেট তো পেলাম। তার সঙ্গেই মিলল ঋতুদির মেয়ের চরিত্রে অভিনয়ের সুযোগ।
বোলপুরের এক গ্রামে শ্যুটিং হবে। পড়াশোনাকে টাটা বলে আমিও রওনা হলাম শ্যুটিংয়ের উদ্দেশ্যে। সঙ্গে দাদু-দিদা। দোলনায় দোলার একটি দৃশ্য শ্যুট হচ্ছিল। আবছা মনে করতে পারছি। দুটো গাছের গুঁড়ির মধ্যে মোটা এক দড়ি বেঁধে দোলনা তৈরি করা হয়েছিল। সেখানেই দুলতে হবে আমাকে। আর হাসতে হবে সেই বিখ্যাত হাসি। আমাকে দৃশ্য বুঝিয়ে দিলেন তরুণ স্যর। ওই মোটা দড়ির দোলনায় দুলতে গিয়ে হাতে চোট লাগে আমার। ‘কাট’ বলে ছুটে এসেছিলেন স্যর। কাজ থামিয়ে বসে পড়লেন আমার হাতে মলম লাগাতে!
তখন বুঝিনি। কিন্তু আজ বুঝি মাটির কতটা কাছাকাছি থাকলে এমন হওয়া যায়। সেই গ্রামের প্রচুর বাচ্চারা আসত শ্যুট দেখতে। ঘণ্টার পর ঘণ্টা দাঁড়িয়ে প্রখর রোদে। ওদেরও কাছে টেনে নিয়েছিলেন স্যর। ভালোবেসে প্রত্যেককে চকোলেট খাওয়াতেন। সময় পেলে সেটেই গল্পের আসর জমাতেন। ডেকে আনা হত আমার দাদু-দিদাকেও।
আচ্ছা, কতটা বড় মাপের মানুষ হলে এমন উদার হওয়া যায়? কাছে টেনে নেওয়া যায়?
জানি না। জানা হল না। প্রশ্ন করার উত্তর দেওয়ার মানুষটা পাড়ি দিলেন ‘চাঁদের বাড়ি’। কিন্তু শিল্পীরা কি আদৌ চলে যেতে পারেন! তাঁরা থেকে যান। সৃষ্টির আলোয়। স্মৃতির গভীরে।
For all the latest entertainment News Click Here