ঘটি হয়ে শিখতে হয়েছে ঘোর বাঙাল ভাষা, সঙ্গে গাছে চড়াও: ছোট্ট ‘ইন্দুবালা’ পারিজাত
অল্প বয়সের ‘ইন্দুবালা’র ভূমিকায় অভিনয়ের অভিজ্ঞতা কেমন?
পারিজাত: ভীষণই সুন্দর একটা অভিজ্ঞতা, দেবালয়-দা (পরিচালক দেবালয় ভট্টাচার্য)কে ধন্যবাদ, এই সুযোগ আমাকে দেওয়ার জন্য। আমার চরিত্রটি এখানে বেশ গুরুত্বপূর্ণ। এটা একটা সময়গ্রন্থীর এবং একইসঙ্গে স্মৃতির উপন্যাস। আর ইন্দুবালা চরিত্রটি আগে থেকেই পাঠকদের মনে ভীষণভাবে গাঁথা হয়ে রয়েছে। পাঠকদের মনে যে ইন্দুবালা আছেন এবং যেমনভাবে আছেন, আমরা সেখানে পৌঁছতে পারছি কিনা, সেকথা মাথায় রেখে উপন্যাসটিকে ওয়েব সিরিজে নতুনভাবে আঁকতে হয়েছে। আমাদেরও সেটা মাথায় রেখেই অভিনয় করতে হয়েছে।
‘ইন্দুবালা ভাতের হোটেল’-এর গল্পে অনেকটা আবেগ, স্মৃতি এবং কান্না লুকিয়ে রয়েছে, কী বলবে?
পারিজাত: এধরনের ওয়েব সিরিজ বাংলায় সেভাবে হয়নি। আমার মনে হয়, ‘ইন্দুবালা ভাতের হোটেল’- বাংলা ওয়েব সিরিজের দুনিয়ায় পদফলক হয়ে থাকবে। ট্রেলার দেখে সকলেই বুঝতে পারছেন ‘ইন্দুবালা ভাতের হোটেল’-এ আমরা একই সঙ্গে জিভে জল ও চোখে জল দুটিই পাব। এটা একটা মেয়ের আত্মনির্ভর হয়ে ওঠার গল্প। ইন্দুবালার কলাপোতা গ্রাম থেকে কলকাতায় আসার যে যাত্রাপথ, তাতে আমি সামিল হয়েছি। এই গল্পে মুক্তি যুদ্ধ, দেশভাগের রক্তাক্ত ইতিহাস, সবই রয়েছে। সেসময় বাংলাদেশ থেকে ভারত এবং এদেশ থেকে বাংলাদেশে চলে গিয়েছেন যাঁদের পরিবার, তাঁরা আরও বেশি করে এই গল্পের সঙ্গে একাত্ম হয়ে উঠতে পারবেন। সেসময়ের একটা মেয়ে যিনি নিজের সম্বলে একটা ভাতের হোটেল খুলেছেন, সে ঘটনা চোখ খুলে দেওয়ার মতোই।
শুভশ্রী যখন ‘ইন্দুবালা’ তখন আলোচনা হবেই, সেখানে তরুণী ‘ইন্দুবালা’কে দর্শকদের নজরে আনা কতটা চ্যালেঞ্জিং?
পারিজাত: আমি একজন খাঁটি ঘটি। খুবই কম বাঙাল ভাষা শুনেছি। আমার বাড়িতে কেউই বাঙাল নন। তাই এই ভাষাকে শেখা, বিশেষ করে বাঙাল মেয়েদের একটা আলাদা রকম ঢং, চালচলন থাকে, সেটা রপ্ত করা একটু তো কঠিন ছিলই। আবার বাঙালভাষার মধ্যেও জায়গা ভেদে বিভিন্ন অ্যাকসেন্ট থাকে। তাই কলাপোতা গ্রামের ঠিক কোন অ্যাকসেন্টটা ব্যবহার করা হবে, সেটাকে চিহ্নিত করতে হয়েছে। এক্ষেত্রে দেবালয়-দা ভীষণভাবে সাহায্য করেছেন। আর যেহেতু আমার বাবা বাংলার অধ্যাপক উনি সাহায্য করেছেন, মাও সাহায্য করেছেন, এছাড়াও কল্লোলদা (লেখক- কল্লোল লাহিড়ী) সঠিক অ্যাকসেন্টে কথা বলতে ভীষণভাবে সাহায্য করেছেন।
ইন্দুবালা হয়ে উঠতে আর কী কী করেছ?
পারিজাত: এই প্রজেক্টটা অনেকদিন ধরে চলছে, তবে আমি গত অগস্ট থেকে কাজ শুরু করি। সেদিন থেকে বাঙাল ভাষা শেখা শুরু করেছিলাম। তারপর সবজি কাটা, বাটনা বাটা, মাছ কাটা , চন্দ্রুবুলি বানানো, সবই শিখেছি, এমনকি বাসনও মেজেছি। কারণ, শুধু ইন্দুবালার ছোটবেলা নয়, বিবাহিত জীবনের প্রথম দিকটাও আমি অভিনয় করেছি। (জানি না এটা বলা ঠিক হল কিনা)
আগে রান্নাবান্না করেছ নাকি, অভিনয়ের জন্য শেখা?
পারিজাত: আমি ছোট থেকেই অভিনয় করি, ডেবিউ অপর্ণা সেনের ‘আরশিনগর’ দিয়ে। ছোট থেকেই যেহেতু অভিনয়ের নেশা ছিল, তাই সবটা শিখেছি। বাড়িতে সব ধরনের কাজকর্ম করি, বাবা-মাও তাতে আপত্তি করেননি। আর আমি তারকা নয়, বরাবর অভিনেত্রী হতে চেয়েছি। অভিনয় মানে শুধু গ্ল্যামার নয়। ‘চোখের বালি’র শ্যুটিংয়ের আগে বাবা রিসার্চ টিমে ছিলেন, তাই বাবার মুখে শুনেছি, রাইমা সেনকেও ঋতুপর্ণ ঘোষের বাড়িতে গিয়ে জলখাবার দিতে হয়েছে। এমনকি শাড়ি পরে ঘর মুছতেও হয়েছে, যাতে অভ্যাস থাকে। আমিও সবটা শিখেছি, ভালোবেসেই করেছি। বাবা মজা করে বন্ধুদের কখনও বলেছেন, ‘পারিজাত তো ভীষণভালো বাসন মাজে’। (হাসি)
গল্পে কলাপোতা গ্রামের মেয়ে তুমি, আর বাস্তবে শ্রীরামপুর শহরের…
পারিজাত: (হাসি) আসলে আমার মামার বাড়ি কিন্তু গ্রামে, জয়নগরে। মামারবাড়ি গেলে আমি পাড়ায় পাড়ায় ঘুরে বেড়াই। গ্রাম্য জীবনের যে স্বাদ সেটা রপ্ত করতে মা ভীষণ সাহায্য করেছেন।
তুমি একটা ছোট্ট মেয়ে, সবে মাধ্যমিক দেবে, আর শুভশ্রী স্টার, ওঁর সঙ্গে অভিনয়ের অভিজ্ঞতা কী?
পারিজাত: শুভশ্রীদি ভীষণ ভালো মানুষ। প্রথম যখন দেখা করি, একটু অপ্রস্তুত ছিলাম।তবে শুভশ্রীদি কখনওই তারকা সুলভ আচরণ করেননি। বোনের মতো আমাকে সাহায্য করেছেন। কারণ, আমাদের দুজনের মধ্যে চরিত্রের জন্যই ইন্দুবালা হিসাবে সাদৃশ্য থাকা খুুব প্রয়োজন ছিল। যদিও যদিও শুভশ্রীদির সঙ্গে স্ক্রিনশেয়ার ছিল না। কিন্তু তারপরেও আমাদের তো আদপে একই মানুষ হয়ে উঠতে হয়েছে। সোহিনী সেনগুপ্ত আমাদের ওয়ার্কশপ করিয়েছেন। আর দেবালয়-দা একটা মাটির তাল থেকে প্রতিমা বানানোর মতো করে ইন্দুবালা চরিত্রটি গড়ে তুলেছেন।
শ্যুটিং করার সময় এমন কোনও কঠিন ঘটনার মুখোমুখি হয়েছ?
পারিজাত: হ্য়াঁ, শ্য়ুটিংয়ের সময় দেবালয়-দা আমায় প্রায়ই বিভিন্ন চ্যালেঞ্জ করতেন, দেখতেন পারি কিনা! হঠাৎ করে একদিন বললেন, দৌড়ে এসে পুকুরের ধারে ওই গাছটায় ওঠ। আমিও বললাম, গাছে উঠতে তো পারিনা, কী করব! দেবালয়দা বললেন, তোর কাছে ১ মিনিট সময় আছে…। আমি ছুটে এসে গাছে উঠেও গেলাম, স্লিপ করলে কিন্তু একদম পুকুরে…। (হাসি) কী করে পারলাম জানি না! কিন্তু আমি পারলাম…। সোহিনীদি (সোহিনী সেনগুপ্ত) বললেন তুই এলিয়েন হয়ে গেছিস। হঠাৎ করে দেবালয়-দা একদিন বললেন, পুকুরে গিয়ে ডোব। আমিও পুকুরে নেমে ডুব দিয়ে চিংড়ি মাছ তুললাম, তাও ১০-১৫ সেকেন্ড মাথা ডুবিয়ে রেখেছিলাম। ‘ইন্দুবালা’ আমায় অনেক কিছু শিখিয়েছে।
‘ইন্দুবালা ভাতের হোটেল’-এর প্রচারে কতটা ব্যস্ত?
পারিজাত: আপাতত ক্লাস টেনের পরীক্ষা দেব, সেটা নিয়ে ব্যস্ত (হাসি)
For all the latest entertainment News Click Here