গোয়ার বিরুদ্ধে পরিকল্পনা বদলাতেও হতে পারে- চোটে জর্জরিত দল নিয়ে চিন্তায় ফেরান্দো
দলের প্রায় সাত-আটজন খেলোয়াড়ের চোট। ফলে রিজার্ভ বেঞ্চ থেকেই প্রথম এগারো গড়ে বুধবার এফসি গোয়ার বিরুদ্ধে দল নামাতে হবে এটিকে মোহনবাগানের স্প্যানিশ কোচ জুয়ান ফেরান্দোকে। এই পরিস্থিতিতেও তিনি তিন পয়েন্টের আশা ছাড়তে রাজি নন। তিনি বলছেন, তাঁর স্কোয়াডের ২৭ জন ফুটবলারকেই সমান গুরুত্ব দিয়ে অনুশীলন করানো হয়েছে। এ বার রিজার্ভ বেঞ্চের খেলোয়াড়রা সুযোগ পেলে, তাঁরা নিজেদের সেরাটা উজাড় করে দেবেন বলেই মনে করেন দলের কোচ।
বছরের শেষ ম্যাচের আগের দিন মঙ্গলবার সাংবাদিক বৈঠকে যা বললেন সবুজ-মেরুন কোচ, জেনে নিন বিস্তারিত:
প্রশ্ন: আপনার দল এখন চোট-আঘাতে জর্জরিত। কে কী অবস্থায় রয়েছে?
জুয়ান: জনা সাতেক এখন চোটের তালিকায় রয়েছে। তিরি, কাউকো, পোগবাদের কথা তো ছেড়েই দিন। মনবীর, টাংরি, আশিক, হুগো, ফারদিন। ওদের প্রত্যেকেরই গুরুতর চোট রয়েছে। এখন সবই মেডিক্যাল স্টাফের উপর।
প্রশ্ন: এত চোট আঘাত থাকা সত্ত্বেও কি আপনি কালকের ম্যাচে জয়ের ব্যাপারে আশাবাদী?
জুয়ান: অবশ্যই। মরশুমের শুরুতে আমাদের শিবিরে ২৭জন খেলোয়াড় ছিল। তারা প্রত্যেকে প্রতিদিন সমান ভাবে অনুশীলন করেছে। ফলে যারা এত দিন ধরে মাঠে নামার সুযোগ পায়নি, তারাও সবাই তৈরি রয়েছে। যেমন প্রণয়। ওর মরশুমের শুরুর দিকে চোট ছিল। চোট সারিয়ে মাঠে ফেরার উদ্দেশ্যে যথেষ্ট পরিশ্রম করেছে। এখন ও দলকে সাহায্য করার জন্য তৈরি। এটাই দলের প্রক্রিয়া। কিছু খেলোয়াড়কে স্কোয়াডে রাখা হয়। কয়েক জনকে তৈরি রাখা হয়। কারও চোট হলে যখন স্কোয়াডে থাকতে পারে না, তখন তাদের স্কোয়াডে আনা হয়। কঠিন সময়ে তারাই কাজে আসে।
আরও পড়ুন: ওড়িশাকে হারিয়ে ATK MB-কে চাপে ফেলল কেরালা, ISL টেবলের তিনে উঠে এল দক্ষিণের দলটি
প্রশ্ন: কাউকো ও হুগোর অনুপস্থিতিতে আপনার দলের মাঝমাঠ দুর্বল হয়ে পড়া, নাকি রক্ষণ ঠিক মতো সংগঠিত না হওয়ায় প্রতি ম্যাচে গোল খাওয়া, কোনটা বেশি চিন্তায় রাখছে আপনাকে?
জুয়ান: রক্ষণে তেমন কোনও সমস্যা আমি দেখছি না। ছোটখাটো ব্যাপারে ওদের সমস্যা হচ্ছে। এবং মনসংযোগে ব্যাঘ্যাত ঘটছে মাঝে মাঝে। জনি কাউকো অবশ্যই আমাদের দলের গুরুত্বপূর্ণ সদস্য। ও খেললে বল পায়ে রাখতে বা জায়গা তৈরি করতে সুবিধে হয়। কিন্তু না থাকলে আমাদের আক্রমণের পদ্ধতিতে পরিবর্তন করতে হবে। জনিরা না থাকাটা সমস্যা অবশ্যই। কিন্তু সমাধান খুঁজে বের করতেই হবে। এটাই ফুটবল। আশা করি, যারা দলে আছে, তারা নিজেদের সেরাটা দেবে। কঠিন সময়ে দলকে সাফল্য এনে দিতে পারলে সেটা ওদেরই কৃতিত্ব। তবে জনি থাকলে যে পরিকল্পনা নিয়ে খেলতাম আমরা, এখন সেই পরিকল্পনায় পরিবর্তন আনতে হবে।
প্রশ্ন: এফসি গোয়া সম্পর্কে আপনার কী ধারণা? এবং শোনা যাচ্ছে ফেডরিকো গালেগো আপনাদের দলে যোগ দিতে চলেছেন? এটা কি সত্যি?
জুয়ান: এফসি গোয়া যথেষ্ট ভাল ফুটবল খেলছে। ওদের জায়গা নিয়ন্ত্রণ করার মতো খেলোয়াড় আছে। কালকের ম্যাচে ওদের বেশি জায়গা নিয়ন্ত্রণ করতে দেওয়া যাবে না। ওদের চাপে রাখতে হবে। ওরাও সেই চেষ্টাই করবে বলে মনে হয়। গালেগোর ব্যাপারে আমি ঠিক বলতে পারব না। আমিও একটা ভালো খবরের জন্য অপেক্ষা করছি। একাধিক খেলোয়াড়ের সঙ্গে কথা হয়েছে আমাদের। আমার বিশ্বাস ক্লাবের ম্যানেজমেন্ট সেরা খেলোয়াড়দেরই নিয়ে আসবে। ও (গালেগো) যদি আমাদের দলে যোগ দেয়, তা হলে ভালোই হবে। ও পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণ করতে পারে। ভারতীয় ফুটবল সম্পর্কেও ও জানে। এই সময়ে সত্যিকারের ভালো ফুটবলার খুঁজে পাওয়া কঠিন। কারণ, ভালো খেলোয়াড়রা সবাই চুক্তিবদ্ধ এবং আটটা ম্যাচের জন্য কে চুক্তি করতে যাবে, সেটাও একটা প্রশ্ন।
আরও পড়ুন: নর্থইস্টের প্রাক্তন তারকাকে দলে নিতে চলেছে ATK MB, মহমেডান ছেড়ে দিল নুরিদ্দিনকে
প্রশ্ন: এই পরিস্থিতিতে সেরা চারে থেকে বছর শেষ করার ব্যাপারে আপনি কতটা আত্মবিশ্বাসী?
জুয়ান: অবশ্যই আশাবাদী। আমরা যথেষ্ট ভালো খেলেছি। কিছু কিছু ক্ষেত্রে কিছু ছোটখাটো ব্যাপারে আমরা ভুল করেছি এবং তার খেসারত দিতে হয়েছে আমাদের। কিন্তু এখনও আমি মনে করি এটা (সেরা চারে থাকা) সম্ভব। প্রথম দুইয়ের মধ্যে থাকাটা এখন হয়তো খুবই কঠিন। তবে আমি জানি আমরা বড় ক্লাব। শেষ ম্যাচ পর্যন্ত লড়াই করার মানসিকতা রয়েছে আমাদের। সে জন্য আমাদের অনেক পরিশ্রম করতে হবে। ছোটখাটো ব্যাপারগুলোতে আরও নিখুঁত হতে হবে। দলের উপর আস্থা তো রাখতেই হবে। না রাখতে পারলে বাড়ি ফিরে যাওয়া ভালো। এই দলের যথেষ্ট সম্ভাবনা আছে। একটা লক্ষ্যের দিকে এগোচ্ছি আমরা। কিন্তু চোট-আঘাতই ভীষণ ভোগাচ্ছে আমাদের। তবে এটা ফুটবলেরই অঙ্গ।
প্রশ্ন: আপনার খেলোয়াড়রা প্রচুর গোলের সুযোগ তৈরি করছে, কিন্তু গোল করতে পারছে না। এটা কি তাদের মনসংযোগের অভাবের জন্য হচ্ছে, না কি অন্য কোনও কারণ আছে?
জুয়ান: ব্যাপারটা মানসিক তো বটেই। যদি পরিসংখ্যান দেখেন, তা হলে গত প্রায় সব ম্যাচেই আমরা প্রচুর গোলের সুযোগ তৈরি করেছি। টেকনিক, কৌশলের সঙ্গে সঙ্গে ফুটবলে আবেগেরও একটা গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা থাকে। আত্মবিশ্বাসে যদি ঘাটতি থাকে, তা হলে যত ভাল ফুটবলারই হোক, সে সাফল্য পায় না। দেখতে হবে আমার দল প্রতিপক্ষের চেয়ে বেশি গোলের সুযোগ তৈরি করতে পারছে কি না। পারলে ভালো। এ বার গোলে শট যদি লক্ষ্যভ্রষ্ট হয়, তা হলে তা নিয়ে কাজ করতে হবে। আত্মবিশ্বাস বাড়াতে হবে। এই সমস্যা এটিকে মোহনবাগানেও যেমন হয়, তেমন চেলসিতেও হয়। এমনও হয় যে, একজন ভালো, নামী ফুটবলার তিন ম্যাচে বা পাঁচ ম্যাচে, এমনকী এক মাস ধরেও গোল পাচ্ছে না। কারণ, আত্মবিশ্বাসের ঘাটতি। এটা ফুটবলেরই অঙ্গ। এখানে আবেগের গুরুত্ব যথেষ্ট। তবে আমার কাছে দলের সুযোগ তৈরি করাটা অনেক বেশি গুরুত্বপূর্ণ। এখন যে সুযোগগুলি হাতছাড়া হচ্ছে, ক্রমশ সেগুলোই গোলে পরিণত হবে। এটা ফুটবলে হয়েই থাকে। এক্ষেত্রে যারা পারছে না, তাদের পাশে থাকাটাই সবচেয়ে জরুরি ব্যাপার। তা হলে সে নিজেকে ক্রমশ উন্নত করে তুলতে পারবে।
প্রশ্ন: গত ম্যাচে দীপক টাংরি ও আশিক কুরুনিয়ান চোট পেয়েছিলেন। এই ম্যাচে কি তাদের পাবেন?
জুয়ান: দীপককে পাওয়া কঠিন। কাল সকালে আশিকের অবস্থা দেখে সিদ্ধান্ত নেব। এখন দলের সবার ক্ষেত্রেই তাই হচ্ছে। সকালে তার অবস্থা দেখে সিদ্ধান্ত নিতে হচ্ছে।
For all the latest Sports News Click Here