গলি থেকে রাজপথ- ধার করা ব্যাটে শতরান থেকে জাতীয় দলে সুযোগ,লড়াই কঠিন ছিল তিলকের

এই বছরের শুরুর দিকে, রবীন্দ্র জাদেজা তাঁর ইনস্টাগ্রাম হ্যান্ডেলে তিলক বর্মার সঙ্গে একটি ছবি পোস্ট করে ক্যাপশনে লিখেছিলেন, ‘ভারতের ভবিষ্যত তারকার সঙ্গে মজা করছি।’ জাদেজার এই বাক্য সঠিক প্রমাণিত হয়েছে। ২০২৩ আইপিএলে ১১ ম্যাচে ৩৪৩ রান করেছিলেন তিলক। আইপিএলে নজর কেড়েই হায়দরাবাদের ২০ বছরের তারকা জায়গা করে নিয়েছেন জাতীয় দলে। ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিরুদ্ধে হার্দিক পান্ডিয়ার নেতৃত্বাধীন ভারতীয় টি-টোয়েন্টি স্কোয়াডে জায়গা করে নিয়েছেন হার্ড-হিটিং মিডল-অর্ডারের তারকা ব্যাটার।

তিলক বর্মার প্রতিভা শুধু জাদেজাই দেখেননি, অন্যরাও তাঁকে নিয়ে আশাবাদী। সুনীল গাভাসকর এবং রোহিত শর্মা তাঁকে ভারতের জন্য ‘অল ফরম্যাট ব্যাটার’ বলে অভিহিত করেছিলেন। তিলক বর্মার ছেলেবেলার কোচ সালাম বেয়াশ আশা করেছিলেন যে, তাঁর ছাত্র যদি তাঁর ফর্ম ধরে রাখতে পারেন, তবে তিনি ভারতের হয়ে খেলার স্বপ্ন পূরণ করবেন।

তিলকের ক্রিকেটে যাত্রা শুরু করেছিলেন মাত্র ১১ বছর বয়সে। এক সন্ধ্যায় কোচ সালাম বেয়াশ তিলকের বন্ধুদের সঙ্গে তাঁকে টেনিস ক্রিকেট খেলতে দেখেন এবং তার ব্যাটিং শৈলী দেখে অবাক হয়ে যান। বেয়াশ ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেসকে সেই কথা স্মরণ করে বলেছেন, ‘আমি তিলককে প্রথম বারকাস মাঠে দেখেছিলাম, যেখানে ও ওর বন্ধুদের সঙ্গে টেনিস বলে ক্রিকেট খেলছিল। আমি ওকে জিজ্ঞাসা করি, ও কোথায় প্রশিক্ষণ নেয়। ও আমাকে বলেছিল, আমি শুধু এই মাঠেই খেলি। তখনই আমি ওর বাবাকে ফোন করি। আমি ওকে অ্যাকাডেমিতে ভর্তি করার জন্য অনুরোধ করেছিলাম, কারণ ওর মধ্যে সম্ভাবনা ছিল।’

তিলকের বাবা নাম্বুরি নাগারাজু পেশায় একজন ইলেকট্রিশিয়ান, আর্থিক অবস্থা ভালো না থাকার কারণে তিনি ছেলেকে ক্রিকেট খেলতে দিতে রাজি ছিলেন না। বেয়াশ বলেছেন, ‘ওদের আর্থিক সীমাবদ্ধতার কারণে ওর বাবা প্রথমে রাজি হননি। ওদের বাড়ি আমার জায়গা থেকে ২ কিলোমিটার দূরে। আমি বলেছিলাম, তিলকের পরিবহনের দায়িত্ব আমি নেব। আপনাকে প্রতিদিন ওকে নিয়ে যেতে হবে না এবং আমি তার ফি-ও নেব না। তার পরে ওরা রাজি হয়েছিল।’

তিলক বর্মা যে ক্রিকেট অ্যাকাডেমিতে প্রশিক্ষণ নিয়েছিলেন, সেটি হায়দরাবাদের লিঙ্গামপল্লীতে ছিল। হায়দরাবাদের পুরনো শহর চন্দ্রায়ণ গুট্টা থেকে প্রায় ৪০ কিলোমিটার দূরে। তবে তিলক বর্মাকে তাঁর কোচ নিয়মিত বাইকে করে নিয়ে আসতেন বলে তিলক সে ভাবে অনুশীলন মিস করেননি।

নাম্বুরি নাগারাজু বলেছেন, ‘সালাম বেয়াশ স্যার না থাকলে তিলক কখনও-ই এতদূর আসতে পারত না। তিনি আমাদের বলেছিলেন, ওর প্রতি পূর্ণ আস্থা রাখতে। তিনি দাবি করেছিলেন, আপনার সন্তান মেধাবী, ওকে নৈতিক সমর্থন দিন।’ এর পর থেকে প্রতিদিন ভোর ৫টায় তিলক বর্মাকে তুলে নিয়ে অ্যাকাডেমিতে যেতেন সালাম বেয়াশ। মাঝে মাঝে বাইকেই ঘুমিয়ে পড়তেন তিলক।

হাসতে হাসতে তিলকের ছেলেবেলার কোচ বলছিলেন, ‘ছোট ছিল তো। তাই কখনও কখনও ও আমার পিছনে বসে ঘুমিয়ে পড়ত। আমাকে তাই খুব সতর্ক থাকতে হত। আমি তাকে বলতাম, আমাকে শুধু শক্ত করে ধরে রাখতে। যাতে বুঝতে পারি যে, ও ঘুমাচ্ছে। আমি বাইক থামিয়ে ওকে জাগিয়ে দিতাম। ওকে জল দিয়ে চোখ-মুখ ধুতে বলতাম। এটি কয়েক মাস ধরে চলেছিল।’

তিনি যোগ করেছেন, ‘এক বছর পর, আমি ওর বাবাকে অ্যাকাডেমির কাছাকাছি থাকার জন্য অনুরোধ করেছিলাম। যাতে তিলক এই ক্লান্তিকর যাত্রা এড়াতে পারে। ওঁরা বাধ্য হয়েছিল। ওর বাবা অ্যাকাডেমির কাছে অবশ্য চাকরিও পেয়েছিলেন। এবং তিলক পড়ে যেতে পারে, এই ভয় নিয়ে আমাকে আর বাইক চালাতে হয়নি।’

অ্যাকাডেমির কাছাকাছি থাকা একটি বড় বিষয় ছিল। কিন্তু তিলকের সঠিক ক্রিকেটের সরঞ্জাম ছিল না। এমন কী ধার করা ব্যাট নিয়ে প্রথম সেঞ্চুরিও করেন তিনি। একটি ভালো ব্যাটের জন্য তার খরচ মোটামুটি ৪-৫ হাজার টাকা ছিল। কিন্তু ওর বাবার কাছে সেই টাকাও ছিল না।

তখন কোচ একটি সমাধান প্রস্তাব দিয়েছিলেন। বেয়াশ বলেছেন, ‘ও অনেক আর্থিক সমস্যার সম্মুখীন হয়েছে। ওর জন্য ব্যাট বা অন্য কোনও ক্রিকেট সরঞ্জাম কেনা কঠিন বিষয় ছিল। এটা দেখার পর আমি ওকে টার্গেট দিয়ে বলতাম, আসন্ন টুর্নামেন্টে ভালো করো, কয়েকটা সেঞ্চুরি করো, সেরা ব্যাটসম্যানের পুরষ্কার জিততে পারো, তবে আমি তোমাকে একটা ব্যাট দেবো।’

চার বছর পর, তিলক বিজয় মার্চেন্ট ট্রফিতে দুরন্ত পারফরম্যান্স করেছিলেন। হায়দরাবাদের হয়ে ৯০০ রান করেন তিনি। এবং হায়দরাবাদের রঞ্জি ট্রফির সম্ভাব্যদের দলে নির্বাচিত হন। এক বছর পরে ২০১৯ সালে তিনি হায়দরাবাদের হয়ে রঞ্জি ট্রফি খেলেন।

For all the latest Sports News Click Here 

Read original article here

Denial of responsibility! TechAI is an automatic aggregator around the global media. All the content are available free on Internet. We have just arranged it in one platform for educational purpose only. In each content, the hyperlink to the primary source is specified. All trademarks belong to their rightful owners, all materials to their authors. If you are the owner of the content and do not want us to publish your materials on our website, please contact us by email – [email protected]. The content will be deleted within 24 hours.