কেমন হল ‘কাকাবাবুর প্রত্যাবর্তন’? ছবিটি দেখে ৫টি ভালো লাগা ও ৫টি না-ভালো লাগা
শুক্রবার মুক্তি পেয়েছে সৃজিত মুখোপাধ্যায় পরিচালিত ‘কাকাবাবুর প্রত্যাবর্তন’। সুনীল গঙ্গোপাধ্যায়ের সৃষ্টি করা চরিত্র কাকবাবুকে নিয়ে পরিচালকের বানানো তৃতীয় ছবি এটি। এর আগে পর্দায় মরুভূমি এবং পাহাড়ে কাকাবাবুর অ্যাডভেঞ্চার দেখিয়েছেন বলে এবার এমন একটি গল্প নির্বাচন করতে চেয়েছেন, যেখানে কাকাবাবুকে নিয়ে গিয়ে ফেলা যায় জঙ্গলে— এমন কথা আগে জানিয়েছিলেন পরিচালক। সেই কারণেই সুনীল গঙ্গোপাধ্যায়ের ‘জঙ্গলের মধ্যে এক হোটেল’ নামক কাহিনিটি নির্বাচন।
যে কোনও সিনেমা দেখার পরেই সেটি সম্পর্কে কিছু ভালো লাগা, কিছু না-ভালো লাগা তৈরি হয়। এক্ষেত্রেও তার ব্যতিক্রম হয়নি। তেমনই পাঁচটি করে ভালো এবং মন্দ অনুভূতির তালিকা দেওয়া যাক।
ভালো লাগা:
- বাংলার সাহিত্যভাণ্ডারে অ্যাডভেঞ্চার নিয়ে যত সৃষ্টি রয়েছে, চলচ্চিত্রের ভাণ্ডারে তার তার তুলনায় অনেক কম। তা সে বাংলা ছবির পকেটের জোরের অভাবেই হোক, কিংবা এই ধরনের ছবির প্রতি পরিচালকের অনীহার কারণেই হোক— বাংলা ভাষায় অ্যাডভেঞ্চার ছবির সংখ্যা অতি নগন্য। সেই হিসাবে ‘কাকাবাবু প্রত্যাবর্তন’ তো বটেই, গোটা কাকাবাবু-সিরিজই বাংলা ছবির ইতিহাসে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। নিখাদ অ্যাডেভঞ্চারের রসাস্বাদন করতে গেলে এই ছবি দেখাই যায়।
- ১৯৭৩ সালে মুক্তি পেয়েছিল ‘সবুজ দ্বীপের রাজা’। কাকাবাবুর ভূমিকায় শমিত ভঞ্জ অভিনীত সেই ছবিটি সত্তর থেকে আশির দশকের শেষ দিক পর্যন্ত বিভিন্ন সময়ে ছোট ছোট সিনেমাহলে ঘুরিয়ে ফিরিয়ে দেখানো হত। মূলত এলাকার স্কুল-পড়ুয়াদের দেখানোর জন্য ব্যবস্থা করা হয়েছিল সেই শো-গুলির। বোঝাই যায়, কাকাবাবুকে নিয়ে সবচেয়ে বেশি আকর্ষণ কোন বয়সের দর্শকদের। ব্যোমকেশের মতো মানবমনের অন্ধিসন্ধিতে ঘোরা নয়, ফেলুদার মতো প্যাঁচালো রহস্যের কিনারা নয়, কাকাবাবুকে শিশু-কিশোর-কিশোরীরা পছন্দ করেছে, তার সোজাসাপ্টা অ্যাডভেঞ্চারের জন্য। সব্যসাচী চক্রবর্তী অভিনীত ‘কাকাবাবু হেরে গেলেন’ যখন ছোটপর্দায় দেখানো হত, তাই তার সামনেও বড়দের চেয়ে বেশি ভিড় করত ছোটরাই। সেই হিসাবে সৃজিতের কাকাবাবুও তার ব্যতিক্রম নয়। ছোটদের এ ছবি ভালো লাগতেই পারে।
- ছবির দৃশ্য নির্মাণ চমৎকার। ক্যামেরার কাজ ভালো। দেখতে ভালো লাগে অধিকাংশ সময়েই। চোখের আরাম হয়।
- প্রসেনজিৎ চট্টোপাধ্যায়ের অভিনয় সম্পর্কে আলাদা করে বলার কিছু নেই। তাঁর পাশাপাশি এই ছবিতে অনির্বাণ চক্রবর্তী ভালো অভিনয় করেন।
- ছবির গল্প বলার ধরনটি একেবারে সরলরৈখিক। সেখানে প্রাধান্য পেয়েছে ‘ট্রাভেলগ’-মার্কা ট্রিটমেন্টও। পর্দায় কেনিয়া-ভ্রমণ সম্পর্কে কেউ যদি উৎসাহী হন, তাহলে তাঁর ভালো লাগতেই পারে এই ছবি। ২ ঘণ্টা ১৬ মিনিট সময় তাঁর খারাপ কাটবে না।
না-ভালো লাগা:
- কোনও কোনও দৃশ্য এত লম্বা যে তা দেখতে ক্লান্ত লাগে। সে সব দৃশ্যের শেষে কী হতে চলেছে, তা সহজেই অনুমান করা যায়। তবু সে সব দৃশ্য চলতেই থাকে। এই দৃশ্যগুলি কেটেকুটে ছবিটিকে আরও খানিকটা নির্মেদ বানানো যেত বলে মাঝে মাঝেই মনে হয়।
- ছবিতে আরিয়ান ভৌমিক অভিনয় করেছেন সন্তুর ভূমিকায়। এই চরিত্রে তৃতীয় বার অভিনয় করলেন তিনি। কিন্তু এখনও বেশ কিছু দৃশ্যে তিনি আড়ষ্ট। অন্য অভিনেতাদের পাশে যা কখনও কখনও চোখে লাগে।
- ছবিতে বেশ কয়েকটি সামগ্রীর বিজ্ঞাপন রয়েছে। অন্তত তিনটি ‘প্রোডাক্ট এনডোর্সমেন্ট’-এর কথা তো সহজেই মনে করা যায়। সেগুলি অতি আরোপিত বলে মনে হয়। ছবির তাল কেটে যায় এগুলির কারণে।
- বাংলা ব্যতিরেকে ইংরেজি এবং অন্য ভাষার সংলাপের সময়ে বাংলায় সাবটাইটেল চলে ছবিটি জুড়ে। সেগুলি মুদ্রণ প্রমাদে ভর্তি। অতি পরিচিত এবং অতি সাধারণ কিছু শব্দের এমন ভুল বানান সেখানে লেখা হয়, যা অস্বস্তিকর।
- ছবির তাল কখনও কেটে যায় তার গানের কারণেও। ‘দেখবে জেব্রা হাতি জিরাফের দল/ কীভাবে বাতাসে ওড়ে ধর্মের কল’। ‘ফিরে এল কাকাবাবু’ নামের গানের গুরুত্বপূর্ণ দু’টি লাইন। অ্যাডভেঞ্চার-ধর্মী ছবির মাঝে লম্বা গানের দৃশ্য এবং তার ধীর গতি ক্লান্তি উদ্রেক করে অনেক সময়েই।
শেষ কথা: সরস্বতী পুজো, তার সঙ্গে সপ্তাহান্তের ছুটি। দেখতে যাবেন কি ‘কাকাবাবুর প্রত্যাবর্তন’? খুদে সঙ্গীকে নিয়ে দেখতে যেতেই পারেন। তার মন্দ লাগবে না। বড়দের কতটা ভালো লাগবে, তা নিয়ে সন্দেহ রয়েছে। কারণ মূল গল্পটিই বিশেষ ঘটনাবহুল নয়। তার উপর ছবিটিও বেশ লম্বা। তবে হাল্কা মেজাজে কিছু ক্ষণ সময় কাটাতে চাইলে দেখতে পারেন। সৃজিত মুখোপাধ্যায় পরিচালিত আগের কাকাবাবু-ছবিগুলি যাঁদের ভালো লেগেছে, তাঁরা অবশ্যই দেখতে পারেন। হতাশ হবেন না।
For all the latest entertainment News Click Here