কৃষ্ণর ব্যর্থতা থেকে করোনা কাঁটা, কী কী কারণে সেমিতেই থমকে গেল ATK MB-র দৌড়?
লিগ পর্বে নাগাড়ে ১৫ ম্যাচ অপরাজিত থেকে তুখর ফর্মে ছিল এটিকে মোহনবাগান। এটি আইএসএলের রেকর্ডও বটে। তবে একেবারে তীরে এসে তরী ডুবল। গ্রুপ পর্বের শেষ ম্যাচে এসে পরাজয়ে প্রথমে শিল্ড জয় হাতছাড়া এবং হায়দরাবাদের বিরুদ্ধে গ্রুপ পর্বে অপরাজিত থাকলেও, সেমির প্রথম লেগে ৩-১ হারই হৃদয়ভঙ্গ করে দেয় সবুজ-মেরুনের।
গতবার ফাইনালে গিয়েও খালি হাতে ফিরতে হয়েছিল। এবার সেমিফাইনালেই সেই খালি হাতেই ছুটি হয়ে গেল এটিকে মোহনবাগানের। কিন্তু তারকাখচিত দল, দুরন্ত সব নাম, জমাট রক্ষণ, এসব সত্ত্বেও হঠাৎ শেষ মুহূর্তে এসে কেন এমন বির্যযয় ঘটল জুয়ান ফেরান্দোর দলের? এর পিছনের সম্ভাব্য কারণগুলি ঠিক কী কী হতে পারে, একবার খতিয়ে দেখা যাক।
কৃষ্ণ-বৌমাসের ফ্লপ শো:-
এটিকে মোহনবাগানের তারকাদের তারকা হলেন রয় কৃষ্ণ। ম্যাচের পর ম্যাচ, মরশুমের পর মরশুম তিনি গোলের সামনে অসামান্য ক্ষিপ্রতা দেখিয়ে প্রতিপক্ষের জালে বল জড়িয়ে দিয়েছেন। দুই সেমিফাইনালেই গোলসহ, গোটা মরশুম সাত গোল ও চার অ্যাসিস্ট, কৃষ্ণর যোগ্যতার সঠিক পরিচয়বাহক নয়। উপরন্তু, চোট আঘাতে তিনি বারংবার ফিটনেস সমস্যায় ভুগে মাত্র ১৬টি ম্যাচই খেলেছেন, যা দলের পারফরম্যান্সে প্রভাব ফেলছে।
কৃষ্ণর মতো আরেক তারকা ফুটবলার হুগো বৌমাসও কিন্তু তেমনভাবে প্রভাব ফেলতে পারেননি। হ্যাঁ, পরিসংখ্যানগতভাবে মিডফিল্ড থেকে পাঁচ গোল, পাঁচ অ্যাসিস্ট খারাপ নয়। কিন্তু এ পারফরম্যান্স ২০১৯-২০ মরশুমে ১১ গোল ও ১০ অ্যাসিস্ট দেওয়া লিগ সেরা খেলোয়াড়ের ধারেকাছেও নয়। বেশিরভাগ ম্যাচের উপর প্রভাবই ফেলতে পারেননি তিনি।
করোনা কাঁটা:-
মরশুমের মাঝপথে একসময় হু হু করে গোয়ার জৈব বলয়ের মধ্যেই বাড়ছিল করোনা আক্রান্তের সংখ্যা। এটিকে মোহনবাগান দলে তীব্রভাবে আছড়ে পড়ে করোনা তুফান। কৃষ্ণসহ একগাদা ফুটবলার করোনা আক্রান্ত হন। তারপর থেকে তো আর ফিজিয়ান স্ট্রাইকারকে ছন্দেই দেখায়নি।
গুরুত্বপূর্ণ সময়ে খেলোয়াড়দের চোট:-
চোট আঘাত সারাতে সারাতেই এটিকে মোহনবাগান ফুটবলারদের গোটা মরশুম কেটে গেল। মরশুম জুড়ে একের পর এক তারকা ফুটবলার চোট পেতেই থাকেন। দলের উপর তো এর প্রভাব পড়বেই। যেমন তিরির না থাকায় প্রভাব দেখা গেল। এমনকী সেমিতে বৌমাস চোট সারিয়ে মাঠে নামলেও, আবার তাঁকে মাঝপথে উঠতে হয়েছিল। বারবার চোট পেতে থাকায় ম্যাচ ফিটই তো হওয়ার সময় পাননি ফুটবলাররা।
রক্ষণে দুর্বলতা:-
এই মোহনবাগান দলে রক্ষণে দুর্বলতাও, তাও মানা যায় নাকি? হ্যাঁ, রক্ষণে ফাঁক-ফোঁকর ছিল সবুজ মেরুনের। গোটা মরশুমে মোহনবাগান রক্ষণকে ধরে রেখেছিলেন তিরি। তবে তিনি আহত হয়েই রক্ষণের দুর্বলতাটা সামনে উঠে আসে। সেমির প্রথম লেগে ছয় মিনিটে দুই গোল খাওয়া এবং তার থেকেও বড় কথা যেভাবে গোল খেয়েছিল ফেরান্দোর দল, তাতে তাদের রক্ষণের দুর্বলতা স্পষ্ট।
সন্দেশ ঝিঙ্গান সদা নির্ভরশীল হলেও, অনেকটা সময় তিনি এইএনকে সিবেনিকে না খেলেই মরশুমের মাঝপথে যোগ দিয়েছেন দলে। তাই তাঁকে চেনা ফর্মে দেখা যায়নি। এমনকী গত মরশুমের সেরা গোলকিপার অমরিন্দর সিংকেও কিন্তু মোহনবাগান তেকাঠির নীচে নড়বড়ে দেখিয়েছে। তিনি প্রচুর শট বাঁচালেও, অনেক সময়ই তাঁর ক্লিয়ারেন্স বা চাপের মধ্যে বল দখলে আনার অক্ষমতা, দলকে সমস্যায় ফেলেছে।
মাঝমাঠে থেকে খেলা তৈরির লোকের অভাব:-
এই পয়েন্টটা সরাসরি বৌমাসের অফফর্মের সঙ্গে যুক্ত। ফরাসি মিডফিল্ডার ছন্দে থাকলে এই প্রশ্নই উঠত না। তবে দুর্ভাগ্যবশত তিনি ছন্দে ছিলেন না। যা মোহনবাগানের মাঝমাঠের সুযোগ তৈরির ক্ষমতাকে অনেকটাই সীমাবদ্ধ করে দেয়। জনি কাউকো প্রয়াস করেছিলেন বটে, তবে তিনি সত্যি বলতে ১০ নম্বর নন, বক্স টু বক্স মিডফিল্ডার। লিস্টন কোলাসোর তুখর ফর্ম এই ব্যাপারটা কিছুটা ঢেকে দিলেও, সবচেয়ে প্রয়োজনের সময় এই সমস্যাটা কিন্তু মাথা চাড়া দিয়ে উঠে যা দলের বিপরীতে যায়।
তবে পারফরম্যান্সগত দিক থেকে এত সমস্যার পরেও ২০ ম্যাচে ১০টি জয় ও সাতটি ড্র করে তৃতীয় হয়ে সেমিফাইনালে যাওয়াটা, শুধুমাত্র এই এটিকে মোহনবাগান দল বলেই সম্ভব হয়েছিল।
For all the latest Sports News Click Here