‘কিছু কিছু মৃত্যু ঠিক মেনে নেওয়া যায় না’, কালিকাপ্রসাদের শহরে এসে বললেন সোমলতা

বিশ্বকল্যাণ পুরকায়স্থ

অসমের শিলচরে ন্যাশনাল ইনস্টিটিউট অফ টেকনোলজিতে ‘ঐক্যতান’ অনুষ্ঠানে যোগ দিতে এসে প্রয়াত শিল্পী কালিকাপ্রসাদ ভট্টাচার্যের প্রসঙ্গে আবেগপ্রবণ হয়ে পড়লেন শিল্পী সোমলতা আচার্য। বাংলা ব্যান্ড ‘সোমলতা অ্যান্ড দ্য এসেস’-এ সহযোগীদের নিয়ে রবিবার বিকেলে কথা বলেন হিন্দুস্তান টাইমস বাংলার সঙ্গে।

কালিকাপ্রসাদ ভট্টাচার্যের শহরে এসে কেমন লাগছে? এর উত্তরে সোমলতা বলেন, ‘আমার কেরিয়ারের প্রথম দিকে একটি রিয়েলিটি শোয়ের জন্য কালিকাপ্রসাদ ভট্টাচার্যের সাক্ষাৎকার নিয়েছিলাম। লোকগান নিয়ে তাঁর গভীর জ্ঞান এবং গবেষণার সঙ্গে তখন পরিচিত হই। তাঁর বিষয়ে আলাদা করে বলার অপেক্ষা রাখে না। তাঁর হঠাৎ এভাবে চলে যাওয়া আমাদের একেবারে নাড়িয়ে দিয়েছিল। কিছু কিছু মৃত্যু ঠিক মেনে নেওয়া যায় না, ওঁনারটাও ঠিক তেমনই, তিনি এটা ডিজার্ভ করতেন না। তাঁর কাজ এবং আদর্শকে এগিয়ে নিয়ে যাচ্ছেন দোহার। তাঁদের জন্য শুভকামনা আছে।’

আড্ডায় সোমলতা অ্যান্ড কোং। (ছবি সৌজন্যে বিশ্বকল্যাণ পুরকায়স্থ/হিন্দুস্তান টাইমস বাংলা)
আড্ডায় সোমলতা অ্যান্ড কোং। (ছবি সৌজন্যে বিশ্বকল্যাণ পুরকায়স্থ/হিন্দুস্তান টাইমস বাংলা)

অসমের লোকসংগীত অনেক বেশি সমৃদ্ধ এবং জাতীয় স্তরে বিভিন্ন সময় স্বীকৃতি পেয়েছে এটি। অসমের গায়করা টলিউডের বহু গান গেয়েছেন। তবে সোমলতা মনে করেন, এখনও এই অঞ্চলের লোকসংগীত যোগ্য সম্মান পায়নি। তিনি বলেন, ‘মাটির গানের ব্যাপারটাই আলাদা থাকে, পশ্চিমবঙ্গের লোকগান এখন টলিউডে অনেকটা জায়গা করে নিয়েছে। তবে অসমের এত সমৃদ্ধ লোকসংগীত এখনও ততটা জায়গা পায়নি। পাপন একজন জাতীয় স্তরের গায়ক, তাঁর কাছ থেকে আমরা অসমের গানের ব্যাপারে ধীরে ধীরে শিখছি এবং অনেক কিছু জানতে পারছি। আমাদের ইচ্ছা রয়েছে কোনওদিন অসমের লোকসংগীত নিয়ে কাজ করব।’

সম্প্রতি অসমের করণ দাসের ‘অনুভবী হিয়া’ ভাইরাল হয়েছে, এই প্রসঙ্গ টেনে সোমলতা বলেন, ‘অরিজিনাল গানের প্রতি প্রত্যেকের টান থাকে। আমরা পশ্চিমবঙ্গে থেকেও অনুভবী হিয়া শুনছি এবং উপভোগ করছি। এত ভালো একটি গান প্রত্যেকের ভালো লাগছে গানটির নিজস্বতার জন্য।’

‘সোমলতা অ্যান্ড দ্য এসেস’ ব্যান্ডের অর্ণব রায়, অভিষেক ভট্টাচার্য এবং তুষার বন্দ্যোপাধ্যায়কে নিয়ে রবিবার বিকেলে শিলচর এনআইটি উদ্যানে বসে খোলামেলা আড্ডা দেন সোমলতা। তাঁদের বাংলার একটি সফল মিউজিক ব্যান্ড আছে, যে ব্যান্ডকে দেখে শুধু পশ্চিমবঙ্গ নয়, তার বাইরেও অনেক তরুণ-তরুণী গায়ক হওয়ার বা ব্যান্ড গড়ে তোলার স্বপ্ন দেখছে। শিলচরের এক তরুণী সোমলতার সঙ্গে দেখা করার সুযোগ পেয়ে রীতিমতো কাঁপছিলেন, যা সোমলতার চোখে পড়ে। সেই তরুণী নিজেও গান গেয়ে ফেলেন। ভক্তকে নিয়ে ফটোর জন্য পোজ দেওয়ার পাশাপাশি সোমলতা তাঁকে স্টেজে এসে গান গাওয়ার প্রস্তাবও দেন।

‘সোমলতা অ্যান্ড দ্য এসেস’ (ছবি সৌজন্যে বিশ্বকল্যাণ পুরকায়স্থ/হিন্দুস্তান টাইমস বাংলা)
‘সোমলতা অ্যান্ড দ্য এসেস’ (ছবি সৌজন্যে বিশ্বকল্যাণ পুরকায়স্থ/হিন্দুস্তান টাইমস বাংলা)

গায়ক হতে চাওয়া বা মিউজিককে কেরিয়ার হিসেবে বেছে নেওয়ার ক্ষেত্রে সফলতার চাবিকাঠি কোথায়? এই প্রশ্নের উত্তরে সোমলতা বলেন, ‘নিজের উপর বিশ্বাস রেখে লাগাতার পরিশ্রম করে যেতে হবে। বিভিন্ন চ্যানেলে রিয়েলিটি শো হচ্ছে এবং সেখানে অত্যন্ত উন্নতমানের গায়ক-গায়িকারা নিজেদের তুলে ধরছেন। তবে বহুদিন টিকে থাকতে হলে দরকার নিজস্বতা, নিজের স্তরকে উন্নত করার লাগাতার প্রয়াস, নিজের উপর বিশ্বাস রাখা এবং কঠিন পরিস্থিতি কাটিয়ে সফলতার দিকে এগিয়ে যাওয়া। অনেকেই কিছুটা সাফল্য পেলেই পরিশ্রম করা ছেড়ে দেন এবং কেউ কেউ নিজস্বতাকে ভুলে যান। হয়ত এই বিষয়গুলি অনেকের ক্ষেত্রে কাজ করে। আমরা সবসময়ই অরিজিনাল গানের প্রতি আকৃষ্ট হই এবং আমার মনে হয়, শ্রোতারাও এটাই চান।’

অর্ণব রায় বলেন, ‘গায়ক-গায়িকারা প্রথমেই কভার সঙের দিকে ঝুঁকে যায়। অবশ্যই পুরনো গানকে বাঁচিয়ে রাখতে হবে এবং সেগুলি থাকবে, যখন নতুন গায়করা পুরনো গান গাইবেন। তবে নতুন গান তৈরি করতে হবে এবং সেগুলি হতে হবে অরজিনাল। যদিও সোশ্যাল মিডিয়ার জগতে কখনও ভুল বেঞ্চমার্ক তৈরি হচ্ছে এবং একাংশ নতুন গায়ক-গায়িকারা সেটাকেই সত্য বলে ধরে নিয়ে এগিয়ে যাচ্ছে।’

এই কথার সূত্র ধরেই অভিষেক বলেন, ‘আজকের শ্রোতারা পাঁচ মিনিট ধরে গান শুনতে চাইছেন না, ৩০ সেকেন্ডের রিল দেখছে আজকের প্রজন্ম। তারইমধ্যে গায়কদের এমন কিছু করতে হবে, যা দর্শক-শ্রোতাদের আকৃষ্ট করতে পারে।’ তুষার মনে করেন, এখন আর লেজেন্ডারি বিষয়টা নেই। গায়করা সফল হচ্ছে কিন্তু এই সফলতা কিছু ক্ষেত্রে এক বছরের জন্যই টিকছে। তিনি বলেন, ‘কখনও এমন লোক সফল হচ্ছেন, যাঁর যোগ্যতা অনেক কম এবং তাঁর থেকে অনেক ভালো শিল্পীরা পিছিয়ে থাকছেন। আজকের ইন্টারনেটের যুগে এটাই বাস্তব।’

আরও পড়ুন: ভালোবাসার খোঁজে ‘শ্রীমতী’ স্বস্তিকা, অপূর্ণ ইচ্ছের কথা বলল সোমলতার ‘শোন শোন’

ব্যান্ডের সদস্যরা জানান, তাঁরা খাদ্যরসিক এবং যে কোনও এলাকায় অনুষ্ঠানের আমন্ত্রণ পেলে সেখানের বিশেষ খাবারটি খেতে চেষ্টা করেন। অসমের বরাক উপত্যকায় পূর্ববঙ্গের খাবারের ছাপ রয়েছে এবং সুযোগ পেলে শুঁটকি মাছ খেতে চান সোমলতা।

For all the latest entertainment News Click Here 

Read original article here

Denial of responsibility! TechAI is an automatic aggregator around the global media. All the content are available free on Internet. We have just arranged it in one platform for educational purpose only. In each content, the hyperlink to the primary source is specified. All trademarks belong to their rightful owners, all materials to their authors. If you are the owner of the content and do not want us to publish your materials on our website, please contact us by email – [email protected]. The content will be deleted within 24 hours.