কলকাতার হাঁসফাঁস গরমে রাজস্থানের ভিজ্যুয়াল ট্রিট! সফর কেমন কাটল একেনের?
একেই কলকাতার তাপমাত্রা যে হারে বেড়েছে তাতে সকাল বা দুপুরে রাস্তায় বেরোলে এমনই মরুভূমি মার্কা ফিল পাওয়া যাচ্ছে। এবার সেই ফিলিংকে আরও জোরদার করতে একেন বাবু সমস্ত দর্শকদের রাজস্থানে নিয়ে গিয়ে ষোলোকলা পূর্ণ করলেন। চোখেও মরুভূমির দেখা মিলল এবার, তাও ফাটাফাটি ভাবে এবং নিজের শহরে বসেই!
১৪ এপ্রিল, নববর্ষের প্রাককালে একেন তাঁর দলবল নিয়ে সোজা থর মরুভূমিতে হাজির হয়েছেন। দর্শকদের ভিজ্যুয়াল ট্রিট দিতে এবার আর ওয়েব মাধ্যম নয়, বড়পর্দায় এল এই ছবি। মুক্তি পেল দ্য একেন রুদ্ধশ্বাস রাজস্থান। আবারও নাম ভূমিকায় মাছে ভাতে, মিষ্টি থুড়ি কিপটে এবং চরম বাজে বকা অথচ বুদ্ধিদীপ্ত গোয়েন্দা হিসেবে ধরা দিলেন অনির্বাণ চক্রবর্তী। বাপি হয়ে সঙ্গে ছিলেন সুহোত্র মুখোপাধ্যায় এবং ‘প্রমথ’ সোমক ঘোষ।
প্রথমে আসা যাক গল্প থেকে অভিনয় এবং স্ক্রিনপ্লেতে। সুজন দাশগুপ্তর গল্প অবলম্বনে তৈরি এই ছবিতে দারুণ ভাবে উঠে এসেছে রাজস্থানের সৌন্দর্য। যোধপুর থেকে জয়সালমেরের পথঘাট, গাদিসার লেকের সৌন্দর্য থেকে সোনার কেল্লা সবই নিখুঁত ভাবে এই ছবিতে তুলে ধরা হয়েছে। ড্রোন শটগুলো এমন ভাবে নেওয়া হয়েছে যে আপনিও ওঁদের সঙ্গে স্বচ্ছন্দে রাজস্থান ঘুরে ফেলতে পারবেন।
এই ছবির গল্প আবর্তিত হয়েছে দুই মূর্তি লোপাটকে কেন্দ্র করে। ইন্দাস ভ্যালি সিভিলাইজেশনের ষাঁড় যা কালিবঙ্গান থেকে উদ্ধার করা হয়েছিল সেটি এবং প্রাচীন আরও একটি নটরাজ মূর্তি লোপাট করে ফেলে পাচারকারীরা। গোটা ঘটনায় জড়িত থাকেন অ্যান্টিক জিনিস সংগ্রাহক এবং মিউজিয়ামের কর্মীরা। সেই গল্পকে কেন্দ্র করে এই ছবি এগিয়েছে। অক্সফোর্ডের প্রত্নতত্ত্ব বিভাগের এক অধ্যাপক এসেছেন এই মূর্তিগুলোর খোঁজ খবর করতে। রাজস্থানে স্রেফ বেড়াতে গিয়ে একেন এই ঘটনায় জড়িয়ে পড়েন। এবং তাঁর তীক্ষ্ণ বুদ্ধি এবং পর্যবেক্ষণ দৃষ্টির সাহায্যে তিনি গোটা কেস সমাধান করেন।
এই ছবিতে ক্যামেরার কাজ বেশ কিছু জায়গায় নজর কেড়েছে। রম্যদীপ সাহার কাজ বেশ প্রসংশনীয়। উদাহরণ হিসেবে বলা যেতে পারে সোনার কেল্লার ফার্স্ট লুক। আপনার মুখ থেকে আপনাআপনি ‘বাহ’ শব্দ উচ্চারিত হবে। কিংবা রাতের জয়সালমেরর দৃশ্যে। বা ছবির শেষের গাড়ি চেজ করা এবং উটের পিঠে দৌড়ের দৃশ্যও বেশ ভালো।
বাঙালি মানেই যে সে ভোজনরসিক হবে সেটা আর বলার অপেক্ষা রাখে না। সবেতেই খাবারের যোগ, বা আড্ডার মাঝে খাবারের গল্প উঠে আসা মাস্ট। কিংবা চরম পত্নীব্রতা স্বামীর মতো তাঁকে নিছক ভয় পাওয়া এবং কারণে অকারণে তাঁকে অবলীলায় ঢপ দেওয়া হোক বা মিষ্টি অথচ পাতি কিছু জোকস এই ছবিতে প্রাণ এনেছে। আর অনির্বাণ চক্রবর্তী প্রতিটা জিনিসকেই সুন্দর ভাবে ফুটিয়ে তুলেছেন। সুহোত্র এবং সোমক আবারও নিজ নিজ চরিত্রে বেশ ভালো অভিনয় করলেন। এছাড়া অন্যান্য চরিত্রে রজতাভ দত্ত, সন্দীপ্তা সেন, রাজেশ শর্মা, সুদীপ মুখোপাধ্যায় বেশ ভালো। কারও অভিনয় বাড়তি বা ম্লান মনে হয়নি। একদম যেন সিন্ড্রেলার জুতো। সবটা মাপে মাপে ফিট করে গিয়েছে।
তবে খারাপ কি কিছুই নেই? আছে। অকারণ বারবার নানা জিনিসের বিজ্ঞাপন দেখানোয় কোথাও গিয়ে যেন তাল কেটেছে। কিন্তু সেটুকুকে বাকি সবটার জন্য আব্বুলিশ করে দেওয়াই যায়।
এই গরমে মানুষ গলিয়ে দেওয়ার মতো আতঙ্ক আর একেনের টাইটেল ট্র্যাক গুনগুন করতে করতেই হল ছাড়বেন দর্শকরা। ফলে জয়দীপ মুখোপাধ্যায়ের এই ছবি যে নববর্ষে ভালোই উপহার দিল যে সেটা বলা যায়।
রেটিং: ৪.২/৫
For all the latest entertainment News Click Here