ওপেনিং জুটি এবং পেস বোলিং পাকিস্তানের অক্সিজেন, কিন্তু মিডল অর্ডারই মস্ত কাঁটা
১৯৯২ সালে অস্ট্রেলিয়ার মেলবোর্নে ইংল্যান্ডকে হারিয়ে নিজেদের ক্রিকেট ইতিহাসে প্রথম বারের মত বিশ্বকাপের শিরোপা ঘরে তুলেছিলো পাকিস্তান। এ বারের টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপও হবে সেখানেই। এ বারের অস্ট্রেলিয়া বিশ্বকাপ নিয়ে তাই নস্ট্যালজিক পাকিস্তান। বড় স্মৃতিকাতর পাকিস্তান।
গত টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপেও দারুণ পারফর্ম করে সেমিফাইনালে ওঠে বাবর আজমের দল। তবে সেমিফাইনালে অস্ট্রেলিয়ার কাছে হেরে যায় তারা। সম্প্রতি পাকিস্তানের পারফরম্যান্সের গ্রাফটা কিছুটা নিম্নমুখী। এমন কী কিছু দিন আগেই নিজেদের মাঠে ৪-৩ ব্যবধানে ইংল্যান্ডের কাছে কাছে টি-টোয়েন্টি সিরিজ হারতে হয়েছে বাবর আজমের দলকে।
আরও পড়ুন: পাক মিডল অর্ডারই সবচেয়ে বেশি চিন্তায় রেখেছে, এ বার মুখ খুললেন বাবরও
পাকিস্তানের ওপেনি জুটি এবং বোলিং যেমন তাদের সবচেয়ে বড় শক্তি। তেমনই তাদের মিডল অর্ডারের পারফরম্যান্স চিন্তায় রেখেছে পাকিস্তানকে। এক নজরে দেখে নিন পাকিস্তানের শক্তি এবং দুর্বলতাগুলো:
পাক ব্রিগেডের শক্তি
১) পাকিস্তানের সবচেয়ে বড় শক্তির জায়গা তাদের দুই ওপেনিং ব্যাটার বাবর আজম এবং মহম্মদ রিজওয়ান। আইসিসি টি-টোয়েন্টি ব্যাটার র্যাঙ্কিংয়ে সেরা তিনে আছেন পাকিস্তানের এই দুই ব্যাটিং ভরসা। ক’দিন আগেই বিশ্বকাপের ১৬ দলের ওপেনিং জুটি বিশ্লেষণ করে একটি র্যাঙ্কিং তৈরি করেছিলো আইসিসি। সেখানে এক নম্বরেই জায়গা করে নিয়েছেন দুই পাক ওপেনার অধিনায়ক বাবর আজম এবং উইকেটরক্ষক ব্যাটার মহম্মদ রিজওয়ান। অন্য যে কোনও জুটির চেয়ে এই দুই ওপেনারের গড় সবাইকে চমকে দেয়ার জন্য যথেষ্ট।
২) ব্যাটিংয়ে পাকিস্তানের ভরসা হতে পারেন হায়দার আলি এবং শান মাসুদও। এই বছর ঘরোয়া ক্রিকেটে দুর্দান্ত পারফর্ম করেছেন শান মাসুদ। গত মরশুমে পিএসএলে তৃতীয় সর্বোচ্চ রান সংগ্রাহক ছিলেন তিনি। এই বছর ইংল্যান্ডের টি-টোয়েন্টি ব্লাস্টেও বেশ সফল তিনি।
৩) ব্যাটিংয়ে যেমন দুই ওপেনার পাকিস্তানের বড় ভরসার নাম, তেমনই পাকিস্তানের বড় নির্ভরতার জায়গা পেস বোলাররা। সময়ের সেরা কয়েক জন বোলিং প্রতিভা পাকিস্তানের জার্সি গায়ে চড়িয়েছেন। শাহিন শাহ আফ্রিদি, নাসিম শাহ, হ্যারিস রউফরা ধরে রেখেছেন পাকিস্তানি পেসারদের ঐতিহ্য।
৪) স্পিন আক্রমণটাও বেশ শক্তিশালী পাকিস্তানের। লেগ স্পিনিং অলরাউন্ডার শাদাব খানের ওপর দল একটু বেশিই ভরসা করবে পাকিস্তান। শেষ ১০ ম্যাচে ৯ উইকেট পাওয়া শাদাবের বড় গুণ প্রয়োজনের সময় ব্রেকথ্রু এনে দেওয়া।
আরও পড়ুন: আমি পাক অধিনায়ক হলে সূর্যকুমাদের গুরুত্বই দিতাম না- কটাক্ষ পাকিস্তান প্রাক্তনীর
পাক ব্রিগেডের দুর্বলতা
১) পাকিস্তানের ব্যাটিং লাইনআপ খুব বেশি মাত্রায় দুই ওপেনারের ওপর নির্ভরশীল। ধারাবাহিক ভাবে রান করে যাওয়া বাবর-রিজওয়ান ব্যর্থ হলেই, বেশির ভাগ সময়ে তাসের ঘরের মতোই ভেঙে পড়ে পাকিস্তানের মিডল-অর্ডার। শান মাসুদ শেষ ইংল্যান্ড সিরিজে দুই ইনিংসে রান পেলেও, এখনও দলের ভরসার জায়গা হয়ে উঠতে পারেননি। আর এক প্রতিভাবান ব্যাটার হায়দার আলির ধারাবাহিকতার অভাব রয়েছে। ২৯টি ম্যাচ খেলে ফেললেও, এখনও প্রতিভাবান তকমা ছেড়ে প্রতিষ্ঠিত ব্যাটার হতে পারেননি তিনি।
২) ব্যর্থ ইফতিখার আহমেদও। ৩২ বছর বয়সী এই ব্যাটার বলের সঙ্গে পাল্লা দিয়ে রান তুলতে রীতিমতো সংগ্রাম করেন। বিশ্বকাপে টপ ও মিডলঅর্ডারে পারফর্মারের অভাব ভোগাতে পারে পাকিস্তানীদের।
৩) পাকিস্তানের শক্তি যে ওপেনিং জুটি, সেটাই কখনও কখনও তাদের বড় দুর্বলতা হয়ে দাঁড়ায়। বাবর-রিজওয়ান দু’জনেরই ব্যাটিং একই ঘরানার হওয়ায়, শুরু থেকে আক্রমণের প্রবণতা দেখা যায় না তাদের। দু’জনেরই সেট হতে হতে বেশ কিছু বল খরচা হয়ে যায়। যা চাপ বাড়ায় দলের উপর। তা ছাড়া টি-টোয়েন্টির শীর্ষ ব্যাটার রিজওয়ানের বিপক্ষে বড় অভিযোগ, তিনি মাঠে সেট হয়ে গেলেও পারেন না রানের গতি বাড়াতে। অভিযোগের সত্যতা মেলে তার স্ট্রাইকরেটেও। টি-টোয়েন্টি ক্রিকেটে ১২৮.৩৭ স্ট্রাইকরেট আহামরি নয়।
৩) পাকিস্তান দলে নেই কার্যকরি কোনও ফিনিশার। অলরাউন্ডার শাদাব খান বা আসিফ আলি বেশির ভাগ ম্যাচেই ব্যর্থ দায়িত্ব পালনে।
৪) শক্তিশালী বোলিং লাইনআপ হলেও পাকিস্তানের পেসারদের রয়েছে অভিজ্ঞতার অভাব। শাহিন ও হ্যারিস ছাড়া বাকিরা খুব বেশি টি-টোয়েন্টি না খেলায় অস্ট্রেলিয়ান কন্ডিশনে মানিয়ে নিতে কিছুটা সমস্যায় পড়তে পারেন।
For all the latest Sports News Click Here