ওদের জন্য হাততালি দেওয়ার অপেক্ষায়- লক্ষ্মী-মনোজরাই করুন স্বপ্ন পূরণ,চান অরুণ লাল
৩২ বছর আগে বাংলার শেষ রঞ্জি ট্রফি জয়ের নায়ক ছিলেন অরুণ লাল। তিনি বাংলা দলের সাফল্য এবং ব্যর্থতা সবটাই দেখেছেন সামনে থেকে। কোচ হিসেবেও তিনি নজিরবিহীন ভাবে বাংলাকে চ্যাম্পিয়নের পোডিয়ামে তুলে ফেলার মোক্ষম সুযোগ পেয়েছিলেন বছর তিনেক আগেই। এই সৌরাষ্ট্রের কাছেই হেরেই স্বপ্ন ভঙ্গ হয়েছিল বাংলার। এ বার ফের রঞ্জির ফাইনালে বাংলা। প্রতিপক্ষ সেই সৌরাষ্ট্র। তবে ভেন্যু বদলেছে এ বার। তিন বছর আগে সৌরাষ্ট্র তাদের ঘরের মাঠে খেলেছিল। এ বার বাংলার ঘরের মাঠ ইডেনে হবে ফাইনাল ম্যাচ।
লক্ষ্মীবারে বাংলা যখন ইতিহাসের খোঁজে নামবে গঙ্গাপাড়ের মিথ হয়ে যাওয়া স্টেডিয়ামে, তখন দলের সঙ্গে না থেকেও ভীষণ ভাবে থাকবেন জগদীশলাল অরুণ লাল। গত মরশুমে মধ্যপ্রদেশের কাছে সেমিফাইনালে হারের পর অরুণ লাল বাংলার প্রধান কোচের পদ থেকে সরে দাঁড়ান। তবে এ বার তিনি মনোজ তিওয়ারি-লক্ষ্মীরতন শুক্লাদের সাফল্যের দিকে চেয়ে রয়েছেন। প্লেয়ার হিসেবে পারলেও, কোচ হিসেবে যে কাজটা তিনি করতে পারেননি, অরুণলাল চান, লক্ষ্মীর কোচিংয়ে এ বার ৩৩ বছরের অধরা শিরোপাই জিতে দেখাক বাংলা।
বাংলা টিমের প্রশংসা করে অরুণলাল বলেছেন, ‘বাংলা গত পাঁচ বছরে শীর্ষ পাঁচটি দলের মধ্যে রয়েছে এবং তারা আগামী ১০ বছরে তারা শীর্ষে থাকবে। কারণ বাংলা টিম গতি, ভারসাম্য এবং বিশ্বাস পেয়েছে এবং তারা ভালো ক্রিকেট খেলছে। দুর্ভাগ্যবশত, তারা রঞ্জি ট্রফি জিততে পারেনি। কিন্তু আমি মনে করি, পরের পাঁচ বছরের মধ্যে অন্তত দু’বার ওরা শিরোপা জিতবে। এই বছরও জিতবে। আমার কাছে বাংলাই ফেভারিট।’
আরও পড়ুন: Ranji Final-এ DRS, মনোজের দাবি, প্রথম শ্রেণির সব ম্যাচেই চালু হোক
বাংলার হয়েই ১৯৮৯-৯০ মরসুমে রঞ্জি জিতেছিলেন অরুণ লাল। কিন্তু কোচ হিসেবে সেই সাফল্য পাননি। যার জন্য আক্ষেপও রয়েছে তাঁর। অরুণ লাল বলছিলেন, ‘আমরা ২০২০ সালে ফাইনাল খেলেছি। তার পর গত বছর আমরা সেমিফাইনালি খেলেছি। জয়, পরাজয়, ফলাফল কখনও কখনও বিভিন্ন কারণের উপর নির্ভর করে। আপনি গুরুত্বপূর্ণ টস হেরে যান। উইকেট এমন হয় যে, যখন প্রতিপক্ষ ব্যাট করে, তখন এটি দুর্দান্ত এবং আপনি যখন ব্যাট করতে শুরু করেন, তখন অনেক কিছু খারাপ ঘট তে থাকে।’
ইশান পোড়েল, মুকেশ কুমার এবং আকাশ দীপ- এই তিন জন পেসার নিয়ে অরুণ লাল বাংলাকে একটি ভালো পেস-বোলিং ইউনিট বানিয়ে সাফল্যের বীজ বপন করেছিলেন। এ বার কিন্তু অকাশদীপদের দাপটে পারফরম্যান্সেই গুড়ি যাচ্ছে প্রতিপক্ষ। সৌরাষ্ট্রের বিরুদ্ধে ফাইনালে এই পেসাররাই বাংলার ভরসা হতে চলেছে। সেই সঙ্গে বাঁ-হাতি স্পিনিং অলরাউন্ডার শাহবাজ আহমেদের দুরন্ত ছন্দও বাংলার শক্তি বাড়িয়ে তুলেছে।
বাংলাকে এই মুহূর্তে ভারতের সেরা বোলিং দল হিসেবে অভিহিত করে অরুণ লাল বলেছেন, ‘তরুণরা সত্যিই ভালো করছে। আকাশ দীপের দিকে তাকান, বোলার হিসেবে ও সত্যিই উন্নতি করেছে। দেশের সেরা বোলিং ডিপার্টমেন্ট আমাদের দলে। বাংলার বিপক্ষে ৩০০ রান করাটা এখন মোটেও সহজ কাজ হবে না। শাহবাজ একজন চ্যাম্পিয়ন প্লেয়ার, অবশ্যই মুকেশ, ইশান বোলিংয়ের সেরা ফর্মে রয়েছে। বোলিং বাংলার প্রধান শক্তি।’
আরও পড়ুন: পেসারদের খেলতে সমস্যা হয় সৌরাষ্ট্রের, আশা করি ইডেনের পিচে সুবিধে পাব- দাবি মনোজের
এ ছাড়াও প্রতিভাবান ভারতীয় ‘এ’ দলের ব্যাটার অভিমন্যু ঈশ্বরণের দৃঢ়তা, অভিজ্ঞ অনুষ্টুপ মজুমদারের পরিপক্কতা এবং ব্যাট হাতে তরুণ সুদীপ ঘরামির আগুনে ফর্ম এই মরশুমে বাংলাকে একের পর এক সাফল্য এনে দিচ্ছে। সেই সঙ্গে তো রয়েছেই কোচ লক্ষ্মীরতন শুক্লা এবং অধিনায়ক মনোজ তিওয়ারির মধ্যে রসায়ন। অরুণ লাল বলছিলেন, ‘ সুদীপ ঘরামি দুর্দান্ত ছন্দে রয়েছে। ও আগামী ১০ বছর চুটিয়ে খেলবে। ও সম্ভবত পরবর্তী অনুষ্টুপ মজুমদার হতে চলেছ। আমি ছেলেটিকে নিয়ে খুব আশাবাদী। ও প্রতিটি ম্যাচেই স্কোর করছে। ও একজন দুর্দান্ত প্লেয়ার। আমার মনে হয়, ও অনেক বড় কিছু করবে। পাশাপাশি ও সেরা পাঁচ ফিল্ডারের একজন। আর আমি অনুষ্টুপকে পছন্দ করি খুব। ও একজন পরম নায়ক, বাংলার জন্য একজন কিংবদন্তি।’
তিনি আরও যোগ করেছেন, ‘কোচ হিসেবে লক্ষ্মী দুর্দান্ত কাজ করছে এবং অধিনায়ক হিসেবে মনোজও দুরন্ত। ওরা মিলিয়ে ভাবে অসাধারণ কাজ করছে, আমি কেবল ওদের মঙ্গল কামনা করছি। ওরা ট্রফি হাতে তুলবে, আর আমি হাততালি দেব, সেই অপেক্ষাই করছি।’
ফাইনালে বাংলার জয়ের মন্ত্র কী হবে? অরুণ লাল বলেছেন, ‘যে রকম ভাবে খেলে এসেছে, সে ভাবেই খেলতে হবে। সেমিফাইনালের মতো খেললেই হবে। বাংলার ব্যাটিং, বোলিং, ফিল্ডিং সবকিছু ঠিকঠাক আছে। কোচ এবং অধিনায়ক এবং সাপোর্ট স্টাফদের শুভেচ্ছা, ওরা দুর্দান্ত কাজ করেছে।।’
For all the latest Sports News Click Here