ওঁকে দেখে কেউ সাহস পেলে মন্দ কী?- সুচেতনার ইচ্ছাকে কুর্নিশ সুজয় প্রসাদ-রত্নাবলী

বহু বছর ধরেই LGBTQ গোষ্ঠী আন্দোলনের সঙ্গে যুক্ত থেকেছেন সুচেতনা ভট্টাচার্য। এবার সিদ্ধান্ত নিলেন লিঙ্গ পরিবর্তন করার। বুধবার, ২১ জুন বুদ্ধদেব ভট্টাচার্যর কন্যা সুচেতনা জানিয়ে দেন, ‘মানসিকভাবে আমি ট্রান্স-ম্যান, এবার আমি শারীরিকভাবে পুরুষ হতে চাই।’ তিনি জানিয়েছেন তাঁর বিশেষ বান্ধবী সুচন্দার সঙ্গে নতুন করে জীবন শুরু করতে। পথ চলতে। স্রেফ লিঙ্গ পরিবর্তন নয়, তিনি আইনিভাবেই সুচেতন হতে চান। সেই পথেও এগোচ্ছেনও তিনি। তাঁর এই ইচ্ছের কথা প্রকাশ্যে আসতেই হইচই পড়ে গিয়েছে একপ্রকার।

অনেকেই তাঁকে কটাক্ষ করেছেন। চলেছে নোংরা মশকরা, ট্রোলিং। সঙ্গে জুড়ে গেছে রাজনৈতিক পরিবারের কন্যা হওয়ার বিষয়টাও। যদিও দেবাংশু ভট্টাচার্য বা মদন মিত্রের মতো নেতারা তাঁর এই সিদ্ধান্তকে সমর্থন করেছেন তবুও সোশ্যাল মিডিয়ার মুখ কী এত সহজে বন্ধ হয় যেখানে ট্রোল করার কোনও হট টপিক পাওয়া গিয়েছে!

আসলে সময় এগোলেও সমাজে রূপান্তরকামী বা তৃতীয় লিঙ্গের মানুষদের নিয়ে একটা ছুঁৎমার্গ রয়ে গিয়েছে। এই বিষয়ে HT বাংলার তরফে অভিনেতা সুজয় প্রসাদ চট্টোপাধ্যায়ের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন, ‘ট্রোলাররা না একটা জাতি। এই একটা নতুন জাতি সমাজে গড়ে উঠেছে। আর এঁদের শেষ করার অভিপ্রায় আমার নেই। আর পাত্তা দিলে কাঁদতে বসতে হবে। এঁরা অনেকটা প্যারাসাইটের মতো। জীবনে এগোতে গেলে এঁদের জীবন থেকে স্রেফ ফ্লাশ করে দিতে হবে। পাত্তা দিলে চলবে না।’ তিনি এই প্রসঙ্গে আরও বলেন, ‘কেবল সাধারণ মানুষ তো নয়। মিডিয়া অনেক সময় ট্রোল করে। সেটাও তো একই জিনিস। কে কী পরছে, কার সঙ্গে থাকছে সবটা নিয়েই যখন কটাক্ষ করা হয়, সেটাকেও তো ট্রোলিং বলে। সেটার প্রভাবও তো একই হয়।’

কেবল সুজয় প্রসাদ নন, প্রায় একই মত পোষণ করলেন সচেতন নাগরিক রত্নাবলী রায় এই প্রসঙ্গে বলেন, ‘এই যে ট্রোলিংয়ের কথা আপনি বলছেন, তার পিছনে তিনটে আলাদা কিন্তু পরস্পর সম্পর্কিত কারণ আছে বলে আমার মনে হয়। এক, পশ্চিমবঙ্গের পার্টি সোসাইটিতে কোনো ঘটনার প্রতিক্রিয়া জানাতে গিয়ে, দলীয় আনুগত্যের শর্তপূরণের একটা তাগিদ থাকে। এটা একদিনে তৈরি হয়নি, দীর্ঘ ইতিহাস রয়েছে তার। সুচেতনের পারিবারিক পরিচয়, এই অনুগত প্রতিক্রিয়ার তীব্রতা বাড়িয়েছে। আর দুই, সুচেতনের এই আত্মপ্রকাশের পিছনে সাহস যোগানোর জন্য যে রাজনৈতিক আন্দোলন আছে সেটাকে আমি স্যালুট করছি, তার ব্যাপ্তি সমাজের সমস্ত অংশে এখনও একরকম নয়।’ ট্রোলিংয়ের বিষয়ে তিনি কথা বলতে গিয়ে ব্যাখ্যা করে বলেন, ‘মানসিক স্বাস্থ্যের অধিকার নিয়ে কাজ করি তো তাই ট্রোলিং যে বিষয়েই হোক না কেন, সমর্থনযোগ্য নয়। এই সময়ে, একরকমের স্ট্রিটস্মার্ট ওপরচালাক প্রতিক্রিয়ার রমরমা চলছে। ট্রোলিং তার একটা নিষ্ঠুর প্রকাশভঙ্গী। সমর্থনযোগ্য নয়। ব্যাপারটা যে কোনও সময় ট্রোলারের দিকেও ফিরে আসতে পারে। এ বার্তা যদি লোকে শুনতেন, আমাদের কাজ খানিকটা সহজ হতো।’।

সুচেতনা যে এমন সিদ্ধান্ত নিয়েছেন সেটাকে কুর্নিশ জানিয়ে সুজয় প্রসাদ বলেন, ‘ওঁর ব্যক্তিগত এই অবস্থানকে আমি সম্মান জানাই। ভীষণই অনুপ্রেরণাদায়ক সিদ্ধান্ত। আগামী প্রজন্মকে অনেকটা সাহস জোগাবে। তাঁকে দেখে একটা প্রজন্ম যদি শেখে, সাহস পায় তার থেকে ভালো কীই বা হতে পারে।’ রত্নাবলী জানান, ‘সম্ভবত নিজের সঙ্গে একটা দীর্ঘ যুদ্ধের পরে সুচেতন এই ঘোষণার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন। তাঁর সামাজিক প্রভাব যতটা সেখানে হয়তো আরও কিছু মানুষ নিজের সঙ্গে যুদ্ধটা করার রসদ পাবেন। সেজন্যই সুচেতন অভিনন্দনযোগ্য।’

রত্নাবলী রায়ের থেকে যখন জানতে চাওয়া হয় তিনিও কি মনে করেন সুচেতনার এই পদক্ষেপ অনেককে সাহস জোগাবে? উত্তরে তিনি বলেন, ‘অনলাইন নিউজ পোর্টালের পাঠকের বাইরে কতজন জানবেন? বা ঠিক যা হয়েছে, যেভাবে হয়েছে সেটা জানবেন? বেশিরভাগের কাছেই একটা বিকৃত উপস্থাপনা পৌঁছবে এটার। একা সুচেতনের সিদ্ধান্ত সেগুলোর বিরুদ্ধে যথেষ্ট শক্তিশালী কি? যদি হতো, একজন মানুষের একান্ত ব্যক্তিগত এই সিদ্ধান্ত আদৌ খবর হওয়ার যোগ্য বলে বিবেচিত হতো কি? আপাতত বিষয়টা কিছুদিন চর্চায় থাকবে হয়তো! তার প্রভাব ঠিক কী হবে, সেটা সম্পর্কে আমি খুব নিশ্চিত নই। হতে পারে কেউ সাহস পেলেন। হতে পারে ট্রোলিং-এর তীব্রতা দেখে কেউ আরও ভয় পেলেন।’

‘সাহসের ব্যাপারটা যদি বা জানা যায়, ভয় পাওয়ার ব্যাপারটা তো প্রকাশ্যে আসবে না! হয়তো ব্যক্তিগতভাবে কেউ কেউ কিছুটা জানতে পারবেন। তখন কি আমরা বলব যে সুচেতন এই ঘোষণাটা না করলেই পারতেন! সাহস জোগানোর কৃতিত্ব দিতে হলে, ভয় পাওয়ার দায়টাও কি সুচেতনকে নিতে হবে?’ জরুরি অথচ কম আলোচিত এক প্রশ্ন এভাবেই পরিশেষে ছুঁড়ে দিলেন রত্নবলী।

For all the latest entertainment News Click Here 

Read original article here

Denial of responsibility! TechAI is an automatic aggregator around the global media. All the content are available free on Internet. We have just arranged it in one platform for educational purpose only. In each content, the hyperlink to the primary source is specified. All trademarks belong to their rightful owners, all materials to their authors. If you are the owner of the content and do not want us to publish your materials on our website, please contact us by email – [email protected]. The content will be deleted within 24 hours.