এ বছর মার্চে স্বামীকে হারালাম, একদিন বাদেই শ্যুটিংয়ে ফিরেছি: ‘খড়ির মা’ তনুকা
বাংলা টেলিভিশন জগতের অতি পরিচিত নাম তনুকা চট্টোপাধ্যায়। এই মুহূর্তে ‘গাঁটছড়া’ ধারাবাহিকে খড়ি-বনিদের মায়ের চরিত্রে দর্শক দেখছে তাঁকে। দীর্ঘ সময় ধরে একাধিক হিট মেগার অংশ থেকেছেন তিনি। সম্প্রতি লালকুঠি’, ‘সাহেবের চিঠি’তে গুরুত্বপূর্ণ চরিত্রে দেখা মিলেছে ষাট ছুঁইছুঁই অভিনেত্রীর। ‘গাঁটছড়া’র চন্দ্রা (তনুকা অভিনীত চরিত্র)-র প্রফেশন্যালিজম বরাবর প্রশংসিত হয়েছে টেলিপাড়ায়। সম্প্রতি ব্যক্তিগত জীবনের এমন এক ঘটনা ফাঁস করলেন অভিনেত্রী, যা শুনে স্তম্ভিত সকলে।
৩২ বছরের দাম্পত্য সঙ্গীকে গত মার্চেই তাঁকে ছেড়ে চলে গিয়েছে। শ্যুটিং সেটে বসেই পেয়েছিলেন সেই মৃত্যু সংবাদ। স্বামীকে হারিয়ে শোকস্তব্ধ অভিনেত্রী, তবুও সেই যন্ত্রণা বুকে চেপেই স্বামীর মৃত্যুর একদিন পরেই শ্য়ুটিং সেটে ফিরেছেন, চরিত্রের প্রয়োজনে সিঁথি সিঁদুরে রাঙিয়েছেন। টলি ফোকাসকে দেওয়া একান্ত সাক্ষাৎকারে তনুকা বলেন, ‘এই বছর ২৯শে মার্চ আমার স্বামী চলে গেছেন। বুঝতেই পারছো এখনও ঘা-টা দগদগে। আমি মনে করি এটা ঈশ্বরের আর্শীবাদ, যে কাজ ও যে কাজের পরিবেশ দুঃখটা সাময়িকভাবে ভুলিয়ে দিতে পারে। কাজের মধ্যে থাকলে খানিকটা হলেও কষ্টটা ভুলে থাকি, ঘা না শুকোলেও ভালো থাকার চেষ্টা করে চলেছি।’
ঘটনার দিনের স্মৃতি হাতড়ে অভিনেত্রী জানান, ‘যে-দিন ঘটনাটা ঘটে লাঞ্চ ব্রেকের সময় খবর পাই। গাঁটছড়ার মেকআপ রুমেই ছিলাম। ওদিনের শ্যুটিং আর শেষ করতে পারিনি। পরের দিনটা আমি ছুটি নিয়েছিলাম। তারপর দিন থেকেই আবার কাজে ফিরেছি। আসলে সোম থেকে রবি, সপ্তাহে সাতদিন টেলিকাস্ট কোথাউ একটা পেশাগত দায়বদ্ধতা থেকেই যায়। আসলে আমরা যখন কোনও চরিত্র হয়ে উঠি তখন নিজের সুখ-দুঃখ ভুলে সেই চরিত্রটার আবেগ নিয়েই থাকে, আমিও সেই চেষ্টা করেছি’।
এক ঝটকায় দুনিয়া বদলে গিয়েছে। ৩২ বছরের দাম্পত্য জীবনে তিনি পুরোপুরিভাবে স্বামীর উপর নির্ভরশীল ছিলেন, এ-কথা স্বীকার করে অকপটে জানান- ‘আজও লাঞ্চ টাইমে মাঝেমধ্যে মনে হয় ও ফোন করে বলবে- খেয়েছো?’ গলা ধরে আসে তাঁর। অভিনেত্রী বলেন, ‘আমার সঙ্গে আমার স্বামীর ৩২ বছরের বন্ধুত্ব। ও আমার চেয়ে বছর দশেকের বড় হলেও আমাদের সম্পর্কটা বন্ধুত্বের ছিল। ও যদি আমার সংসারটা ধরে না রাখতো আমি এই জায়গায় আসতে পারতাম না। মেয়েকে সামলানো থেকে সবকিছু ও করেছে। আমার সকাল থেকে রাত অবধি, সব ব্যাপারে সবার আগে আমার ওকেই চাই। আমার প্রোডাকশন থেকে জল দিতে দেরি করলে সেটাও আমি আগে ওকে ফোন করে জানাতাম। সেটা এখন মিসিং। তবে আমার মাথার ওপর এখনও মা রয়েছেন, আমার মেয়ে রয়েছে। ওদের কথা ভেবে আমি নিজের দুঃখটা সরিয়ে রেখেছি ভিতরে’।
‘দ্য শো মাস্ট গো অন’, নিজের অভিনয়ের শিক্ষাগুরু রবি ঘোষ তাঁকে এটাই শিখিয়েছে। এই মন্ত্রই নতুনদের মধ্যে বিলিয়ে দিচ্ছেন তনুকা। তাঁর এই সাহসিকতাকে কুর্নিশ জানাচ্ছে সকলে।
For all the latest entertainment News Click Here