এসেই বলল সরি! লোক দেখানো সারল্য় নয়, সত্যি অরিজিতের পা দু’টো মাটিতে আছে: পৌষালী
তাঁর খ্যাতি জগত জোড়া। তাঁর সুরেলা কন্ঠে মুগ্ধ আট থেকে আশি। সকলেই একবার তাঁকে ছুঁয়ে দেখতে চায়, কিন্তু অরিজিৎ সিং যেন সবার ধরা-ছোঁয়ার বাইরে। আবার শিকড়ের সঙ্গে জুড়ে থাকা একজন শিল্পী। জিয়াগঞ্জের এই ভূমিপুত্রের অন্ধভক্ত লোক সঙ্গীতশিল্পী পৌষালী বন্দ্যোপাধ্য়ায়, চার বছর ধরে অরিজিতের সঙ্গে সাক্ষাতের চেষ্টা চালাচ্ছিলেন। চলতি মাসের গোড়ায় সেই স্বপ্নপূরণ হয়েছে পৌষালীর। এখনও ঘোরের মধ্যে রয়েছেন পৌষালী। এক সাক্ষাৎকারে অরিজিৎ-এর সঙ্গে দেখা করার অভিজ্ঞতা নিয়ে মুখ খুললেন পৌষলী।
একজন শিল্পীর বিচার করতে হয় তাঁর হৃদয় দিয়ে। ভালোবাসার প্রতিদানে তাঁর সামান্য ভালো ব্যবহার কতটা আবেগী করে তোলে তাঁর অনুরাগীদের তাঁর প্রমাণ মিলল পৌষালীর কথায়। মানুষ হিসেবে সুপারস্টার অরিজিৎ সিং কেমন ‘সিনে চক্কর’-এর সঙ্গে একান্ত সাক্ষাৎকারে ভাগ করে নিয়েছেন পৌষালী। বহরমপুরের একটি শো করতে গিয়েছিলেন শান্তিনিকেতনের এই কন্যে। শেষ মুহূর্তেও জানতেন না এইবারও অরিজিতের সঙ্গে দেখা করবার অনুমতি মিলবে কিনা। গায়কের টিম বেশকিছু শর্তসাপেক্ষে ৫ মিনিট দেখা করবার অনুমতি দিলে অসুস্থ শরীরেই বহরমপুর থেকে মাঝরাতে জিয়াগঞ্জ ছোটেন পৌষালী। অনুমতি ছাড়া ছবি তোলা যাবে না, দু’জনের বেশি ভিতরে ঢোকা যাবে না-সহ একাধিক শর্ত, তবে সবকিছু মানতে রাজি পৌষালী। রাত সাড়ে বারোটার সময় অরিজিতের বাড়িতে পৌঁছানোর পরেই অরিজিৎ ঘরণীর ব্যবহারে মুগ্ধ হন পৌষালী। অতিথি আপ্যায়নে রসগোল্লা এসে হাজির হলেও উত্তেজনায় সেটি মুখে তোলেননি পৌষালী।
রেকর্ডিং স্টুডিও-তে ব্যস্ত অরিজিৎ ১০ মিনিট পর দর্শন দিলেন। প্রথমে এসেই যে কথা পৌষালীকে অরিজিৎ বলেন, তাতেই বাকরুদ্ধ গায়িকা। পৌষালী বলেন, ‘শুরুতে এসেই বলল, I’m So Sorry, আমি তোমাদের ১০ মিনিট বসিয়ে রেখেছি। এরপর জিগ্গেস করল, তুমি কি ধরণের গান নিয়ে কাজ করছো?’ পৌষালী গড়গড়িয়ে বলে চলেন, অরিজিৎ গান ছাড়া আর কিছুই বোঝেন না, তাঁর গোটা জগত গান নিয়েই। গায়ক পৌষালীকে নিজের মুখে বলেছেন- ‘জানো তো গান ছাড়া আমি আর কিছুই পারি না, আমার ওটাই আসে’। জিয়াগঞ্জে কেন থাকেন অরিজিৎ? অকপটে গায়কের জবাব- ‘হ্যাঁ, আমার বাড়ি জিয়াগঞ্জ, এখানেই সব। আমার এখানে থাকতে ভালোলাগে। তাছাড়া মা নেই, বাবার বয়স হয়ে গেছে’। ভবিষ্যতে ছেলেমেয়েদের শান্তিনিকেতনে পড়ানোর ইচ্ছাপ্রকাশ করেছেন অরিজিৎ, চেয়েছেন পৌষালীর সাহায্য।
গায়ক অরিজিতের থেকেও মানুষ অরিজিৎ অনেক বড়মাপের বুঝিয়ে দেন পৌষালী। লক্ষ লক্ষ মানুষ যার দিকে হাত বাড়িয়ে থাকে ভাবা যায়, সে এমন মাটির মানুষ এটা বিশ্বাস করতে খানিকটা সময় লেগেছে পৌষালীর। গায়িকা ওই সাক্ষাৎকারে বলেন, ‘অনেকে হয়তো প্রথম প্রথম ভেবেছে এটা লোকদেখানো সরলতা, সিম্প্যাথি পাওয়ার চেষ্টা। কিন্তু বিশ্বাস করো সেটা নয়, ৪০ মিনিট একটা মানুষকে বোঝার জন্য যথেষ্ট।’ কথা প্রসঙ্গে পৌষালী অরিজিৎ সিং-কে বলে বলেন, ‘আমি আপনার সাথে দেখা করব বলে বেশ কিছুদিন ধরে রেওয়াজ করে তবে এসেছি’। এই কথা শুনে অরিজিৎ মুচকি হেসে জবাব দেন- ‘তুমিও শিল্পী, আমিও শিল্পী, শিল্পীর সাথে শিল্পীর দেখা করতে আবার রিহার্সাল কীসের?’ ভবিষ্যতে পৌষালীর সঙ্গে লোকগান নিয়ে কাজ করার ইচ্ছাও প্রকাশ করেছেন গায়ক।
সবশেষে পৌষালীর সংযোজন, ‘অনেকে মুখে বলে, আমার পা দুটো মাটিতেই আছে, কিন্তু বিশ্বাস করো অরিজিৎ সিং-এর পা দুটো সত্যিই মাটিতেই আছে। আরেকটা কথা, অরিজিৎ সিং গানটা জেনে করে, বুঝে করে। আর সেই জন্যই ঈশ্বর ওকে দু-হাত ভরে আর্শীবাদ করছে…এটাই অরিজিৎ সিং’।
For all the latest entertainment News Click Here