এখনও অটুট ইচ্ছে নদীর কেমিস্ট্রি, অরিত্রের লেন্সে কোন গল্প বললেন বিক্রম-শোলাঙ্কি

শুরুতেই একটা স্পয়লার দেব? ‘শহরের উষ্ণতম দিনে’ ছবিটা যদি এখনও না দেখে থাকলে দেখে আসুন। কিন্তু প্রাক্তন বা যে বন্ধুর সঙ্গে এক সময় দারুণ বন্ধুত্ব এখন আর নেই, বহুদিন দেখা নেই, কথা নেই পারলে দেখে আসুন। কেন? এই উত্তরটা নাহয় নিজেই হলে গিয়ে খুঁজে নেবেন।

এবার আসি পরিচালক মশাই আপনার ব্যাপারে। এত ইমোশনাল ছবি কেউ বানায়, অ্যাঁ? ছত্রে ছত্রে কলকাতার বুকে ছড়িয়ে থাকা হাজারো মানুষের গল্প অবলীলায় বলে দিল এই ছবি। এই ছবি বন্ধুত্ব যাপনের, এই ছবি ভালোবাসার, এই ছবি বিচ্ছেদের, এই ছবি এই শহরকে যাঁরা ভালোবাসে তাঁদের প্রত্যেকের। এতটুকুই বোধহয় বলা যায়। যাক এতদূর পড়ে জানি অনেকেই মাথামুণ্ডু কিছুই বুঝতে পারছেন না যে আবেগে কী কী লিখে ফেললাম এবার না হয় ঠিকঠাক একটা রিভিউ দেওয়ার চেষ্টা করা যাক, কী বলেন?

অনিন্দিতা সোম ওরফে শোলাঙ্কি রায় একটি কলেজের এজিএস। পারিবারিক সূত্রেই তিনি একটি বিশেষ মতাদর্শে বিশ্বাসী। তাঁর দুই বন্ধু হলেন রেহান ওরফে রাহুল দেব বসু এবং ক্রিস্টিন ওরফে অনামিকা চক্রবর্তী। সঙ্গে আরও একজন আছেন যে অনিন্দিতার বন্ধু তো বটে, সঙ্গে তাঁকে ভালোবাসেন। সায়ক, ওরফে দেবপ্রিয় মুখোপাধ্যায়। আচমকাই একদিন কলেজে একটা ঝগড়ার মধ্যে দিয়ে আলাপ হয় ঋতবান ওরফে বিক্রম চট্টোপাধ্যায়ের সঙ্গে। তিনি ভালো ছবি তোলেন, টেবিল টেনিস খেলেন, এবং পরিবারের রীতি মেনে বিদেশে পড়তে যাওয়ার স্বপ্ন দেখেন। এই পাঁচের জমিয়ে বন্ধুত্ব হয় কলেজ লাইফে। তবে দেখতে দেখত অনিন্দিতা আর ঋতর একটু বেশিই ভালো বন্ধুত্ব হয়ে যায়। তাঁরা একে অন্যের পাশে থাকলে সাহস পান। ভরসা পান। এবং ক্রমেই সেই বিশ্বাস, ভরসা, বন্ধুত্ব প্রেমে গড়ায়। ঋতর কথা মেনে অনিন্দিতাও বিদেশের কলেজে অ্যাপ্লাই করে। চান্সও পায়। কিন্তু ঘটনাক্রমে পড়তে যাওয়া হয় না। ঋতবান একাই যান। এখানে ঘুরে যায় গল্পের মোড়।

যে যাঁর মতো তাঁরা জীবনে এগিয়ে যান। অনিন্দিতার জীবনে নতুন প্রেম আসে (নাকি আপোস?)। তিনি তাঁর স্বপ্নপূরণ করে পছন্দের পেশায় যুক্ত হয়েছেন। এমতাবস্থায় সব তোলপাড় করে শহরে ফেরে ঋতবান। এবার? সেই নিয়েই এই গল্প।

একটা নিখাদ প্রেম এবং বন্ধুত্বের গল্পকে দারুণ ভাবে ফ্রেমবন্দি করেছেন পরিচালক অরিত্র সেন। চরিত্রের সঙ্গে হাসিয়েছেন, কলকাতা ঘুরিয়েছেন, কলকাতাকে আরও একটু ভালোবাসতে শিখিয়েছেন। এবং অবশ্যই কাঁদিয়েছেন।

বিক্রম-শোলাঙ্কি জুটি আজও হিট। সেই ইচ্ছে নদীর কেমিস্ট্রি যেন আরও মজবুত হয়েছে। সহজ সাবলীল অভিনয়। রাহুল দেব বসু, অনামিকা চক্রবর্তী, দেবপ্রিয় মুখোপাধ্যায়, অনিন্দ্য চট্টোপাধ্যায় যে যাঁর চরিত্রে একদম পারফেক্ট।

<p>ছবির দৃশ্য</p>

ছবির দৃশ্য

এই ছবিতে এমন ছোটখাটো জিনিস তুলে ধরা হয়ে হয়েছে যা গোটা জিনিসটাকে আলাদা মাত্রায় নিয়ে গেছে। প্রথম সব কটা কবিতা। দ্বিতীয় গঙ্গার ঘাট, রাতের কলকাতা। তৃতীয় কিছু সংলাপ। এবং চার নম্বরে এই ছবির গান। আমরা আসলে যাঁরা এই শহরকে ছেড়ে যেতে পারি না নাহ তাঁরা কেউই ঘরকুনো নই, আমরা সবাই ‘কলকাতা-কুনো’। এই শহরের মায়ায় জড়িয়ে আছি আমরা। হয়তো এই শহর সেকেলে, শহরের সময় বাড়ে না, তবুও কিছু থমকে যাওয়া জিনিসে সত্যি ম্যাজিক থাকে। ‘কলকাতার মেনুতে থাকে প্রিয়জনের স্পর্শের উষ্ণতা।’ অ্যাপটলি সেইড!

এবার আসি এই ছবির গানের বিষয়ে। নবারুণ বসু, কুর্নিশ আপনাকে। এক একটি গান যেন এক একটি গল্প। গানে গানেই না কত কীই বলে দিলেন! তিনটিই গান আছে এই ছবিতে, কিন্তু তিনটি গান আলাদা আলাদা সময় ছবিতে আলাদা আলাদা মাত্রা এনে দিয়েছে। ‘টাইম মেশিন’ তার মধ্যে সব থেকে সুন্দর।

আসলে এই শহরের বুকে ছড়িয়ে আছে হাজার হাজার ভাঙা গল্প, আগামীতেও ছড়াবে, এই গল্পগুলোর কাছে, গল্পের চরিত্রগুলোর কাছে হয়তো চাইলেও ফেরা হবে না কোনওদিন। কিন্তু এই গল্পগুলো, চরিত্রগুলো সব সময়ই আমাদের খুব কাছের হয়ে থেকে যাবে।

ছবি: শহরের উষ্ণতম দিনে

পরিচালক: অরিত্র সেন

অভিনয়ে: শোলাঙ্কি রায়, বিক্রম চট্টোপাধ্যায়

রেটিং: ৪.৩/৫

For all the latest entertainment News Click Here 

Read original article here

Denial of responsibility! TechAI is an automatic aggregator around the global media. All the content are available free on Internet. We have just arranged it in one platform for educational purpose only. In each content, the hyperlink to the primary source is specified. All trademarks belong to their rightful owners, all materials to their authors. If you are the owner of the content and do not want us to publish your materials on our website, please contact us by email – [email protected]. The content will be deleted within 24 hours.