‘এই উপলব্ধিই সাহস জুগিয়েছিল’, নেশা মুক্তির ১৫ বছর পর কোন বার্তা দিলেন অনিন্দ্য

জন্মদিন মানেই বিশেষ একটা দিন। হাজারো শুভেচ্ছা। একটা আলো ঝলমলে দিন। কিন্তু কারও যদি এই বিশেষ বছরে দুবার আসে? নিশ্চয় ভাবছেন, বছরে দুটো জন্মদিন! তাও আবার হয় নাকি? হয়, হয়। একই জন্মে যে পুনর্জন্ম ঘটতে পারে! আর সেটাই অভিনেতা অনিন্দ্য চট্টোপাধ্যায় দেখিয়ে দিলেন।

অভিনয় হোক বা তাঁর রূপ, বাঙালিদের মধ্যে এই দুই কারণে তাঁর ভক্ত কম নয়। মহিলা ভক্তের সংখ্যাও তাঁর অগণিত। কিন্তু এছাড়াও তিনি আরও একটি কারণ অনেকের অনুপ্রেরণা। মাদকের নেশায় নিজেকে শেষ করে দেওয়ার শেষবিন্দু থেকে তিনি ঘুরে দাঁড়িয়েছেন। ফিরে এসেছেন জীবনের মূল স্রোতে। কতজন পারে এটা? কতজনেরই বা সাহস হয় সেই কালো দিনগুলো মনে করেও সামনের দিকে এগিয়ে চলতে। কিন্তু তিনি পেরেছেন। আর আগামীকাল, ২৩ জানুয়ারি সেই অনিন্দ্য চট্টোপাধ্যায়ের জন্মদিন। তাঁর পুনর্জন্মের দিন কাল। আর সেই বিশেষ দিনে অন্য কেউ নয়, তিনি নিজেই নিজের পিঠ চাপড়ে দিলেন। সবার সামনে রাখলেন এক জ্বলন্ত উদাহরণ, যে এভাবেও ফিরে আসা যায়।

দিন অনুযায়ী শনিবার, কিন্তু ঘড়ির কাঁটা জানান দিচ্ছে যে রাত ১২টা বেজে গিয়েছে, অর্থাৎ ২২ তারিখ পড়ে গিয়েছে। তখনই ফেসবুকে একটি পোস্ট লেখেন অনিন্দ্য। তাঁর কথায়, ‘আজকে ২২ জানুয়ারি, কালকে আমার জন্মদিন। এই জন্মদিনটাই আমার সবচেয়ে কাছের। কেন? কাল আমার নেশা মুক্তির ১৫ বছর। ২৯ ডিসেম্বর তো বায়োলজিক্যাল বার্থডে। কিন্তু কালকের দিনটা আমার কাছে অনেক অনেক বেশি স্পেশাল।’

নিজের নেশায় ডুবে যাওয়ার অতীতের দিন মনে করে অভিনেতা লেখেন, ‘আমার কাছে এখনও জলের মতো স্পষ্ট ২০০৮ সালে আজকের এই দিনটা। ব্যাঙ্কসাল কোর্টে হাজিরা দিয়ে আমাকে রিহ্যাবে ফিরতেই হতো। ৯টার বনগাঁ লোকাল আর আমাকে যেতে হত হাবড়া। সাথে ছিল শেষবারের মতন নেশা করবো বলে একটু ব্রাউন সুগার, একটু তুলো একটা চামচ। হাবড়া স্টেশনে নেমে একটু এগোলেই সেই রিহ্যাব যেখান থেকে আমার ভালো থাকার লড়াই শুরু হয়েছিল। তার আগে প্রায় ২৮ বা ২৯টা ডিটক্স আর রিহ্যাব হয়ে গেছে । যেদিন ছাড়া পেতাম সেদিনকেই রিলাপস। আমাদের ভাষায়ে আমরা বলি ক্রনিক রিলাপসী। ৬/৭ বছর ধরে অনবরত ঘুরতে থাকা একটা বৃত্ত। নয় বাইরে নেশা করছি নয় তালা চাবির ভিতরে ভালো আছি। না নিজে বিশ্বাস করতাম যে আমি কোনদিন ভালো হতে পারব, না আমাকে কেউ বিশ্বাস করতো যে আমি কোনদিন নেশা ছেড়ে দেব।’

তাঁর নেশার জন্য গোটা পরিবারকে সর্বস্বান্ত হতে হয়েছিল! তিনি নিজেও বা নেশার জন্য কী কী করেছিলেন? অনিন্দ্যর কথায়, ‘মধ্যবিত্ত পরিবারের আর কতই বা ক্ষমতা? বাড়ির সব কিছুই মোটামুটি ততদিনে প্রায় শেষ। সে মায়ের সোনার গয়না হোক বা বাবার সঞ্চয়। এরপরে লোহা, অ্যালুমিনিয়াম,কাঁসার জিনিস তখন আমার কাছে সোনার মতনই দামী। যে কোনো গাড়ির লক খুলতে লাগতো ঠিক তিন মিনিট। একটা নোকিয়ার মোবাইল মানে ক্যাশ ২-৩ হাজার। সেটাই অনেক তখন আমার কাছে। এরম একটা সময় আমি আমি বুঝতে পারছিলাম এভাবে যদি চলতে থাকে আমি ২৮ বছর অবধিও টানতে পারবো না আর চোখের সামনে চারটে ইউজিং পার্টনারকে পরপর মরতে দেখে একটু ভয়ও পেয়েছিলাম। এতটাই বিধ্বস্ত অবস্থায় ছিলাম যে আমার সেই রিহ্যাবে যাওয়া আর সেখানে আবার কয়েকমাস চার দেওয়ালের মধ্যে থাকা ছাড়া আমার আর কোনো উপায় ছিল না। যদি থাকত তাহলে আরও কয়েকদিন টানতে পারতাম। কিন্তু পারিনি।’


সেই নেশার অতলে একটু একটু করে ডুবে যাওয়ার থেকে আজকের সোনালী দিন। অটোগ্রাফ, ক্যামেরার ফ্ল্যাশ, আরও না জানি কত কী! কিন্তু এগুলো কোনটাই সম্ভব হতো না যদি না তিনি চাইতেন। কী করেছিলেন তিনি সেই ফিরে আসার জন্য? ‘আর এই উপলব্ধিটাই আমাকে একটু হলেও সাহস জুগিয়েছিল। এভাবেই আমার ভালো থাকার শুরু। শুরুটা সত্যি কঠিন ছিল। না কেউ বিশ্বাস করত, না নিজে বিশ্বাস করতাম যে নেশা করা ছেড়ে দেব। জীবনের ধ্যানজ্ঞান ভালোবাসা তো ছিল একটাই, নেশা। ওটাকে আকড়ে ধরে বাঁচতে চেয়েছিলাম আর নেশা আমাকে মারতে চেয়েছিল । আমি সেদিন নেশার কাছে হেরে গেছিলাম। আর হেরে গেছিলাম বলেই হয়তো আজকে আমি জিতছি।’ একই সঙ্গে জানালেন তাঁর বাবা তাঁর এই রূপ দেখে গিয়েছেন। গর্ব করতেন। বোন তাঁকে নিয়ে গর্ব করেন।

ঠিকই আর এই জয় যে ভীষণই আনন্দের। আর আনন্দের উদযাপন হওয়া তো জরুরি, বিশেষ করে সেটা যদি আরও পাঁচজনকে অনুপ্রেরণা জানায়। এমন জন্মদিন শুভ না হয়ে যায় কোথায়?

For all the latest entertainment News Click Here 

Read original article here

Denial of responsibility! TechAI is an automatic aggregator around the global media. All the content are available free on Internet. We have just arranged it in one platform for educational purpose only. In each content, the hyperlink to the primary source is specified. All trademarks belong to their rightful owners, all materials to their authors. If you are the owner of the content and do not want us to publish your materials on our website, please contact us by email – [email protected]. The content will be deleted within 24 hours.