ইন্দ্রনীল কি পারলেন ফেলুদা হয়ে উঠতে? কতটাই বা রহস্য জমল হত্যাপুরীতে
অনেকগুলি বছরের বিরতির পর ফেলুদাকে নিয়ে বড় পর্দায় ফিরে এলেন সন্দীপ রায়। সত্যজিৎ রায়ের লেখা ‘হত্যাপুরী’ গল্পের উপর ভিত্তি করে তিনি নতুন ছবি তৈরি করলেন একই নামের। গত ২৩ ডিসেম্বর মুক্তি পেয়েছে ছবিটি। এবার ফেলুদা, তোপসে এবং জটায়ু তিনজনেই নতুন। না, অভিনেতা হিসেবে নন, এই চরিত্রগুলি হিসেবে। ফলে ছবিটা নিয়ে অনেকেই সন্দিহান ছিলেন যে কেমন লাগবে, কী হবে, ইত্যাদি। তার উপর আবার প্রথম প্রবাসী বাঙালি এক অভিনেতাকে দেখা যাবে ফেলুদার চরিত্রে। সন্দীপ রায় কি দর্শকদের মনের সমস্ত দ্বিধা-দ্বন্দ্ব দূর করে বাজিমাত করতে পারলেন এই ছবির হাত ধরে? এই প্রশ্ন এখনও অনেকের মনেই, বিশেষ করে যাঁরা ছবিটি দেখেননি।
ফেলুদা ছবিটিকে নিয়ে প্রথম যে প্রশ্নটা মাথায় ছিল, ইন্দ্রনীলকে কতটা মানাল এই ছবিতে? এটার উত্তরে বলব, কিছু জায়গায় ভাষার টান বেশ বোঝা গেলেও লুকসের দিক থেকে নতুন ফেলুদাকে দিব্য মানিয়ে গিয়েছে। তবে সেই তুলনায় নতুন জটায়ু আর তোপসে ঠিক জমাতে পারল না। বিভূ ভট্টাচার্যর জায়গায় নতুন জটায়ুর ভূমিকায় অভিজিৎ গুহ মোটেই ‘ফ্লাইং কালার্স’ নিয়ে পাশ করতে পারলেন না, না চাইতেও দর্শক হিসেবে তুলনা এসেই গেল। একই সঙ্গে আগের তোপসেদের সঙ্গে তুলনা করলেও আয়ুষও যেন খানিকটা ম্লান। ব্যাপারটা জমতে গিয়েও জমল না।
সেখানে দাঁড়িয়ে ইন্দ্রনীলের কিছু জায়গার উচ্চারণ বাদ দিলে তাঁর তীক্ষ্ণ চেহারা, চাউনি, সিগারেট ধরা, কিংবা মুচকি হাসি, মানে সবটা মিলিয়েই বেশ মানিয়ে গিয়েছে নতুন ফেলুদা হিসেবে। মূলত ক্লাইম্যাক্সের কিছু দৃশ্যে তিনি আলাদা করে নজর কেড়েছেন।
তবে অন্যান্য ভূমিকায় থাকা পরাণ বন্দ্যোপাধ্যায়, শুভাশিস মুখোপাধ্যায়, দেবনাথ চট্টোপাধ্যায়, সাহেব চট্টোপাধ্যায় বেশ ভালো। চরিত্র অনুযায়ী তাঁরা যথাযথ। কিন্তু এঁদের মধ্যে নিশীথ সেনের চরিত্র দেবনাথ চট্টোপাধ্যায় আলাদা করে নজর কেড়েছেন তাঁর অভিনয়ের গুণে।
কিন্তু এই ছবির ক্ষেত্রে যেটা না বললেই নয়, সেটা হল ক্যামেরার কাজ। পুরীতে পৌঁছে হোটেলের ব্যালকনি থেকে দাঁড়িয়ে সিগারেট ধরা অবস্থায় ফেলুদার কিছু দৃশ্য বেশ মন রাখার মতো। এছাড়া ক্লাইম্যাক্সের দৃশ্যগুলোতেও ফেলুদাকে যে যে অ্যাঙ্গেল থেকে ধরা হয়েছে তার সব কটিতেই বেশ ওয়াও ফ্যাক্টর আছে।
কিন্তু তবুও বলব, বেশ কিছু গলদ এই ছবিতে ধরা পড়েছে, যেমন, হিঙ্গরানি সমুদ্র থেকে স্নান করে ফিরছেন যখন তখন তাঁর জামার কেবল সামনের অংশটুকু ভেজা, পিছন দিকটা শুকনো, কিংবা হত্যাপুরী অথবা ভুজঙ্গ নিবাসের নির্মাণ বড়ই দুর্বল লেগেছে।
তবে সবটা মিলিয়ে এই ছবির বিষয়ে যদি বলতে হয়, সন্দীপ রায় ছক্কা হাঁকাতে গিয়েও বল মাঠ টপকালো না। তবে ম্যান অব দ্য ম্যাচ পুরস্কার অবশ্যই নতুন ফেলুদার প্রাপ্য। শীতের ছুটিতে দেখে আসতে পারেন এই ছবি একবার।
রেটিং: ৩/৫
For all the latest entertainment News Click Here