‘আমি ভাবলাম শোভন পাগল হয়ে গেছে…’, দিদির সঙ্গে সম্পর্কের সমীকরণ নিয়ে অকপট বৈশাখী
বৈশাখী বন্দ্যোপাধ্যায়ের সঙ্গে বিবাহিত শোভন চট্টোপাধ্যায়ের সম্পর্ক নিয়ে তখন কাটাছেঁড়া সবমহলে। এর মাঝেই ২০১৮ সালের ২০শে নভেম্বর মমতার মন্ত্রীসভা থেকে ইস্তফা দেন শোভন। মুখ্যমন্ত্রীর ধমক খেয়েই পদ ছাড়েন শোভন এমনটাই শোনা গিয়েছিল। এরপর অভিযোগের আঙুল ওঠে বৈশাখী বন্দ্যোপাধ্য়ায়ের দিকেও। তাঁর সান্নিধ্যে এসেই শোভন চট্টোপাধ্যায়ের রাজনৈতিক কেরিয়ার শেষ হয়েছে, এমন রটনা কম শোনা যায়নি।
বছর পাঁচেক আগের সেই ঘটনা নিয়ে সম্প্রতি মুখ খুলেছেন বৈশাখী বন্দ্যোপাধ্যায়। আজতক বাংলাকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে তিনি বলেন, ‘ও যে মন্ত্রীত্ব থেকে ইস্তফা দিয়েছে, আমি এক সাংবাদিকদের থেকে জানতে পারি। যদিও আমাকে ও আগে বলেছিল—’বৈশাখী আমি আর বেশিদিন পারছি না’। বাড়ি ঢুকে দেখতাম সিকিউরিটিরা সব কাঁদছে। আমাকে ওরা বলল— স্যার ইস্তফা দিয়েছে। আমি ছুটে ওর ঘরে ঢুকলাম, ভেবেছিলাম হয়ত কোনও ভেঙে পড়া, বিষন্ন মানুষের দেখা পাব। গিয়ে দেখলাম ও ঘুমোচ্ছে। আমি ভাবলাম শোভন অভিনয় করছে। ডাকাডাকির পর দেখলাম, সত্যি কাঁচা ঘুম ভাঙলে যা হয়। উঠে বলল— ‘ও তুমি এসে গেছো। চলো খেয়েনি’। আমি তো ভাবলাম লোকটা পাগল-টাগল হয়ে গেল নাকি।’
এরপর বৈশাখী ইস্তফার ব্যাপারে প্রশ্ন করলে শোভন চট্টোপাধ্য়ায় জানান, ‘হ্যাঁ, মন্ত্রীত্ব থেকে আমি ইস্তফা দিলাম। তুমি কলেজে ছিলে কিছু বলিনি। এখন তো ছুটি পড়ে গেছে, পরে গিয়ে মেয়র পদ থেকে ইস্তফা দিয়ে দেব।’ মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের বিশ্বাস হারানোর জেরেই সরে দাঁড়িয়েছিলেন প্রাক্তন মন্ত্রী, জানান বৈশাখী বন্দ্যোপাধ্যায়। শোভন-বান্ধবী বলেন- ‘উনি আমাকে বলল, দিদি আমার ইস্তফা নিতে চাইছিল না, তবে আমি থাকতে চাই না। মন্ত্রীত্ব আমার অ্যাসেট নয়, দিদির বিশ্বাসটাই সব। খুব কষ্ট পেয়েছিলেন।’ বৈশাখী জানান, ‘ওকে অনেক বোঝাতে হয়েছে, দিদি তোমায় অবিশ্বাস করতে পারে না। ওঁনাকে ভুল বোঝানো হয়েছে।’
তৃণমূলে থাকাকালীনই এক বছর ভাইফোঁটায় কানন (শোভনের ডাকনাম)-কে আমন্ত্রন জানাননি মমতা। বৈশাখী সাধাসাধি করলেও যেচে যেতে চাননি শোভনবাবু। পরের বছর পার্থ চট্টোপাধ্যায় ফোন করে মমতার বাড়িতে ভাইফোঁটায় নেমন্তন্ন করেন শোভন-বৈশাখীকে। বৈশাখী বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, ‘ওকে তো বিশ্বাস করানোটাই ম্যামথ টাস্ক ছিল যে দিদি ওকে ডেকেছে। মুখ ব্যাজার করে শেষে বোরালো, আমাকে তো রীতিমতো হুমকি দিয়ে বলল- যদি আমার সঙ্গে খারাপ ব্যবহার হয়, দেখবে তোমাকে কী করব।’ মমতার কালীঘাটের বাড়িতে গিয়ে কী ঘটেছিল সেদিন?
বৈশাখী হাসিমুখে বলেন, ‘সেদিন আমি বুঝেছিলাম মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় শোভনকে কতটা ভালোসেন। এক বছর ওঁরা কথা বলেনি, সেটা কিন্তু মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের ব্যবহারে ধরা পড়েনি। উনি একবারের জন্য জিগ্গেস করেনি ‘কি রে তুই বিজেপি জয়েন করলি কেন?’ দেখলে মনে হচ্ছে, শোভন বাচ্চা ছেলে। ও অনেকদিন আসেনি, ওকে আবার আদর দিতে হবে। আমি তো দেখে পুরো সারপ্রাইজ। আমার জন্য খুব সুন্দর একটা দৃশ্য ছিল’। বৈশাখীর ভাই নেই জেনে, ওইদিন মমতা ফোঁটা দিয়েছিলেন বৈশাখীকেও। সঙ্গে তিনি যোগ করেন, ‘মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় সম্পর্কে যাঁরা বলেন উনি টেম্পর দেখান, সেটা ঠিক নয়। উনি কিন্তু খুব কম্পোজ একটা মানুষ। আমি আজ পর্যন্ত যতবার দেখেছি, উনি কখনও নিজের কম্পোজার হারাননি। উনি খুব ইমোশন্যাল মানুষ। শোভনের প্রতি ওঁনার স্নেহটা আজও অটুট। উনি শোভনকে প্যাম্পার করেছেন, এতটা উচিত নয়। শোভন যে এতটা অভিমানী সেটা তৈরি করেছেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় নিজে’।
বিজেপির সঙ্গে সব সম্পর্ক ছিন্ন করার পর বর্তমানে রাজনীতি থেকে দূরেই সময় কাটাচ্ছেন শোভন চট্টোপাধ্যায়। স্ত্রী রত্না চট্টোপাধ্যায়ের সঙ্গে তাঁর ডিভোর্সের মামলা এখন আদালতে বিচারাধীন। বান্ধবী বৈশাখী ও তাঁর মেয়েকে নিয়েই সংসার করছেন শোভনবাবু।
For all the latest entertainment News Click Here