‘আমি কেবলই কবিতা কর্মী, শিল্পী নই’, প্রথম ছবি মুক্তির আগেই এমন দাবি কেন শ্রীজাতর
আর মাত্র কয়েকদিনের অপেক্ষা তারপরই মুক্তি পেটে চলেছে শ্রীজাত বন্দোপাধ্যায়ের প্রথম ছবি ‘মানবজমিন’। কিন্তু আচমকা কবিতা ছেড়ে সিনেমা কেন? এই প্রশ্নের উত্তরে আনন্দবাজারকে দেওয়া একটি সাক্ষাৎকারে কবি তথা পরিচালক জানান, ছোট থেকে তাঁর সিনেমা দেখার ভীষণ নেশা। তাঁর কথায়, ‘তখন থেকেই মনে হতো ছবির মতো শক্তিশালী মাধ্যম খুব কম আছে। ছবিতে সব ধরনের শিল্পমাধ্যমের একটা সুন্দর মেলবন্ধন দেখা যায়। বহুদিন ধরেই এই স্বপ্নকে লালন করেছি। অবশেষে ২০২২ সালে সেই স্বপ্নপূরণ হল।’ এই প্রসঙ্গে তিনি প্রযোজক রানা সরকারের কথাও বলেন। শ্রীজাত জানান, প্রযোজক খুশি হয়ে ছবিটা করতে রাজি হন। তিনিও সাহসে ভর করে এগিয়ে যান ছবিটা করতে।
তবে প্রথম ছবির বিষয়বস্তু মানবজমিন কেন? এমন ভাবনার নেপথ্যে কোন কারণ আছে? এই প্রশ্নের উত্তরে তিনি বলেন, ‘ছবিতে একদিকে গ্রামের বাচ্চা মেয়েদের স্কুল দেখা যাবে। তারা ভীষণই গরীব। অন্যদিকে আছে প্রেম, বাৎসল্য, স্নেহের টানাপোড়েন। সঙ্গে আছে হাস্যরস। ফলে একটা সামঞ্জস্য রেখে এই ছবি তৈরি করার চেষ্টা করেছি। কোনও দিকই বেশি ঢালু নয়। প্যাঁচ ছাড়াই একটি সোজা, সরল গল্প।’
এতদিন কবিতা লিখে যথেষ্ট সুখ্যাতি অর্জন করেছেন শ্রীজাত বন্দোপাধ্যায়। তাঁর নানা কবিতার বই বাঙালির ঘরে ঘরে জায়গা করে নিয়েছে। নানা বিষয়ে কবিকে এতদিন সোশ্যাল মিডিয়ায় মতামত জানাতে দেখা গিয়েছে। কিন্তু এবার তিনি একদম নতুন রূপে ধরা দিচ্ছেন। পরিচালক। তাঁর পরিচালিত প্রথম ছবি বক্স অফিসে কেমন সাড়া ফেলে সেটা না দেখেই তিনি দ্বিতীয় ছবির কথা ঘোষণা করে দিয়েছেন। এটা কি কোথাও একটা চরম আত্মবিশ্বাসের নজির নয়? যদি প্রথম ছবি না চলে? এই বিষয়ে কবির স্পষ্ট উত্তর, ‘এই ছবি ভালো না চললে সব ঝুঁকি রানার। আমার নয়। প্রথম ছবিটা করার পর রানার ভীষণ ভালো লেগেছে। দ্বিতীয় ছবির প্রস্তাব ওর কাছ থেকেই এসেছিল। এমনকি পরমব্রতও তো পুরো গল্প না শুনেই ছবিটা করতে রাজি হয়ে গেল। সোহিনীর সঙ্গেও আমার দীর্ঘদিন ধরে কাজ করার ইচ্ছে ছিল। এটা হলে দর্শকরা একদম অন্য ধরনের একটি ছবি পাবেন।’
তবে যতই সোশ্যাল মিডিয়া নানা সময়ে তাঁকে বুদ্ধিজীবী বলে আখ্যা দিক কবি কিন্তু নিজেকে সেটা মনে করেন না। তাঁর স্পষ্ট উত্তর, ‘না আমি বুদ্ধিজীবী নই, অত বুদ্ধি আমার নেই। আমি কবিতা কর্মী। নিজেকে শিল্পী বলব না, শিল্পী অনেক বড়, আমি কেবলই কবিতা কর্মী। বছর ত্রিশেক কবিতার লেখার চেষ্টা করছি, এখনও তাই করছি। সঙ্গে একটা ছবি বানালাম, দেখা যাক কেমন চলে।’
তবে আচমকা কলম ছেড়ে ডিরেকশন, কাকে বা কাদেরকে আদর্শ মেনে এগিয়েছেন তিনি? এই বিষয়ে শ্রীজাত জানান, পরিচালনার ক্ষেত্রে তাঁর আদর্শ হলেন সত্যজিৎ রায়, মৃণাল সেন, ঋত্বিক ঘটক, তপন সিনহা, প্রমুখ। এছাড়া তিনি তরুণ মজুমদারেরও নাম করেন।
এই দিকপাল পরিচালকদের কাজের ছায়া কতটা তাঁর প্রথম ছবিতে পড়ল, কতটা দর্শকদের মনে সেই ছবি দাগ কাটল সেটা তো সময়ই বলবে। আর কিছুদিন পরই মুক্তি পাচ্ছে মানবজমিন। তবে তার মধ্যেই এই ছবির গানগুলো দর্শকদের মন বিশেষ জায়গা করে নিয়েছে। মূলত অরিজিৎ সিংয়ের কণ্ঠে ‘মন রে কৃষিকাজ জানো না’ সকলের বেশ মনে ধরেছে।
For all the latest entertainment News Click Here