আমিও গত ৪০ বছরে বাংলা ছবিতে অনেক কিছু এনেছি, জুবিলির শ্রীকান্তের মতোই: প্রসেনজিৎ

পর্দার জন্য বারবারই নিজেকে ভেঙেছেন। ধরা দিয়েছেন বিভিন্ন চরিত্র, আবারও একবার একই সঙ্গে দুটি সম্পূর্ণ ভিন্ন চেহারার শিল্পীর ভূমিকায় ধরা দিলেন প্রসেনজিৎ চট্টোপাধ্যায়। কখনও তিনি রোগা পাতলা, উসকোখুসকো চেহারার ‘বাল্মীকি’, কখনও আবার তিনি ‘গডফাদার’ ‘শ্রীকান্ত রায়’।

‘জুবিলি’তে শ্রীকান্ত রায় একটা তারকা চরিত্র, বাস্তবে আপনি নিজেও একজন ‘তারকা’, রিলস আর রিয়েলে কোনও মিল পেয়েছেন?

প্রসেনজিৎ: শ্রীকান্ত রায় নিজে তারকা হওয়ার থেকেও উনি আসলে তারকা তৈরি করেন। একজন ‘গডফাদার’-এর চরিত্র। সিনেমাটাই ওঁর প্যাশান, ভীষণই শক্তিশালী একটা চরিত্র, ৪০ ও ৫০-এর দশকে সিনেমার দুনিয়ার ওঁর একটা বিশাল অবদান রয়েছে। আর আমারও দীর্ঘ কেরিয়ারে আমি অনেক কিছু দেখেছি, অনেক বদল দেখেছি। প্রযুক্তিগত দিক থেকেও সিনেমার দুনিয়াকে বদলে যেতে দেখেছি। সেই সব অভিজ্ঞতাই আমায় এই চরিত্রটি করতে সাহায্য করেছে।

শ্রীকান্ত রায় ‘গডফাদার’, প্রসেনজিৎ চট্টোপাধ্যায়ের জীবনও কি কোন ‘গডফাদার’ রয়েছেন?

প্রসেনজিৎ: দুর্ভাগ্যবশত, আমার জীবন, বা কেরিয়ারে আমি কোনও ‘গডফাদার’ পাইনি, আমি বলব, ‘গডমাদার’ পেয়েছি, আর তিনি আমার মা। আমার ভালো, মন্দ যা কিছুই সবটাই আমার মায়ের জন্য।

‘শ্রীকান্ত রায়’ ফিল্ম ইন্ডাস্ট্রির সঙ্গে ‘প্লে-ব্যাক সিংগিং’ থেকে শুরু করে অনেক নতুন কিছুর পরিচয় করিয়েছেন, যার জন্য উনি বিভিন্ন ঝামেলাতেও জড়িয়েছেন। সেবিষয়ের সঙ্গে নিজের দীর্ঘ কেরিয়ারে কোনও মিল খুঁজে পান?

প্রসেনজিৎ: এখানে আসলে একটা ইতিহাসকে তুলে ধরা হয়েছে, আর সবটাই সত্যি। আমিও আমার কেরিয়ারে গত ৪০ বছরে বিভিন্ন সময়ে অনেককিছুই বাংলা ছবিতে এনেছি, আর তা সবই ধাপে ধাপে। সেটা এখানে রিলেট করতে পেরেছি। আসলে যে কোনও ইন্ডাস্ট্রিতেই এমন কিছু মানুষ বা সঞ্চালকের দরকার হয়। সবাই মিলেই কাজ করেন।, তবে একজন কাউকে দরকার হয়, যিনি চালনা করেন। আমি যখন কাজ করি, প্রযোজকদের বলি, এটা কি করা যায়? বা ওটা একটা নতুন কিছু করা যেতে পারে। এটা আমি করেই থাকি। যদিও সব টিম ওয়ার্ক। তবে আমার নামটা বারবার আসে কারণ, আমি দীর্ঘ সময় ধরে ইন্ডাস্ট্রিতে কাজ করে চলেছি, বিভিন্ন পরিবর্তনে আমি সামিল হয়েছি, সেই সাদা-কালো ছবির সময় থেকে। তারপর বহু প্রযুক্তি এসেছে, সবেতেই আমি কাজ করেছি। আর এখন OTT-তেও রয়েছি। (হাসি)

<p>'শ্রীকান্ত রায়'-এর ভূমিকায় প্রসেনজিৎ</p>

‘শ্রীকান্ত রায়’-এর ভূমিকায় প্রসেনজিৎ

‘জুবিলি’তে অদিতি রায় হায়দারি ট্রেন থেকে নেমে যাবেন, ঠিক তখন শ্রীকান্ত রায় উঠছেন, তারপর তাকিয়ে থাকেন। কোনও ডায়ালগ নেই। ওই দৃশ্যটি কিন্তু ভীষণ প্রশংসিত হয়েছে…

প্রসেনজিৎ: হ্যাঁ, এটা প্রশংসিত হচ্ছে। এখানে ‘সাইলেন্স’ ভীষণ গুরুত্বপূর্ণ একটা বিষয়। এই প্রসঙ্গে আমি একটা কথা বলব, উৎসব (২০০০)-এ আমার একটা এমনই দৃশ্য ছিল। ঋতুদা (ঋতুপর্ণ ঘোষ) বলেছিলেন, ওয়ান শটে মুখটা ঋতু (ঋতুপর্ণা সেনগুপ্ত)র দিকে ঘোরাতে হবে। তাতেই বোঝাতে হবে আমি ভালো নেই, আমার ১০৪ জ্বর। কোনও সংলাপ ছিল না দৃশ্যটাতে। এই ধরনের চ্যালেঞ্জগুলো আমি ওঁর মতো পরিচালকদের কাছে শিখেছি বলেই হয়ত আজ এটা করতে পারছি।

আমি যাঁদের সঙ্গে কাজ করেছি, আমার পরিচালক, টেকনিশিয়ানস এবং আমার কাছে যাঁরা শ্রদ্ধেয় যেমন সৌমিত্র চট্টোপাধ্যায়, ছবি বিশ্বাস, ওঁদের থেকে যা শিখেছি, সেটাই আমি কাজে লাগাচ্ছি, তবে শিখেছি তো ওঁদের থেকেই। সেটা আমি মুম্বইতেও প্রসঙ্গক্রমে বারবার বলেছি।

এতবছর পর মুম্বইতে গিয়ে কাজ করতে গিয়ে কোনও কিছু চ্যালেঞ্জিং মনে হচ্ছে?

প্রসেনজিৎ: নাহ, সেভাবে কিছু নয়। আমি সবটাই ভীষণ উপভোগ করছি। এখন ওখানেও কোথায় গেলে আমায় এসে শ্রীকান্ত রয় বলে জড়িয়ে ধরছেন। হয়ত অনেককে চিনিও না। দু’দিন আগেই একজন এসে বললেন, ‘স্যার, নো বডি এলস কেন ডু শ্রীকান্ত রয়।’ এটা শুনতে বেশ ভালো লাগল। আমি এতবছর কাজ করেছি, এখন মুম্বইতে একেবারে নতুন টিমের সঙ্গে কাজ করছি, নতুন অভিনেতাদের সঙ্গে কাজ করছি, এমনকি সেটা কলকাতাতেও। আসলে যখন কাজ করি, আমার মধ্যে আমি এটা, আমি ওটা, এই বিষয়টা থাকে না। নাহলে ‘শেষপাতা’ করতে পারতাম না (হাসি)।

‘শেষপাতা’য় আপনি একেবারেই অন্যরকম, কোথায় ‘শ্রীকান্ত রয়’, আর কোথায় ‘বাল্মিকী’! একদম ‘নন গ্ল্যামারাস’ একটা চরিত্র…

প্রসেনজিৎ: অথছ ‘বাল্মীকি’ও কিন্তু একজন শিল্পী। আসলে ‘বাল্মীকি’ চরিত্রটিকে ব্যাখ্য করা খুবই মুশকিল, খুবই বিরল একটা চরিত্র। এমন একটা চরিত্র ইতিহাস ঘাঁটলে, কিংবা কিছু ইন্টেলেকচুয়ালসদের থেকে পরিচালকদের কাছ থেকে হয়ত পেয়ে যাব। কিন্তু নির্দিষ্ট কোনও চরিত্রকে সামনে রেখে আমি এটার জন্য তৈরি হতে পারব এমন উদাহরণ আমার কাছে ছিল না। দুটো চরিত্র করতে গিয়ে আমাকে এই পরিস্থিতির মুখোমুখি হতে হয়েছে। যখন ‘জাতিস্মর’-এ ‘কুশল হাজরা’র চরিত্র করেছিলাম, তখনও আমার সামনে কোনও উদাহরণ ছিল না। ‘বাল্মীকি’ করার সময়ও তাই হয়েছিল। আমি তো প্রথমদিন অতনুকে বলেই দিয়েছিলাম, ‘আমি বোধহয় পারব না।’ কারণ, বাল্মীকি লোকটা ভীষণ ‘আনপ্রেডিক্টটেবল’। এখানে একরকম, আবার এখান থেকে উঠে গিয়েই তার মন বদলে যায়। তবে এই চরিত্রগুলি ভীষণভাবেই বাঙালি চরিত্র। আজও ভারতবর্ষে আমরা বাঙালিরা যখন কথা বলি, বাংলার সাহিত্য, সিনেমা নিয়ে যখন কথা হয়, লোকজন কিন্তু একটা কথাই বলেন, ‘আপলোগ যো সোচতে হ্যায়, ও অলগ হ্যায়।’ আমাদের এটাই শক্তি, মারাঠিদেরও তাই। যাঁদের ইন্টেলেকচুয়ালিটি বেশি, তাঁদের কিছু নিজস্ব ইগো থাকে, নীতি থাকে। ‘বাল্মীকি’ এমনই একটা চরিত্র। এটার জন্য আমাকে এবং আমার পরিচালককেও ভীষণ খাটতে হয়েছে। এধরনের মানুষের শেষগুলো শেষটা খুব একটা সাধারণত মধুর হয় না।

আরও পড়ুন-ভারতীয় সিনেমার স্বর্ণযুগের গল্প বলে ‘জুবিলি’, শ্রীকান্ত রায়ের হাত ধরে ছাপোষা বিনোদ হন তারকা ‘মদন কুমার’

<p>'বাল্মীকি' প্রসেনজিৎ</p>

‘বাল্মীকি’ প্রসেনজিৎ

‘শেষপাতা’র ‘বাল্মিকী’ হতে শারীরিক একটা বিশাল পরিবর্তনের মধ্যে দিয়ে যেতে হয়েছে বলে শুনেছি…

প্রসেনজিৎ: হ্যাঁ, তা হয়েছে। আমি কড়া ডায়েটের মধ্যে ছিলাম, প্রায় মাস দু’য়েক। সেসময় আমি শুধুমাত্র সেই খাবারই খেয়েছি, যেটা কাঁচা খাওয়া যায়। গ্ল্যামারকে মেরে আমায় এক্কেবারে শুকনো করতে হয়েছে। সেসময় আর কোনও চরিত্রে আমি কাজ করিনি। একটা চরিত্র শেষ হলে তবেই আরেকটা চরিত্র শুরু করি। কারণ, একটা চরিত্রের জন্য নিজেকে ভীষণভাবে তৈরি করতে হয় সব দিক দিয়ে। শুরু করার আগে অনেকটা সময় লাগে। শুধু মেকআপ নয়, নিজের গঠনও বদলে ফেলি। ‘কাকাবাবু’ করতে গিয়ে ওজন বাড়িয়েছিলাম, নেতাজি করতে গিয়েও মোটা হয়েছি। আর বাল্মিকী করতে গিয়েও বদলাতে হয়েছে, কারণ গেঞ্জি পরা দৃশ্যও রয়েছে। লোকটা যে নিজের যত্ন নেয় না, সেটাকে দেখাতে হয়েছে। লোকটা মদ খায়, আবার অর্ধেক রাত খাবারও খায় না।

অতনুদা (অতনু ঘোষ) বলেন, ওঁর সঙ্গে কোনও অভিনেতা কাজ করতে চান না, আপনি ৩টে ছবি করে ফেললেন…

প্রসেনজিৎ: অতনুর সঙ্গে যিনি কাজ করতে চাইতেন তিনি আজ নেই, উনি হলেন সৌমিত্র চট্টোপাধ্যায়। অতনু যদি রাত ২টোর সময় বলেন, একটা গল্প নিয়ে ভাবছি, আমি জানি, একটা দারুণ কিছু আসছে। প্রযোজনা সংস্থা ফ্রেন্ডস কমিউনিকেশনের কথাও বলব, ওঁরা কিন্তু কিন্তু বারবার এধরনের ছবিকে সাপোর্ট করে চলেছে। ওরা বারবার অন্যধারার ছবি করে চলেছে। আমিও জানি, একটা ‘শেষপাতা’ করলে পাশে একটা ‘কাকাবাবু’ করতে হবে। তবে এধরনের ছবি না হলে ভারতবর্ষে বাংলা সিনেমার যে আলাদা জায়গা রয়েছে, সেটাই তো আমরা হারিয়ে ফেলব। আমি যখন ‘নিরন্তর’ করলাম, তখনও প্রশ্ন করা হয়েছিল, কেন করলেন? বললাম, আরে এমন একটা ইউনিক ছবি করব না! সবসময় ছবি থেকে কত টাকা লাভ করলাম, সেটা দেখলে চলে না, লস না হলেই হল। তবে আমরা যদি ‘নিরন্তর’, ‘শেষপাতা’, ‘ময়ূরাক্ষী’র মতো ছবিকে সাপোর্ট না করি, তাহলে হয়ত সিনেম্যাটিক বাংলা সিনেমা নিয়ে আলোচনা করাই উচিত নয়। আমরা কিন্তু সত্যজিৎ রায়, মৃণাল সেন, হৃত্বিক ঘটকের ব্র্যান্ডকেই এখনও কাজে লাগাই।

আপনি তো শুধু অভিনয় নয়, ‘শেষপাতা’য় গানও গেয়েছেন?

প্রসেনজিৎ: হ্যাঁ, আমাকে গায়ক হিসাবে লঞ্চ করা হয়েছে। যার জন্য ৪ মাস রিহার্সাল করতে হয়েছে। গান আসলে গেয়েছে গার্গী (গার্গী রায় চৌধুরী)। ও দারুণ গান গায়। তবে আজ শুনলাম একজন রেডিও স্টেশনের সঞ্চালকের কাছে, একটা নির্দিষ্ট শব্দ নিয়ে নাকি অনেক গায়ক বলেছেন, অসম্ভব পরিশ্রম না করলে বুম্বাদার পক্ষে এত সঠিক উচ্চারণ করা সম্ভব নয়। আর আমি এটাই পারি, সারাজীবন তাই করেছি। যখন পারব না কাজ ছেড়ে দেব। আমি শেষ অবধি না দেখে ছাড়ি না। এমনও হয়েছে, একটা ছবির ৬০ শতাংশ ডাবিং হওয়ার পর আবার সেটা প্রথম থেকে করেছি।

‘বাল্মিকী’ তো লেখেন, ব্যক্তিগতভাবে প্রসেনজিৎ চট্টোপাধ্যায়ের কি লেখালিখি করার অভ্যাস রয়েছে?

প্রসেনজিৎ: আমি পড়তে ভালোবাসি, লেখালিখি সেভাবে করা হয় না।

‘জুবিলি’ নিয়ে আপনার সহ অভিনেতা রাম কাপুরকেই বলতে শুনেছি, ছবির বিষয়বস্তু ভালো না হলে, শত প্রচারেও কিছু হয় না, কী বলবেন…

প্রসেনজিৎ: কনটেন্ট ভীষণই গুরুত্বপূর্ণ বিষয়, এটা তো সত্যি কথা। কনটেন্ট নানান রকমের হতে পারে, তবে দিনের শেশে কনটেন্ট-ই আসল হিরো…

এই খবরটি আপনি পড়তে পারেন HT App থেকেও। এবার HT App বাংলায়। HT App ডাউনলোড করার লিঙ্ক https://htipad.onelink.me/277p/p7me4aup)

 

 

 

For all the latest entertainment News Click Here 

Read original article here

Denial of responsibility! TechAI is an automatic aggregator around the global media. All the content are available free on Internet. We have just arranged it in one platform for educational purpose only. In each content, the hyperlink to the primary source is specified. All trademarks belong to their rightful owners, all materials to their authors. If you are the owner of the content and do not want us to publish your materials on our website, please contact us by email – [email protected]. The content will be deleted within 24 hours.