‘আমার মেয়ের ক্ষতি করো না’,শোভনকে মিনতি বৈশাখীর! শুনেছিলেন ‘জামার মতো মেয়ে বদলায়’
সম্পর্ক নিয়ে বরাবরই খোলামেলা শোভন চট্টোপাধ্যায় আর বৈশাখী বন্দ্যোপাধ্যায়। একসময় কম কাদা ছোঁড়াছুঁড়ি হয়নি এই সম্পর্ককে ঘিরে। সেই জলঘোলা পৌঁছে গিয়েছিল রাজনৈতিক স্তরেও। এমনকী তাতে হস্তক্ষেপ করেছিলেন স্বয়ং মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ও। যদিও বৈশাখী আর শোভনের প্রথম আলাপটা কিন্তু শুরু হয়েছিল ‘ঘৃণা’ থেকেই। একটা সময় এমন এসেছিল, জনে-জনে শোভনের নামে নিন্দে করে বেড়াতেন। শোভনের নামটা শুনলেও রেগে যেতেন।
মমতার এক সময়ের কাছের মানুষ কানন। যদিও বর্তমানে দুজনের মধ্যে বেড়েছে অনেক দূরত্ব। প্রাক্তন মেয়র-মন্ত্রী রাজনীতির জগত থেকে নিজেকে অনেকটাই সরিয়ে এনেছেন। মাঝে বৈশাখীর হাত ধরে গিয়েছিলেন বিজেপিতেও। সম্প্রতি আজ তক বাংলাকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে শোভনের সঙ্গে তাঁর সম্পর্কের শুরুর দিক নিয়ে স্মৃতিচারণ করতে দেখা গেল বৈশাখীকে।
মিল্লি আল আমিন মিশন কলেজে থাকাকালীনই প্রথম শোভন চট্টোপাধ্যায়ের সঙ্গে আলাপ হয় বলে জানান বৈশাখী। কলেজের এক অনুষ্ঠানে যোগ দিতে এসেছিলেন তৃণমূলের তৎকালীন নেতা। যদিও তার আগে বাবার কাছে ছাত্রনেতা হিসেবে শোভনের নাম শুনেছিলেন, কিন্তু পরিচিতি ছিল না। কলেজে থাকাকালীন নানা ওঠাপড়ার মুখে পড়তে হয়েছিল বৈশাখীকে। সুলতান আহমেদের সঙ্গে ঝামেলার সূত্রপাতে সেই সময় কলেজ থেকে সাসপেন্ডও করা হয়েছিল বৈশাখী বন্দ্যোপাধ্যায়কে। সেই সময় তাঁর মনে সুলতানই নাকি ঢুকিয়ে দিয়েছিল এর পিছনে হাত আছে শোভনেরও। যাকে ভরসা করে তিনি গিয়েছিলেন সাহায্য চাইতে।
ব্যস আর কী, সুলতানের মতো শোভনকেও অপছন্দ করতে শুরু করেন বৈশাখী। বরাবরই ‘স্পষ্টবক্তা’ হিসেবে পরিচিত তিনি শুধু কাছের মানুষদের কাছে নয়, মিডিয়ায়, তৃণমূলের অন্যান্য নেতাদের কাছে গিয়েও শোভনের নামে সমালোচনা করতেন।
এরপর একসময় অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায় যখন অসুস্থ তখন সৌজন্য সাক্ষাৎকারে বেলভিউ যান বৈশাখী। সেই সময় ফের মুখোমুখি হন শোভনের। চা খেতে খেতে শোভন সরাসরি বৈশাখীকে প্রশ্নও করেন, তাঁর বলা নানা কথা নিয়ে। যাতে আরও রেগে যান বৈশাখী। ওখান থেকে উঠে চলে এসে ফের তৃণমূলের নেতাদের ফোন করে ফের নিন্দে করেন।
যাই হোক, বৈশাখী ঘনিষ্ঠ অনেকেই নাকি সেইসময় পরামর্শ দিয়েছিলেন শোভনের সঙ্গে সব মিটমাট করে নিতে। ‘ছোট মেয়ে আছে’, তৃণমূলের এত হেভি ওয়েট নেতার সঙ্গে খারাপ সম্পর্ক না করতে পরামর্শ দেন অনেকে। আর তখনই শোভনের অফিসে যান। বৈশাখী জানান, গিয়ে তিনি নাকি শোভনকে অনুরোধও করেছিলেন, ‘আমার মেয়েটার কোনও ক্ষতি করবেন না প্লিজ আমার উপর রাগ থেকে’। যা শুনে হেসে ফেলেছিলেন শোভন। বুঝিয়েছিলেন, তাঁর নিজেরও মেয়ে আছে। অন্য কারও সন্তানের ক্ষতি করার প্রশ্নই আসে না। এরপর ধীরে ধীরে কথা বাড়তে থাকে বলে জানান বৈশাখী এই সাক্ষাৎকারে। দুজনে একে-অপরের কাছাকাছি আসেন, ভালোবাসা হওয়ার আগেই হয় বন্ধুত্ব। দুজনেই পরিবারের ঝড় একে-অপরের সঙ্গে ভাগ করে নিতে গিয়ে ভালোবেসে ফেলেন।
বৈশাখী আরও জানান, তিনি যখন প্রাক্তন স্বামী মনোজিতের ঘর ছাড়ছিলেন তখন তাঁকে কটাক্ষ করে বলা হয়েছিল, ‘তুই শোভনের জন্য ঘর ছাড়ছ, জামার মতো মেয়ে বদলায় এই লোকটা। তার জন্য সংসার ছাড়ছিস?’। বৈশাখী জানান, সেকথা শুনে প্রাথমিকভাবে ঘাবড়েও গিয়েছিলেন। বারবার মনে আসছিল, কোনও ভুল করছেন না তো। যদিও পরে একসঙ্গে এত বছর থেকে জোর গলায় জানান, টু টাইমিংয়ের প্রশ্নই আসছে না। তিনি চোখ বন্ধ করে ভরসা করেন। নিজেদের ছোট, বড়, খারাপ-ভালো সব কথা একে-অপরকে বলেন। আর এটাই তাঁদের সম্পর্কের ভিত এত মজবুত করেছে।
For all the latest entertainment News Click Here