‘আমাকে ফোন করে সরি বলেছিলেন মুখ্যমন্ত্রী’, দিদিকে নিয়ে আবেগঘন শ্রীজাত
তিনি বাংলার অগ্নিকন্যা, এই মুহূর্তে দেশের একমাত্র মহিলা মুখ্যমন্ত্রী। ২০২১ সালে যিনি গোটা দেশকে বুঝিয়েছেন ‘খেলা হবে’র প্রকৃত অর্থ। বাংলায় মোদী ঝড় রুখে দিয়ে তৃতীয়বার মুখ্যমন্ত্রীর পদে শপথ গ্রহণ করেছেন মমতা বন্দ্যোবাধ্যায়। কিন্তু সেই বাঘিনী মেয়ের পিছনে রয়েছেন এক মমতাময়ী মা, একজন অভিভাবক। মুখ্যমন্ত্রীর ৬৭তম জন্মদিনে সেই দিকটাই প্রকাশ্যে আনলেন কবি শ্রীজাত। বুধবার ছিল মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের জন্মদিন। এদিন টলিউডের তরফে শুভেচ্ছায় ভেসেছেন তাঁদের প্রিয় দিদি।
মুখ্যমন্ত্রীর জন্য এদিন কলম ধরলেন শ্রীজাত। ‘দিদি’র সঙ্গে তাঁর ব্যক্তিগত সম্পর্কের সমীকরণ এদিন প্রকাশ্যে আনলেন এই জনপ্রিয় কবি। বয়সে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের চেয়ে ছোট হলেও তাঁকে শ্রীজাতদা বলে সম্বোধন করেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। শ্রীজাত ফাঁস করলেন, বছর কয়েক আগের এক অজানা ঘটনা। যা শুনে হতবাক সকলে, এদিন শ্রীজাত বিস্তারিত জানান কেন ২০২০-র ফেব্রুয়ারির এক শীত জড়ানো দিনে কেবলমাত্র ‘সরি’ বলতে মুখ্যমন্ত্রী ফোন করেছিলেন শ্রীজাতকে!
শ্রীজাত নিজের পোস্টে মুখ্যমন্ত্রীর সঙ্গে এক বিশেষ সাক্ষাতের স্মৃতিচারণ করেছেন। প্রতিবছরের মতো ২০২০ সালের ২১শে ফেব্রুয়ারি ভাষা দিবসের অনুষ্ঠানে দেশপ্রিয় পার্কে হাজির ছিলেন শ্রীজাত। তবে সেবার স্ত্রী দূর্বা বন্দ্যোপাধ্যায়কে সঙ্গে নিয়ে গিয়েছিলেন তিনি। মঞ্চে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের একদম পাশের আসনে শ্রীজাত, নীচে দর্শকাসনে দূর্বা। অনুষ্ঠান চলাকালীন দম্পতির ‘ইশারা বিনিময়ের এই খেলা’ খেয়াল করে মুখ্যমন্ত্রী। সরাসরি প্রশ্ন করেছিলেন, ‘কে? বৌমা?’ শ্রীজাত সম্মতি জানানোয় মুখ্যমন্ত্রী নিজেই বলেন, অনুষ্ঠান শেষে বৌমার সঙ্গে আলাপ সারবেন। কিন্তু অনুষ্ঠান শেষের হুড়োহুড়িতে তা সম্ভবপর হয়নি। শ্রীজাত নিজেও সেলফি শিকারিদের ভিড় আর নিরাপত্তা বেষ্টনীর ঘেরাটোপ ভেদ করে এগিয়ে যেতে সাহস দেখাননি।
এই ঘটনার ঠিক চারদিন পর মুখ্যমন্ত্রীর ফোন আসে শ্রীজাতর কাছে। ফোনের ওপারে মমতার কন্ঠ শুনে অনেক ভাবনা ভিড় করেছিল শ্রীজাতর মাথায়। তবে কবি-কে এক্কেবারে চমকে দিয়ে মমতা বলেন, ‘আসলে, আমি স্যরি বলার জন্যে ফোনটা করেছি। ২১ তারিখ অনুষ্ঠান শেষ হবার পর বৌমা’র সঙ্গে আলাপ করব বললাম। কিন্তু তারপর তাড়াহুড়োয় আর খেয়াল করিনি, বেরিয়ে গেছি। রাতে বাড়ি ফিরে যখন মনে পড়ল, তখন এত খারাপ লেগেছে, কী বলব। পরদিন সকাল থেকেই আপনাকে ফোনে ধরার চেষ্টা করছি। সেদিন বৌমা’র সঙ্গে দেখা না-করে চলা যাওয়া আমার উচিত হয়নি’। এরপর দুর্বাদেবীর সঙ্গে ফোনে কথা বলবার ইচ্ছা প্রকাশ করেন দিদি। যদিও সেই সময় অফিসে ছিলেন শ্রীজাত ঘরনি। তা জেনে পুনরায় দুূর্বার কাছে এই ক্ষমাপ্রার্থনা পৌঁছে দেওয়ার অনুরোধ জানান মুখ্যমন্ত্রী।
শ্রীজাত এই অজানা ঘটনার কথা জানিয়ে লেখেন, মুখ্যমন্ত্রীর আড়ালে ‘ব্যক্তিগত পরিসরের একজন আটপৌরে অভিভাবক’ মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। নিজের প্রসঙ্গ টেনে কবি লিখেছেন, তিনিও কোনও অনুষ্ঠানে অনেকসময় কারুর সঙ্গে পরে দেখা করবার কথা বলে অনেকসময় ব্যস্ততার জেরে ভুলে যান কিন্তু কোনওদিন ব্যক্তিগত তাগিদ দেখিয়ে কারুর কাছে ক্ষমা চাননি। আর এটাই মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে আর সবার চেয়ে আলাদা করে।
শ্রীজাতর এই পোস্ট ঘিরে শোরগোল। অনেকেই এর মধ্যে রাজনীতির গন্ধ পাচ্ছেন। তাঁর রাজনৈতিক মতাদর্শ নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন। এমনটা যে ঘটবে তা বোধহয় আগেই জানা ছিল শ্রীজাতর। তাই তিনি পোস্টে লিখেছেন, ‘জানি, এর মধ্যে অনেকেই রাজনৈতিক সমীকরণ দেখবেন, কূটনৈতিক স্বার্থ দেখবেন, প্রশাসনিক পক্ষপাতিত্ব দেখবেন, এমনকী পারমানবিক চুক্তিও দেখে ফেলতে পারেন। তাঁদের কথা ভাবছি না।…. কোনও রাজনৈতিক পদই চিরস্থায়ী নয়। রাজনৈতিক সমীকরণও পরিবর্তনশীল। ভরসা একটাই, এসবের বাইরে এখনও একখানা উঠোন আছে, যেখানে মানুষের সঙ্গে মানুষের দেখা হয়, কথা চলে। সেই উঠোনে দাঁড়িয়েই আজ এই লেখাটা লিখলাম, এতদিন পর। এটুকুই আমার উপহার হতে পারে, তাঁর প্রতি। না। মাননীয় মুখ্যমন্ত্রীর জন্য লিখছি না। তাঁর সঙ্গে আমার একবারও দেখা হয়নি। যাঁকে দেখেছি, বরং তাঁকেই বলি, শুভ জন্মদিন মমতাদি! ভাল থাকবেন, আমাদের শুভেচ্ছা জানবেন। এর পরের কোনও অনুষ্ঠানে দূর্বা’র সঙ্গে আপনার আলাপ করিয়ে দেবো, এই কথাই রইল তাহলে!’
For all the latest entertainment News Click Here