‘আজকের রাতটা আমার সঙ্গে জেগে থাকো’, প্রথমবার রামপ্রসাদী গান গাইলেন অরিজিৎ

কবি, গীতিকার শ্রীজাত এবার পরিচালক। আর পরিচালক শ্রীজাত ছবিতে গান গাইছেন অরিজিৎ সিং, সে কথা তো গত বছরই জানিয়েছিলেন শ্রীজাত। কিন্তু মঙ্গলবার পরিচালক এমন কথা ফাঁস করলেন যাতে ঘোর কাটছে না অনুরাগীদের। শ্রীজাত ছবিতে প্রথমবার রামপ্রসাদের গান গাইতে শোনা যাবে অরিজিৎ-কে। সোমবার সারা রাত ধরে সেই গান রেকর্ড করলেন অরিজিৎ আর সেই গান রেকর্ডিং-এর গল্প কলমবন্দি করেছেন শ্রীজাত। জানিয়েছেন অরিজিৎ-এর প্রতি তাঁর অভিমানের কথাও!

‘মানবজমিন’-এ ‘মন রে কৃষিকাজ জানো না’- এই গান গাইতে শোনা যাবে অরিজিৎ-কে। পরিচালক জানালেন অনেকদিন ধরেই টালবাহানা করছিলেন অরিজিৎ,কিন্তু কিছুতেই গান রেকর্ড করে পাঠাচ্ছিলেন না। এমনকী গত একসপ্তাহ যাবত শ্রীজাতর ফোন পর্যন্ত ধরছিলেন না অরিজিৎ! এতেই ‘চাপ’-এ পড়ে যান শ্রীজাত। এর মাঝেই এল অরিজিৎ-এর মেসেজ। তিনি জানালেন, ‘ভয়ে তোমার ফোন ধরছি না। কালকেই গেয়ে পাঠাচ্ছি’। এরপর যা ঘটল তাতে শ্রীজাতর ‘বুড়ো বয়সের কান্না থামতে চাইছে না কিছুতেই’।

এই ছবির জন্যই প্রথমবার সাধক রামপ্রসাদ সেনের গান গাইলেন অরিজিৎ। আর গায়ক সোমবার রাতভর ধরে রেকর্ড করলেন ‘মন রে কৃষিকাজ জানো না’, ফোনের এপারে জেগে বসে রইলেন শ্রীজাত। শুনলেন, মুগ্ধ হলেন। শ্রীজাতর কথায়, ‘এ-গান শুনে মনে হবে ও বহু বছর ধরে কেবল রামপ্রসাদীই গেয়ে আসছে। এমনই সমর্পণ ওর গানে। এই যে অদেখা এক সমর্পণ, একে তো ছোঁয়া যাবে না কক্ষনও। আর সেই ব্যর্থতার বোধ নিয়েই বেঁচে থাকতে হবে আমাদের।’

ফেসবুকে দীর্ঘ পোস্টে কী লিখেছেন শ্রীজাত? দেখুন-

 ‘অভিমান হচ্ছিল না বললে মিথ্যে বলব। এই আজ হবে, এই কাল হবে করে গানটা আর হচ্ছিলই না। ফোন করলেই কান ধ’রে, জিভ কেটে বলছিল, ‘আর দু’দিন সময় দাও শ্রীজাতদা, হয়ে যাবে। তুমি চাপ নিও না’। এ-কথা সত্যি যে, ভালবাসা থাকলেই অভিমান আসে। তাছাড়া আমি যে বুঝি না, তা নয়। কিন্তু চাপ আমার একার নয়। কত সময় তো আমিও কথা দেবার পর লেখা দিয়ে উঠতে পারি না। নিজের মধ্যে একটা খারাপ লাগা কাজ করে তখন। কিন্তু ছবির ক্ষেত্রে এত কিছু এক তারে বাঁধা থাকে যে একটি এদিক ওদিক হলে সবটা নড়ে যেতে পারে।

গত হপ্তা থেকে ফোনেও আর পাই না। গানটা কি শেষমেশ তবে বাতিল করে দিতে হবে? জয় আর আমি এমনটা ভাবছি যখন, তখন মেসেজ এলো ‘ভয়ে তোমার ফোন ধরছি না। কালকেই গেয়ে পাঠাচ্ছি’। এমন সৎ স্বীকারোক্তি আজকের দিনে বড় একটা চোখে পড়ে না। আমি যদিও ধরেই নিয়েছি যে এও নেহাত স্তোকবাক্য, এই কাল সহজে আসবে না।

কিন্তু এবার এলো। গতকাল অনেক রাতে একটা ফোন, ‘গাইতে ঢুকছি। আছো তো?’ না-থেকে উপায় নেই। তাছাড়া, এ-গান আমার অনেকদিনের স্বপ্ন, সে আমায় এমনিই জাগিয়ে রাখে। আজ তো থাকতেই হবে। রাত যায়… জানলার বাইরে আকাশের অন্ধকার ফিকে হবো হবো… জানতে চাইলাম, ‘জাগবো, না ঘুমোবো?’ একটাই উত্তর এলো। ‘জাগো। আজকের রাতটা আমার সঙ্গে জেগে থাকো’। এরপর আর কথা চলে না। বহুকাল পর ভোর হওয়া দেখলাম, প্রথম ট্রেনের ঝমরঝম শুনলাম, পাখির কিচিরমিচিরে মিশে যেতে শুনলাম যানবাহনের কোলাহলে।

আর শুনলাম গান। সেই গান, যার জন্যে এত এত দিন অপেক্ষা করে থেকেছি। আমার ভোর হলো রামপ্রসাদে। ‘মন রে কৃষিকাজ জানো না / এমন মানবজমিন রইল পতিত / আবাদ করলে ফলতো সোনা’… অরিজিৎ গাইছে। গলা খুলে, চোখ বুজে, মন ভাসিয়ে দিয়ে। সেই ভোর থেকে এখন পর্যন্ত শুনে চলেছি। কাজে দেরি হয়ে যাচ্ছে আমার। আর, এই বুড়ো বয়সের কান্না থামতে চাইছে না কিছুতেই। কী আছে এই গানে, আর কী যে আছে অরিজিতের গাওয়ায়, জানি না। কিন্তু ভেতরের সবটুকু নিংড়ে যে গাইতে পারে, সে শ্রোতার ভেতরটুকুও নিংড়ে নেয় অনায়াসে।

অরিজিৎ এর আগে কোনওদিন রামপ্রসাদী গায়নি। কিন্তু কথা সেটা নয়। কথা হলো এই যে, এ-গান শুনে মনে হবে ও বহু বছর ধরে কেবল রামপ্রসাদীই গেয়ে আসছে। এমনই সমর্পণ ওর গানে। এই যে অদেখা এক সমর্পণ, একে তো ছোঁয়া যাবে না কক্ষনও। আর সেই ব্যর্থতার বোধ নিয়েই বেঁচে থাকতে হবে আমাদের। রক্তের মধ্যে আবহমান রামপ্রসাদকে নিয়েই থাকতে হবে, মানবজমিন আঁকড়ে। অরিজিৎকে ছুটে গিয়ে এখুনি যে জড়িয়ে ধরব, আদর করে দেবো, সে-উপায় নেই। কিন্তু মনে মনে ওকে জড়িয়ে ধরেই কাটবে এখন আমার।

ছবি কতদূর কী হয়েছে এখনও জানি না, কিন্তু কাল সারারাত জেগে গাওয়া এই গান থেকে যাবে। এর মৃত্যু নেই। কারণ মৃত্যু নেই রামপ্রসাদের। আরও হাজার বছরেও মৃত্যু নেই। সেই যে, গৌতম বসু লিখে গেছেন, ‘এই জল প্রকৃত শ্মশানবন্ধু, এই জল রামপ্রসাদ সেন’… আমরা সেই জলের ধারের বাসিন্দা। একা তো পারি না কিছু, তাই রামপ্রসাদকে সঙ্গে নেওয়া…’ (অপরিবর্তিত)।

 অরিজিৎ-এর এই গান শ্রোতারা কবে শোনবার সুযোগ পাবে? এখন সেটাই দেখার। আপতত অধীর আগ্রহে অপেক্ষার পালা। 

For all the latest entertainment News Click Here 

Read original article here

Denial of responsibility! TechAI is an automatic aggregator around the global media. All the content are available free on Internet. We have just arranged it in one platform for educational purpose only. In each content, the hyperlink to the primary source is specified. All trademarks belong to their rightful owners, all materials to their authors. If you are the owner of the content and do not want us to publish your materials on our website, please contact us by email – [email protected]. The content will be deleted within 24 hours.