‘আগে সবাই ছবি তুলতে আসত, এখন আমাকে দেখলে হাসে’, বলছেন রূপাঞ্জন থুড়ি রাজা
প্রশ্ন: দীর্ঘ দু’বছরের পথ চলা শেষ। কতটা মনে পড়ছে ‘খড়কুটো’কে?
রাজা: খুব মনে পড়ছে সবার কথা। একটা উদাহরণ দিলেই হয়তো বুঝতে পারবেন। শ্যুটের শেষ দিন আমি, অম্বরীশদা (ভট্টাচার্য) আর কৌশিক (রায়) একসঙ্গে ফিশ ফ্রাই খেয়েছিলাম। খাবারের বিলটা আমার ওয়ালেটে রয়ে গিয়েছিল। সেটা এখনও সেখানেই রয়েছে। ফেলে দিতে পারিনি। এত বছর ধরে ইন্ডাস্ট্রিতে অনেক কাজ করেছি, কিন্তু ‘খড়কুটো’ সব কিছুর থেকে একদম আলাদা। এখানে কোনও হিংসে নেই, রেষারেষি নেই। সবাই সবাইকে ভালো অভিনয় করতে সাহায্য করেছে। আমি আগে কখনও পর্দায় কমেডি করিনি। রূপাঞ্জনের চরিত্র করার সময় খুব ভয়ে ভয়ে ছিলাম। অম্বরীশদা আমাকে অনেক কিছু শিখিয়েছে। এই ধারাবাহিক করতে গিয়ে একটা পরিবার পেয়েছি।
প্রশ্ন: কমেডি করতে ভয় পান, অথচ রূপাঞ্জন হয়ে দিব্যি দু’বছর কাটিয়ে দিলেন!
রাজা: (হেসে উঠে) তা পেরেছি বটে! রূপাঞ্জন আমাকে অনেক কিছু দিয়েছে।
প্রশ্ন: যেমন?
রাজা: ‘খড়কুটো’র আগে তথাকথিত নায়কের চরিত্রে অভিনয় করেছি। মানুষ তখন আমার সঙ্গে নিজস্বী তুলতে চাইতেন। বেশ অন্য রকম একটা ব্যাপার ছিল। কিন্তু রূপাঞ্জনের চরিত্র করার পর যেন আমি পাশের বাড়ির ছেলে। সবাই এখন আমাকে দেখে হাসে। আমায় দেখলে বোধ হয় পর্দার কান্ডকারখানাগুলোর কথা মনে পড়ে যায়!
প্রশ্ন: ‘খড়কুটো’র পরের ধাপ কী? আগামী দিনগুলি নিয়ে পরিকল্পনা করছেন?
রাজা: আপাতত আমার ছেলেকে সময় দেব। এই দু’বছর টানা শ্যুট করতে হয়েছে। করোনার ভয়ে ওর কাছে যেতে পারিনি। এখন ওর সঙ্গে থাকব। ঘুরতে যাব। আর আমাদের ইউটিউব চ্যানেলটা নিয়ে আরও মন দিয়ে কাজ করব। কিন্তু এর বেশি আর কিছুই পরিকল্পনা করিনি। কারণ আমি যা ভাবি, ঠিক তার উল্টো হয়। এ রকমই একটা ঘটনা বলি তবে?
প্রশ্ন: বলুন না…
রাজা: ‘খড়কুটো’য় আমার চরিত্রটির জন্য বরাদ্দ ছিল তিন দিন। রূপাঞ্জন বাইরে চাকরি করবে। চিনি ওকে বিয়ে করে সেখানে চলে যাবে। ব্যাস, এখানেই শেষ। কিন্তু তা আর হল কোথায়! ধারাবাহিকের শেষ পর্ব পর্যন্ত থেকে গেলাম।
প্রশ্ন: ছোট পর্দায় এত জনপ্রিয়তা। বড় পর্দা এবং ওটিটি থেকেও কাজের ডাক আসছে নিশ্চয়ই…
রাজা: দেখুন, অভিনয়টাই আমার কাছে শেষ কথা। যে কোনও মাধ্যমে কাজ করতে রাজি। কখনও আমাকে টেলিভিশনে দেখা যাবে, কখনও হয়তো মোবাইল স্ক্রিনে। এই তো ফারাক! দর্শকের কাছে আমার কাজ পৌঁছোলেই হল। ওটিটি-তে বেশ কিছুকাজের সুযোগ এসেছিল। কিন্তু চরিত্রগুলি ঠিক মনের মতো ছিল না।
প্রশ্ন: আর বড়পর্দা? মুখ্য চরিত্রে অভিনয় করেও সেখান থেকে সরে গেলেন কেন?
রাজা: এটার অনেকগুলি কারণ আছে। তার মধ্যে একটি হল, সময়ের অভাব। আমি টানা টেলিভিশনে কাজ করে গিয়েছে। একটুও বিরতি পাইনি। সেই ব্যস্ততার জন্য তখন ছবি করে উঠতে পারিনি। অনেক সময় আবার পছন্দসই কাজের প্রস্তাব আসেনি। এ ছাড়াও প্রযোজনা সংস্থা বাছাইয়ের ক্ষেত্রেও মনোযোগী হয়েছি।
প্রশ্ন: বলা হয়, বিতর্কই জনপ্রিয়তা এনে দেয়। আপনি তো তবে স্রোতের বিপরীতে…
রাজা: (একটু ভেবে) আমার মনে হয় না কেউ ইচ্ছাকৃত বিতর্ক ডেকে আনে। হয়তো জীবনে কিছু একটা ঘটে যায় যা প্রকাশ্যে চলে এসে চর্চার বিষয়বস্তু হয়ে ওঠে। তা ছাড়াও আমার আর মধুবনীর মধ্যে খুব সুন্দর একটা বোঝাপড়া আছে। জনপ্রিয়তার জন্য আমাদের বিতর্কের প্রয়োজন নেই। মানুষ এ ভাবেই আমাদের দেখতে পছন্দ করেন।
প্রশ্ন: ‘ভালোবাসা ডট কম’-এর ওম-তোড়া থেকে বাস্তবে স্বামী-স্ত্রী! সম্পর্কের ভিত আগের মতোই পোক্ত? কিছুই বদলায়নি?
রাজা: আমি মনে করি যে কোনও সম্পর্কে বিশ্বাসটাই শেষ কথা। আমার আর মধুবনীর ক্ষেত্রেও তাই। ১২ বছরে আমরা কেউ একে অপরের ফোন ঘেঁটে দেখার প্রয়োজন মনে করিনি। ও আমাকে প্রচণ্ড বিশ্বাস করে। আমিও তাই।
প্রশ্ন: ইন্ডাস্ট্রিতেও তো এক দশক কাটিয়ে ফেললেন। এতগুলো বছরে রাজা কতটা পাল্টেছেন? আদৌ পাল্টেছেন কি?
রাজা: (মৃদু হেসে) কী ভাবে পাল্টাই বলুন তো! সেই তো দুটো হাত, দুটো পা। তবে এক সময় পোর্টফোলিও নিয়ে যখন ঘুরে বেড়াতাম, স্টুডিয়োয় ঢুকতে দেওয়া হত না। এখন গাড়ি নিয়ে গেলে গেট খুলে দেওয়া হয়। বদল বলতে ওইটুকুই। আমি একটুও পাল্টাইনি।
For all the latest entertainment News Click Here