অ্যাকশনে ভরপুর! গ্যাংস্টার ‘চেঙ্গিজ’-এর গল্প বলতে কতটা সফল জিৎ?
ঝাঁ চকচকে দৃশ্য, অ্যাকশনের ভরপুর, একটা মশালাদার বাণিজ্যিক ছবি। জয়দেব সিং-এর গ্যাংস্টার হয়ে ওঠা ও তাঁর অপরাধমূলক কার্যকলাপের গল্প বলল জিৎ-এর ‘চেঙ্গিজ’। ‘যে কিনা অচেনা, অজানা দূর্ভেদ্য-কে জয় করে, যার না আছে কোনও পরিধি, সেই হল চেঙ্গিজ’। জিৎ-এর ডায়ালগ ‘চেঙ্গিজ’এর দিন হয়না, হয় যুগ। ছবিতে গ্যাংস্টার, ‘মাফিয়া ডন’ ‘চেঙ্গিজ’ হিসাবে তুলে ধরা হয়েছে জিৎ-কে। আর ‘বস’-এর হাত ধরেই প্রথমবার বাংলা থেকে মুক্তি পেল এই প্যান ইন্ডিয়া ছবি। সে না হয় হল, তবে ইতিহাস তৈরি করার মত কতটা মশালা আছে ’চেঙ্গিজ’ এর কাছে?
চোখ রাখা যাক ‘চেঙ্গিজ’ গল্পে….
শুরুতেই ফুটবল ম্যাচ, যদিও খেলার পিছনে রয়েছে ‘ম্যাচ ফিক্সিং’-এর গল্প। আর সেখানেই ‘চেঙ্গিজ’-জিতের ধামাকাদার এন্ট্রি। খুন গল, রক্তে ভিজল মাঠ, ‘চেঙ্গিজ’ হত হল রাঙা। আর এরপরই এক তরুণী সাংবাদিককে দেওয়া পুলিশ অফিসার সমীর সিং-এর বয়ানে ফ্ল্য়াশব্যাকে উঠে এল জয়দেব সিং-এর ‘চেঙ্গিজ’ হয়ে ওঠার গল্প। ছবিতে চোখ রাখলেই বোঝা যায় ৭০ থেকে ৯০ সালের মাঝামাঝি সময়ের গল্প। ছবির গল্পে সেসময় শহরে রাজত্ব করত তিন ড্রাগ মাফিয়া। তাঁদের মধ্যেই চলে সিংহাসন দখলের লড়াই। তাঁদের হত ধরে আন্ডার ওয়ার্ল্ডে এলেও সিংহাসনের বসলেন ‘চেঙ্গিজ’ জিৎ। আর তারপর তাঁর হাত ধরেই এগিয়ে চলে গল্প, চলল প্রতিশোধের রক্তক্ষয়ী লড়াই।
বিশ্লেষণ…
দেখলেই বোঝা যায় ছবির মূল শ্যুটিং কলকাতাতেই, রয়েছে কলকাতার রাস্তাঘাট, খিদিরপুর, পার্ক সার্কাস সহ একাধিক এলাকার নাম, উঠে এসেছে হলুদ ট্যাক্সি, রেসকোর্স, ডক এরিয়া থেকে মোহনবাগানের মাঠ, লালবাজার সহ আরও কত কী! যদিও গল্পের প্রেক্ষাপট ও ডিটেলিংয়ে বেশকিছু গোলযোগ ও রিসার্চের অভাব রয়েছে। দক্ষিণেশ্বরের ব্রিজ, মোহনবাগান মাঠের ফ্লাডলাইট, এসব যে সময়ের গল্প, সেসময় ছিল বলে তো মনে পড়ে না। শুধু তাই নয় চিত্রনাট্য়ে ডিটেলিংয়ের বড়ই অভাব। ছবির গল্পে গ্যাংস্টার ‘চেঙ্গিজ’ মোটিভেশন স্পষ্ট নয়। সে যে লক্ষ্যে এসেছিল, সেটা ছবির শুরুর দিকেই পূরণ হয়ে যায়। তারপরেও ‘চেঙ্গিজ’ কেন আন্ডার ওয়ার্ল্ডে থেকে গেল? সেবিষয়টি চিত্রনাট্যে স্পষ্ট নেই। এখানে পুরো ছবিটিই ‘চেঙ্গিজ’ কেন্দ্রিক। এখানে একটা প্রেমের গল্পও রয়েছে, যেখানে জিৎ-এর নায়িকা সুস্মিতা চট্টোপাধ্যায়। তবে তাঁর সঙ্গে জিতের রোম্যান্সের দৃশ্য ছবিতে খুব বেশি নেই। সবথেকে বড় কথা বাণিজ্যিক ও মাশাদার ছবির মূল বিষয়-ই হল ‘ডায়ালগ’। দু’একটা ছাড়া এখানে সেভাবে কোনও চটকদার ডায়ালগ নেই। ছবির দ্বিতীয় ভাগ বড় বেশি লম্ব, সেটা সম্পদনার কারিকুরিতে আরেকটু ছোট হয়ত করাই যেত।
তবে সবই কি খারাপ?
নাহ, সেটা বললে ভুল হবে এবং অন্যায়ও হবে। ছবির অ্যাকশন দৃশ্যে বরবরের মতোই নজরকাড়া জিৎ। সুপুরুষ চেহারায় গোটা পর্দা জুড়ে তিনিই দর্শকদের মাতিয়ে রেখেছেন। নিজের ডায়ালগ ডেলিভারিতে জিৎ দারুণ। তাঁর অভিনয়ও প্রশংসনীয় বটে। তাঁর সাজ-পোশাক, দাড়ি, গোঁপ, চুলের স্টাইল, কস্টিউম সবই বেশ ভালো। রগড়া গানে ডান্স পারফরম্যান্সেও জিৎ বরবরের মতোই দারুণ। জিতের নায়িকা সুস্মিতা চট্টোপাধ্যায়ের এখানে খুব বেশি কিছুই করার ছিল না, তবে পর্দায় জিতের পাশে তাঁকে দেখতে মন্দ লাগল না। পুলিশ অফিসার সমীর সিং-এর চরিত্রে রোহিত রায়, অন্য়ান্য গুরুত্বপূর্ণ চরিত্রে শতাফ ফিগার, বিশ্বরূপ বিশ্বাস সহ বাকি অভিনেতারাও নিজ নিজ চরিত্রে বেশ ভালো অভিনয় করেছেন।
কিছু ভুল থাকলেও সেগুলো এরিয়ে গিয়ে এই ছবি বক্স অফিসে বাজি রাখার দাবি রাখেন বৈকি। সবথেকে বড় কথা এর আগে এধরনের আন্ডারওয়ার্ল্ডের গল্প নিয়ে কোনও অ্যাকশন নির্ভর মশালাদার ছবি বাংলায় সেভাবে হয়নি। দক্ষিণের ছবিতে যেভাবে অ্যাকশন নির্ভর গল্প, গ্লোরিফাই করা গ্যাংস্টারদের গল্প তুলে ধরা হয়, যেমন সাম্প্রতিক উদাহরণ হিসাবে পুষ্পা এবং KGF-রয়েছে। তবে ‘চেঙ্গিজ’কে ওই ছবিগুলির সঙ্গে তুলনা করলে অন্যায় হয়। কারণটা অবশ্যই ছবির বাজেট। দক্ষিণের ছবির যে বাজেট থাকে, সে তুলনায় এই ছবির বাজেট ১০ভাগের একভাগ। তবুও মাত্র ১০ কোটির বাজেটেই কামাল দেখিয়েছেন জিৎ। বক্স অফিসে সলমন খানের ‘কিসি কা ভাই কিসি কি জান’-র পাশে দাঁড়িয়ে বাংলার পাশাপাশি হিন্দিতেও মুক্তি পেয়েছে এই ছবি। রাজনীতি বা অন্য কোনও প্রভাব না খাটিয়েও, একজন বাঙালি তারকা, প্রযোজক হিসাবে সারাদেশে প্রায় ১১০০ টা হলে ‘চেঙ্গিজ’কে রিলিজ করিয়েছেন। এই ছবি ব্যবসায় সফল হবে কিনা তা ভবিষ্যৎ-ই বলবে। তবে ‘চেঙ্গিজ’-এর হাত ধরে দক্ষিণী ছবির পথে হেঁটে প্রথমবার বাংলা ছবির ইন্ডাস্ট্রিতেও নতুন কিছু করার সাহস দেখিয়েছেন জিৎ। কিছুটা রিস্ক নিয়েছেন বললে ভুল হয় না…
For all the latest entertainment News Click Here