অন্য শিল্পীদের বাঁচাতে মঞ্চে ঘণ্টার পর ঘণ্টা একা পারফর্ম করে যেত মিঠু: তোচন ঘোষ
বোধহয় বছর চল্লিশ তো হবেই। এত দিনই চিনি মিঠুকে। আজকের কথা! এখন মনেও পড়ে না, ওর সঙ্গে প্রথম বার কীভাবে আলাপ হয়েছিল। এটুকু মনে পড়ে, আলাপের পর থেকেই মনে হত, ও যেন কত দিনের বন্ধু!
কখনও ওকে মুখ গোমড়া করে থাকতে দেখিনি। সব সময়েই হাসিখুশি দেখেছি। ঝামেলার মধ্যে থাকলেও অভিষেক চট্টোপাধ্যায়কে হাসি মুছে ফেলতে দেখেননি কেউ।
সিনেমার অভিনেতা অভিষেকের কথা অনেকেই বলেছেন। কিন্তু মঞ্চের শিল্পী অভিষেকের কথা হয়তো সেভাবে উঠে আসেনি কখনও। তাই একটা গল্প বলা দরকার।
বহু বহু বছর আগের কথা। তখন প্রসেনজিৎ চট্টোপাধ্যায়, ঋতুপর্ণা সেনগুপ্ত, মিঠু— ওঁদের প্রজন্মটা একেবারে সাফল্যের মধ্য গগনে। সেই সময়ে বনগাঁয় একটি অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়েছিল। যত দূর মনে পড়ছে, অনুষ্ঠানের প্রধান তারকা ছিলেন তিন জন। মিঠু, ঋতুপর্ণা আর অনুরাধা পড়ওয়াল।
অনুরাধাজি বাইরে থেকে এসেছেন। গান গেয়ে চলে যাবেন। নির্দিষ্ট সময়ে বনগাঁয় পৌঁছে গিয়েছেন তিনি। পৌঁছে গিয়েছে মিঠুও। কিন্তু কোনও একটি কারণে ঋতুপর্ণা আটকে গিয়েছে। বনগাঁয় অনুরাধাজির গান শেষ। তখনও ঋতুপর্ণা কলকাতাতেই এসে পৌঁছোয়নি। আমি দাঁড়িয়ে আছি দমদম বিমানবন্দরে। ঋতুপর্ণা এলে, ওঁকে নিয়ে বনগাঁ যাব। কিন্তু নামতে বিমান দেরি করছে।
আজও মনে আছে, সেই দিনটার কথা। ফোনে মিঠুকে বললাম, ‘অনেক দেরি হবে। তুই সামলাতে পারবি?’
ও বলেছিল, ‘চিন্তা কোরো না, তুমি ওকে নিয়ে এসো। আমি দর্শকদের নিরাশ হতে দেব না।’
ঋতুপর্ণা দমদমে এসে পৌঁছোয়। আমি ওকে নিয়ে গাড়ি করে বনগাঁর উদ্দেশে রওনা দিই। কত ঘণ্টা লেগেছিল, মনে নেই। কিন্তু তত ক্ষণেই মঞ্চ মাতিয়ে রেখেছিল মিঠু। উদ্যোক্তাদের কেউ কোনও অভিযোগ করতে পারেননি।
এমনই ছিল ও। অন্যদের জন্য এভাবেই ঘণ্টার পর ঘণ্টা খেটে যেতে পারত। কাউকে বুঝতে দিত না। হাসিও মিলিয়ে যেত না।
অভিষেকের সঙ্গে এক বার টানা মাস খানেক কাটিয়েছিলাম হলদিয়ায়। সেখানে ‘আমি সেই মেয়ে’ ছবির শ্যুটিং চলছিল। বড় বড় তারকাদের নিয়ে সেই ছবির শ্যুটিং হয়েছিল। ছবির প্রযোজকদের মধ্যে একজন ছিলাম আমি। পরিচালক ছিলেন প্রসেনজিৎ চট্টোপাধ্যায়। অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ চরিত্রে অভিনয় করেছিল মিঠু। সেই সময়ে ওর সঙ্গে বহু দিন কাটিয়েছিলাম। চিনেছিলাম, ও কেমন মানুষ।
সহকর্মী থেকে অনেক বেশি করে মিঠু হয়ে গিয়েছিল, আমার বাড়ির মানুষ, পরিবারের মানুষ। আমার বাড়ির কোনও অনুষ্ঠান ওকে ছাড়া হত না।
আজ সে সব ইতিহাস। বাড়ির সব ভালো মুহূর্তগুলি থেকে একটি মানুষ পাকাপাকি চলে গেল। একদিন যে মানুষটা অন্য শিল্পীদের বাঁচাতে মঞ্চে একা ঘণ্টার পর ঘণ্টা পারফর্ম করে যেত, জীবনের মঞ্চে আর তাকে কেউ কখনও দেখতে পাবেন না।
For all the latest entertainment News Click Here